রবিবার, অক্টোবর ২৬

৪৮ নওগাঁ-৩ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য তিন প্রার্থী নিয়ে সরব রাজনৈতিক অঙ্গন

|| বিশেষ প্রতিনিধি (নওগাঁ) ||

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৪৮ নওগাঁ-৩ (বদলগাছী–মহাদেবপুর) আসনে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে দলে দলে চলছে আলোচনা, গুঞ্জন এবং মাঠ পর্যায়ে তৎপরতা। স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ আসনে বর্তমানে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন তিনজন নেতা— পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকি (জনি), রাবিউল আলম বুলেট, ও ফজলে হুদা বাবুল।

বদলগাছী ও মহাদেবপুরের রাজনীতিতে পরিচিত মুখ পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকি (জনি)। তিনি প্রয়াত সাবেক ডেপুটি স্পিকার ও বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা আখতার হামিদ সিদ্দিকী নান্নুর পুত্র।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তিনি নওগাঁ-৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। যদিও নির্বাচনী ফলাফল তার পক্ষে যায়নি, তবুও ভোটারদের মাঝে তিনি তরুণ, শিক্ষিত ও উদ্যমী নেতা হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

জনি বর্তমানে দলীয় কর্মীদের সংগঠিত রাখতে ও তরুণ ভোটারদের সাথে যোগাযোগ বাড়াতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি এখন “নব নেতৃত্বের প্রতীক” হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছেন।

দলের এক নেতা বলেন, “জনি সাহেবের পিতার মতোই তিনি মানুষের সাথে মিশে কাজ করছেন, এলাকায় বিএনপির উপস্থিতি আবার দৃঢ় করছেন।”

বর্তমানে মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রাবিউল আলম বুলেট। সংগঠন গঠনে তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও স্থানীয় পর্যায়ে সক্রিয় ভূমিকা তাঁকে মনোনয়ন দৌড়ে অন্যতম শক্তিশালী প্রার্থী করে তুলেছে।

তাঁর অনুসারীদের মতে, বুলেট সাহেব মাঠের রাজনীতিতে দক্ষ, নেতা-কর্মীদের একত্রে রাখতে পারেন, যা নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে একটি বড় শক্তি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “বুলেটের শক্তি হলো তৃণমূল নেটওয়ার্ক, যা বদলগাছী–মহাদেবপুর উভয় এলাকাতেই বিস্তৃত।”

বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল দীর্ঘদিন ধরে এলাকার রাজনীতিতে সক্রিয়। তিনি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দলের কর্মসূচি পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছেন।

তাঁর কর্মীবান্ধব চরিত্র ও সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা তাঁকে দলের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হিসেবে পরিচিত করেছে। বাবুলের সমর্থকরা বলছেন, “তিনি এলাকার মানুষের পাশে ছিলেন সব সময়। এখন সময় এসেছে সংসদে বদলগাছীর কণ্ঠস্বর হিসেবে তাঁকে দেখার।”

স্থানীয় রাজনীতিতে উত্তেজনা ও জল্পনা-কল্পনা

বদলগাছী–মহাদেবপুরের এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু— “কার হাতে যাবে বিএনপির মনোনয়ন টিকিট?”

তিনজনই মাঠে সক্রিয়, নিয়মিত কর্মীসভা, উঠান বৈঠক ও জনসংযোগ প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, “আমরা এমন একজন নেতাকে চাই, যিনি জনগণের পাশে থাকবেন, উন্নয়ন আনবেন।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবারের নির্বাচন বিএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার মঞ্চ হতে পারে। যদি দলটি ঐক্যবদ্ধভাবে জনমুখী প্রার্থী বেছে নেয়, তবে নওগাঁ-৩ আসনে ফলাফল চমকপ্রদ হতে পারে।

কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় সবাই

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড মাঠপর্যায়ের রিপোর্ট সংগ্রহ করছে। প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও অতীত ভূমিকার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

মনোনয়ন চূড়ান্ত না হলেও বদলগাছী ও মহাদেবপুর এখন রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে। প্রতিটি গ্রামে চলছে ভোট-রাজনীতির হিসাব-নিকাশ, আলোচনা আর প্রত্যাশার তরঙ্গ।

পরিশেষে বলা যায়, নওগাঁ-৩ আসনের রাজনীতির মাঠ এখন উত্তপ্ত। বিএনপির এই তিন প্রার্থীর প্রচারণা, জনসংযোগ, ও কেন্দ্রের দৃষ্টি—সব মিলিয়ে বদলগাছী–মহাদেবপুর হয়ে উঠেছে আগামী নির্বাচনের এক “রাজনৈতিক হটস্পট”।

দলীয় টিকিট কার হাতে যাবে—এখন সেটিই সবার মুখে মুখে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *