শনিবার, আগস্ট ২৩

স্বাস্থ্য সহকারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা পরিবর্তনসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দেওয়া সময়ের দাবি

মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম হলো চিকিৎসা। ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে নাগরিকের
স্বাস্থ্যসেবা, টিকাদান, জনগণকে স্বাস্থ্য সচেতন করা, রোগ প্রতিরোধের উপায় শেখানো এবং পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব সম্পর্কে প্রচার ইত্যাদি কাজ স্বাস্থ্য সহকারীরাই করে থাকেন।কাজেই যারা এই স্বাস্থ্য সেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা দিয়ে থাকেন তাদেরও কিছু মৌলিক দাবি থাকাটাই যুক্তিসঙ্গত। তাই তারা দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছেন তাদের দাবির পক্ষে এবং সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে।

দীর্ঘদিন থেকে স্বাস্থ্য সহকারীগণ নিম্নোক্ত দায়িত্বগুলো সুনামের সাথে পালন করে আসছে:

তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন মাঠ পর্যায়ে কর্মরত স্বাস্থ্য সহকারীগণের নিয়োগের যোগ্যতা স্নাতক পাশ করে তাদের বেতন স্কেল ১৩ তম গ্রেড প্রদান ও ইনসার্ভিস ডিপ্লোমা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ১১তম গ্রেডে উন্নীতকরণসহ টেকনিক্যাল পদমর্যদা প্রদান এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে পরবর্তী উচ্চতর বেতন গ্রেড প্রদান করা এখন সময়ে দাবি।

স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন মাঠ পর্যায়ে কর্মরত স্বাস্থ্য সহকারী। সমগ্র বাংলাদেশে ১,২০,০০০ (এক লক্ষ বিশ হাজার) অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী (ইপিআই) এর মাধ্যমে শিশু ও মহিলাদের টিকা প্রদান কাজে নিয়োজিত রয়েছে। ১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল শুরু হওয়া ইপিআই কর্মসূচীর মাধ্যমে তারা তৃণমূল পর্যায়ে সকল নাগরিককে ১০টি মারাত্মক সংক্রামক রোগ- শিশুদের যক্ষা, পোলিও, ডিফথেরিয়া, হুপিং কাশি, ধনুষ্টংকার, হেপাটাইটিস-বি, হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি জনিত রোগ, হাম, নিউমোককাল জনিত নিউমোনিয়া, রুবেলা এবং ১৫-৪৯ বছর বয়সী মহিলাদের ৫ (পাঁচ) ডোজ টিটি/টিডি টিকা প্রদান করে আসছে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জন্ম, মৃত্যু, নবজাতক শিশু, গর্ভবতি মহিলা এবং কিশোর-কিশোরিদের রেজিস্ট্রেশন করে থাকেন এবং মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান করে থাকেন। এছাড়াও ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন প্রোগ্রামে ভিটামিন এ খাওয়ানো, কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো, যক্ষা রোগি অনুসন্ধান, ডটস পদ্ধতির মাধ্যমে যক্ষা রোগীদের ঔষধ খাওয়ানো, উঠান বৈঠক, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান ও কমিউনিটি ক্লিনিকে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান করে।

প্যান্ডামিক সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কোভিড-১৯-এর টিকা ও মহিলাদের জরায়মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধের টিকা তারাই প্রদান করছে। কোভিড-১৯ মহামারীর মত রাষ্ট্রীয় সকল দুর্যোগে স্বাস্থ্য সহকারীগণ সর্বদাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকেন। স্বাস্থ্য সহকারীগণের উক্ত কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ অর্জন করেছে বিভিন্ন ধরনের পুরস্কার।

তাদের সমপদমর্যাদায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত প্রাথমিক শিক্ষক, ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষক, ভেটেনারি টেকনেশিয়ান, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, সহকারী তহসিলদারগণসহ আরও অনেক দপ্তরের কর্মচারীরা সরকারের নির্বাহী আদেশের কর্মরত গ্রেড থেকে উচ্চ গ্রেডে আসিন হয়েছে, অথচ তারা স্বাস্থ্য সহকারীগণ মাঠ পর্যায়ে টেকনিক্যাল কাজ করেও টেকনিল্যাল পদ মর্যাদা পাচ্ছেন না। যা স্পষ্ট বৈষম্য এবং নতুন বাংলাদেশে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

তারা প্রায় বিগত ১০ বছর ধরে এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আবেদন-নিবেদন করার পরেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অজ্ঞাত কারণে নিষ্ক্রীয় ভূমিকা পালন করে আসছে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, জেলা সিভিল সার্জনের অধীনে নিয়োগকৃত নতুন স্বাস্থ্য সহকারীদের অধিকাংশই বিভিন্ন নামকরা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পাশ করা। যদিও নিয়োগে শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিলো এইচএসসি বা সমমান। তারা যদি এর চাইতে ভালো কোনো সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন; তাহলে তাদের মধ্য থেকে একটা বিরাট অংশ অন্যত্র চলে যাবেন। যার ফলে সেই পদগুলো ফাঁকা থাকবে এবং জনগণের স্বাস্থ্য সেবা বিঘ্নিত হবে। দেশে যেহেতু শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে তাই সেই দিকটি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বেতন স্কেল পরিবর্তন করা যুক্তিসঙ্গত।

তাদের ছয় দফা দাবিসমূহ:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *