
|| আহম্মেদ সায়েম | নিজস্ব প্রতিবেদক ||
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উলফাতুনননেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সাথী আক্তার আলো (১৩) শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হার মানলেন। আত্মহত্যার চেষ্টার আট দিন পর মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর)-এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আলোর দুলাভাই ওয়াসিম মিয়া সংবাদমাধ্যমকে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ২১ জুলাই (সোমবার) দুপুরে বিদ্যালয়ের ছয়তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হন সাথী। প্রথমে তাকে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার নিটোরে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
সাথী আক্তার আলো বকশীগঞ্জ পৌরসভার গোয়ালগাঁও এলাকার বাসিন্দা বাবু মিয়ার কন্যা। সহপাঠীদের ভাষ্যমতে, তিনি একজন মেধাবী ও চঞ্চল ছাত্রী ছিলেন। খেলাধুলায়ও ছিলেন পারদর্শী, বিশেষ করে কাবাডি খেলায় অংশগ্রহণ করে ময়মনসিংহ পর্যন্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন।
পরিবার ও সহপাঠীরা অভিযোগ করেছেন, বিদ্যালয়ের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ দীর্ঘদিন ধরে সাথীকে মানসিকভাবে চাপ দিয়ে আসছিলেন। তিন মাস আগে একটি কুইজ প্রতিযোগিতা শেষে সাথী ও তার কয়েকজন বান্ধবী ‘মসজিদে নূর’ ঘুরতে গেলে প্রধান শিক্ষক তাদের ভর্ৎসনা করেন। এরপর থেকে তিনি সাথীকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি এবং অভিভাবকসহ স্কুলে হাজির হওয়ার জন্য বারবার চাপ দিতে থাকেন।
ঘটনার দিন ক্লাসের মধ্যে সবার সামনে তাকে অপমান করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। মানসিক চাপে প্রথমে নিজের হাত কাটে সাথী, পরে ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
এই ঘটনায় সাথীর চাচা মুরাদ হোসেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এবং জনমতের চাপে ২৩ জুলাই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশে নূর মোহাম্মদকে অপসারণ করা হয় এবং বিপ্লব কিশোর চট্টোপাধ্যায়কে নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
আলোর মৃত্যুতে তার পরিবার, বিদ্যালয় ও গোয়ালগাঁও এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।