|| নিজস্ব প্রতিবেদক ||
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানী ঢাকায় নারিন্দা সুফি সেন্টারে মাসিক মাহফিলে জিকরুল্লাহ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই মাগরিবের নামাজের পরে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত এবং নাতে মোস্তফা দ. পাঠ দিয়ে এই মাহফিল শুরু হয়।
সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক ঐশী বাংলার সম্পাদক ও প্রকাশক বিশিষ্ট মুফাসসির, হযরত এ আর এম মাওলানা মহিউদ্দীন খান ফারুকী। তিনি তার আলোচনায় তাসাউফ এর প্রয়োজনীয়তা, জিকির মুরাকাবার গুরুত্ব এবং ইসলামের সোনালী যুগেও সুফিবাদের চর্চা অনুশীলন কীভাবে প্রচলিত ছিলো এসব বিষয় দলিল প্রমাণসহ উপস্থাপন করেন।
জিকিরের তা’লীম প্রদান করেন সুফি সেন্টারের পরিচালক পীর খাজা ওসমান ফারুকী (খাজা’জী)। জিকিরের আগে তিনি আলোচনায় বলেন, জীবনের পথচলা সহজ নয়। পদে পদে আমাদেরকে বিপদ ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়, হতাশা, ব্যর্থতা, নেশা, উদ্বিগ্নতা, বিষন্নতা, মনোকষ্ট, মনোপীড়া, সংশয়, আশাহীনতা ও নিদারুণ উৎপীড়ন আমাদের জীবনের প্রায় নিত্যসঙ্গী। এসব সত্ত্বেও কেউ কেউ সম্মুখপানে সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারেন, কেন তারা পারেন সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার আহবান জানান।
আমাদের কিছু বিশ্বাস শক্তি যোগায়, অধিকাংশই শক্তিকে রোধ করে! কিছু সংস্কার অস্তিত্বের কথা বলে, অধিকাংশই কুপমুণ্ডুক করে তোলে। কিছু ধারণা পথনির্দেশ হয়ে কাজ করে, অধিকাংশই বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। কিছু বিষয়ে আমাদের জ্ঞান পর্যাপ্ত, অধিকাংশ বিষয়েই আমরা জানি না। জানা ও না জানার মধ্যে উপযুক্ত সেতুবন্ধন এনে দেয় আত্মপ্রকাশের। আত্মপ্রকাশ না ঘটলে আত্মমূল্যায়ন হয় না। আর তাই নিজে জেগে উঠতে এবং মানুষের আত্মাকে জাগাতেই জিকরুল্লাহ গুরুত্বপূর্ণ।
দ্রুতগতির যানবাহনের জন্য যেমনি সোজা রাস্তা দরকার, তেমনি মানুষের চিন্তাশক্তির বিকাশ এবং মহান আল্লাহর দয়া, রহমত ও আনুকূল্যের জন্য সরল মন দরকার। কারণ গভীর ও দূরের লক্ষ্যবস্তুতে পৌছাতে আঁকা-বাঁকা পথ তথা দ্বিধান্বিত চিন্তা-চেতনা বা মন- মানসিকতা বিরাট প্রতিবন্ধক। সরল চিন্তা জীবন যুদ্ধের জ্বালানিরূপে কাজ করে, যে জ্বালানি সর্বদাই শক্তিতে পরিণত হয়ে লক্ষ্য অর্জনকে করে তোলে সহজ ও নিশ্চিত।
মানুষের মন একটা বাগানের মত, যেখানে ফুলের চাষ না করলে আগাছা জন্মাবে আপনা-আপনি। আপনি যদি সচেতনভাবে ইতিবাচক চিন্তার চাষ না করেন তাহলে নেতিবাচক চিন্তা দখল করে নিবে আপনার মন। যদি আল্লাহর জিকির না করেন তাহলে কুপ্রকৃতি কুপ্রবৃত্তি কু স্বভাবের প্রভাবে অন্তর মরে যাবে। আত্মা নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।
আধুনিক জীবনের অন্তহীন প্রতিযোগিতায় আমরা প্রতিনিয়ত দৌড়াচ্ছি এক অসম্ভব অলিক সুখের পিছনে। ফলাফল ক্লান্তি অবসন্নতা দুশ্চিন্তা এবং বিষন্নতা বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। সুতরাং আত্মনিয়ন্ত্রণ, আত্মশুদ্ধি, বিভিন্ন সমস্যা সমাধান সহ দৈনন্দিন জীবনের নানা প্রয়োজনীয় কাজের সহজ সমাধানের জন্য জিকরুল্লাহ উত্তম ওষুধ।
যেমন শারিরীক মানসিক ও আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি অর্জন, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি, দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির উন্নয়ন করবে নিয়মিত সুফি জিকির।
জিকরুল্লাহতে অংশগ্রহণ করেছেন সুফি সেন্টারের শিক্ষার্থীগণ, দরবারের মুরিদান ও অনলাইনে দেশ বিদেশ থেকে ভক্ত আশেকগণ।
মিলাদ দোয়ার মাধ্যমে জিকরুল্লাহ মাহফিল সমাপ্ত হয়।