প্রতি বছরের মতো এ বছরও সিরাজগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী দই মেলা। সিরাজগঞ্জ শহরে এবং তাড়াশ উপজেলায় এ মেলার আয়োজন করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, সিরাজগঞ্জ শহর ও তাড়াশে শ্রীপঞ্চমী তিথিতে বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা উপলক্ষে প্রতি বছর এ মেলা বসে। প্রায় ৩০০ বছর ধরে এটি চলে আসছে।
মেলায় সিরাজগঞ্জ ও আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দই ও মিষ্টির পসরা নিয়ে হাজির হন ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতারা ছুটে আসেন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে দই মেলার উৎসব। ক্ষীরসা দই, রাজাপুরের দই, শেরপুরের দই, বগুড়ার দই, টক দই ও শ্রীপুরী দইসহ নানা ধরনের দই মেলে এ মেলায়।
আজ বুধবার ভোর থেকেই সিরাজগঞ্জ জেলা শহরের মুজিব সড়কের হৈমবালা বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে প্রায় অর্ধকিলোমিটার জুড়ে এবং তাড়াশের ঈদগাহ মাঠজুড়ে দই মেলা শুরু হয়।
তাড়াশ উপজেলা সনাতন সংস্থার সভাপতি তপন কুমার গোস্বামী জানান, তৎকালীন জমিদার বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর অষ্টাদশ শতকে প্রথম দই মেলার প্রচলন করেছিলেন। জনশ্রুতি আছে, জমিদার রাজা রায় বাহাদুর দই ও মিষ্টি পছন্দ করতেন। এ ছাড়া জমিদার বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নে এ অঞ্চলে ঘোষদের তৈরি দই পরিবেশন করা হতো।
প্রতি বছর শীত মৌসুমের মাঘ মাসে শ্রীপঞ্চমী তিথিতে দই মেলায় বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর থেকে ঘোষেরা দই এনে পসরা বসিয়ে বেচা-কেনা করতেন। কথিত আছে, সবচেয়ে ভালো ও সুস্বাদু দই তৈরিকারক ঘোষকে জমিদারের পক্ষ থেকে পুরস্কৃতও করা হতো। সে থেকেই এখনও চলে আসছে এ দই মেলার আয়োজন। যদিও তিনদিনের মেলার সময় কমে এখন দাঁড়িয়েছে একদিনে।
তাড়াশে দই বিক্রি করতে আশা আনন্দ ঘোষ বলেন, ‘দুধের দাম, জ্বালানি, শ্রমিক খরচ ও দই পাত্রের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দইয়ের দামও বেড়েছে। তবে মেলা এক দিনব্যাপী হলেও চাহিদা বেশি থাকায় এ মেলায় দই অবিক্রিত থাকে না।’
একইভাবে সিরাজগঞ্জ শহরে দই নিয়ে হাজির হয়েছেন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ব্যবসায়ীরা। দাম বেশি হলেও দইয়ের বেচাকেনা অনেক ভালো বলে উল্লেখ করেন তারা।
সিরাজগঞ্জ শহরের দই মেলায় দই নিয়ে আসা এনায়েতপুরের ব্যবসায়ী রনজিত ঘোষ বলেন, তিনি এ বছর মেলায় ৫০০ দই নিয়ে এসেছিলেন। দুপুরের আগেই ৩০০ দই বিক্রি হয়ে যায়।
প্রতি বছর ভোর থেকে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দইয়ের পসরা নিয়ে মেলার স্থানে হাজির হয় ব্যবসায়ীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রিও বাড়ে।