
|| ডা. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ খান ||
আপনাকে সিজারের সময় মেরুদণ্ডে যে ইনজেকশন দেওয়া হয় সেই ইনজেকশনটাকে পুশ করেছিল মহিলা ডাক্তার নাকি পুরুষ ডাক্তার?
এই ইনজেকশনটায় পরবর্তীতে কি কি ক্ষতি হয় জানেন?
বর্তমানে সিজারের শতভাগ কাজ কি মহিলা ডাক্তাররাই করেন? নাকি কিছু কাজে পুরুষ ডাক্তারের সাহায্য নিতে হয়?
পৃথিবীতে কোনো প্রাণীর সিজার লাগে না, মানুষের কেন লাগে?
উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে আমরা নিম্নে কিছু আলোকপাত করার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ।
পৃথিবীতে অন্য প্রাণীর সিজার না লাগলেও মানুষের সিজার লাগার কারণ হলো, শুশুর ফোন দিয়ে বলবে আমার মেয়ের কিছু হলে জামাই তোমাকে ছাড়বো না, শাশুড়ি বলে আমার মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করুন টাকা যা লাগে আমি দিবো।
আর শালা শালি তো আছেই। তারপর ডাক্তারের কথা বললে তো মুরুব্বি বেজার হবে।
হাসপাতালে গর্ভবতীকে নেবার পরে, ডাক্তার দেখামাত্র চেক-আপ করে এই ৩টি ডায়লগের যেকোনো একটি দিয়ে থাকেন।
১. বাচ্চা পানিশূন্যতায় আছে।
২. বাচ্চা পেটের ভিতরে পায়খানা করে দিয়েছে।
৩. বাচ্চার পজিশন উল্টা।
এই কথাগুলোর যেকোনো একটা শোনার পর গর্ভবতীর এবং তার পরিবারের লোকের অবস্থা কি হতে পারে অনুমান করা কষ্টসাধ্য নয়।
বাংলাদেশের সমস্ত প্রাইভেট হাসপাতালের গত ৫ বছরের ডেলিভারি রিপোর্ট দেখলে, দেখা যাবে প্রায় ৯০% সন্তান সিজারে ডেলিভারি করানো হয়েছে।
“১০০ জন মহিলা ডাক্তারের মধ্যে একজন মহিলা ডাক্তার সিজারে ডেলিভারি হয়েছে এমন খুঁজে পাওয়া খুব কষ্টকর”, আর সাধারণ মানুষ হসপিটালে যাওয়া মাত্রই সিজার সিজার সিজার!!
সিজারে এতো টাকা বিল আসে কেন, যাচাই করার কোনো উপায় কি আছে আমাদের দেশে। সিজারের সময় যে এক কার্টুন ঔষধ ওটিতে নেওয়া হয়, তা কি সব লাগে? বাকি ঔষধ কোথায় যায়?
সিজার ডেলিভারির জন্য, আমাদের দেশের মায়েরা অর্ধপঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। এটাকে বন্ধ করুন। মা’কে বাঁচান, বাচ্চাকে বাঁচান।
তবে আমি মনে করি, কিছু কিছু ডাক্তার নিজের স্বার্থের জন্য হয়ত সিজার করতে বলেন। কিন্তু সব ডাক্তার নয়।
এখন সিজারের সংখ্যা কেন বেড়ে গেছে তার কারণটা আমার কাছে মনে হয় ব্যাপারটার উৎপত্তি আমাদের জন্ম থেকে। আপনি আপনার দাদা দাদী / নানা নানীর দিকে তাকান। উনারা দেখবেন, বুড়ো বয়সেও কত শক্তিশালী। আমাদের দাদা নানারা দেখবেন, ৭০ বছর বয়সেও অনেক দূর হেটে হেটে নামাজ পড়তে যাচ্ছে , চা খেতে যাচ্ছে। আমার দাদা ৮০+ বয়স হওয়ার পরেও চশমা ছাড়া পেপার পড়তো । এবার আমাদের বাবা মায়ের দিকে তাকান। কিছু পরিবর্তন পাচ্ছেন? উনাদের কোমর ব্যাথা, হাটু ব্যাথা, হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়া ধরনের অসুখ দেখতে পাচ্ছেন?
বর্তমান বাংলাদেশে বেশী সংখ্যক “মা”দের পেট কেটে সিজার করে বাচ্চা বের করা হচ্ছে, এতে অনেক “মা” মারা যাচ্ছেন। অথচ আমাদের দাদী-নানিরা ১০/১২ টা করে বাচ্চা জন্ম দিয়েছেন, আল্লাহর রহমতে তেমন সমস্যা হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ…..
“হয়তো কেউ বলবেন, “অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার কারণে বর্তমানে “সিজার” করতে হয়, আমি বলব আপনার ধারণা ভুল। তাই যদি হয় তাহলে তো আমাদের দাদি-নানিদের বিয়ে হয়েছে মাত্র ১১/১২ বছর বয়সে, কই তাদের তো কিছু হয়নি…!!
(দুঃখিত আমি তর্ক করতে চাচ্ছি না)
একটা সিজার মানে একটা মায়ের জীবন শেষ!!
সিজার মানে একটা মায়ের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রতিবন্ধী হয়ে বেঁচে থাকা।
পার্থক্য টা খেয়াল করেন,, যাদের নরমালে বেবি ডেলিভারি হয় তাদের নাড়ী ছেঁড়া ধন হয়, আর যাদের সিজার হয় তাদের হয়তো নারী ছেড়া হয় না, কিন্তুু নাড়ী কাটা ধন হয়!!
অনেকের ভাবনা সিজার কি? জাস্ট পেট কাঁটা হয়। জ্বি না শুধু পেট নয় সাথে সাতটা পর্দা কেটে বেবিটা কে দুনিয়াতে আনতে হয়।
হয়তোবা সিজার করানোর সময় এ্যানেসথেসিয়া-এর জন্য বুঝা যায় না পেট কাটাটা। খেয়াল করে দেখবেন আধাঘণ্টার মধ্যে তিনটা স্যালাইন শেষ হয়।
কিন্তুু মোটা সিরিন্জ দিয়ে মেরুদণ্ডে দেয়া ইনজেকশনটা প্রতিটা সিজারিয়ান মা’কে সারাজীবন কষ্ট দেয়।
মা’গুলোর কখনো কখনো শরীরের বিভিন্ন জায়গা অবস হয়ে থাকে, বসা থেকে উঠতে পারে না। সংসারের যাবতীয় কাজ করতে ওনাদের অনেক কষ্ট হয়। তবুও করতে হয়। কারণ, ওনারা নারী জাতী।
বিশ্বাস করেন, যখন অবসের মেয়াদ চলে যায়, তখন প্রতিটা মা গলা ছুলা মূরগীর মতো ছটফট করতে থাকে,, ২৪ ঘন্টা এক টানা সিজারিয়ান মায়ের শরীরে স্যালাইন চলে। শরীরের ও কাটা জায়গার ব্যাথার জন্য ক্যানোনিকাল স্যালাইন চলে টানা ২৪/৩২ ঘন্টা! টানা ২ দিন শরীরে খিচুনি ও মাথা বাড়ি হয়ে বিছানায় পরে থাকতে হয় প্রতিটা মায়ের।
যদি কোনো প্রতিষ্ঠান সিজারের প্রয়োজন নেই, তাও ব্যবসার জন্য কোনো মা’কে সিজার করায়, তাহলে আল্লাহর কাছে তাদের কঠিন জবাবদিহি করতে হবে।
যত সম্বভ সিজারকে না বলুন!
তথ্যটা একটু পড়ুন,
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে সিজারের হার কমেছে। মায়ের মৃত্যুর হারও কমেছে, নরমালে জন্ম নিচ্ছে সুস্থ সবল শিশু।
করোনায় লকডাউনে দেশে ১ লাখ ৭৫ হাজার শিশুর জন্ম হয়েছে, এর মধ্যে মাত্র ৪ শতাংশ শিশুর জন্ম হয়েছে সিজার করে। বাকি ৯৬ শতাংশ শিশুর জন্ম হয়েছে নরমালে।
প্রিয় “মা” বাবা আমার হৃদয় নিংড়ানো সম্মান দিয়ে আপনাদের কিছু কথা বলতে চাই খারাপ লাগতে পারে, ক্ষমা করবেন। “প্রত্যেক বালা-মুসিবত আল্লাহর পরীক্ষা স্বরুপ এটা সবাইকে মানতে হবে। তবে সিজারের জন্যে ও বাচ্চা বড় হয়ে D J মার্কা হওয়ার পিছনে বেশির ভাগ আপনারাই দায়ী!
গবেষণায় দেখা গেছে, সিজারের বাচ্চাদের ভবিষ্যতে রোগ-বালাই বেশি হয়।
আগের গর্ভবতী মায়েরা গর্ভাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করতো। আর বর্তমান আপনার ভরসা ডাক্তারের উপর। দুই তিন মাস যেতে না যেতেই স্বামীকে বলেন, আমারে চেক-আপ করান, বাচ্চা মনে হয় উল্টা হয়ে আছে। ক্লিনিকে গেলে “কিছু কসাই ডাক্তার” আপনাকে ভয় দেখায়। ফলে আপনি মানুষিক ও শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পরেন।
আগের গর্ভবতী মায়েরা গর্ভাবস্থায় পবিত্র কোরান পড়তো, নামাজ পড়তো, ঘরে বসে আল্লাহর জিকির-আজগার করতো। আর আপনি বর্তমানে ঘরে বসে ২৪ঘন্টা ডিস লাইনের জিকির করেন। (কিছু মা)
আগের গর্ভবতী মায়েরা গর্ভাবস্থায় সব ধরনের সাংসারিক কাজ করতো, এমনকি গর্ভাবস্থায় ঢেঁকিতেও ধান বানতো। (আবার এটা ভাইবেন না এগুলো আমি করতে বলতেছি)। আর আপনি বর্তমানে ফুলের বিছানা থেকে উঠতে চান না।
আগের গর্ভবতী “মা” দের চেহারা, পেট, পিঠ সহজে কোনো পরপুরুষ দেখতে পাইনি। আর বর্তমান আপনার পেট পিঠ গঠনে সবার নজর লাগে, বেপর্দাই চলাফেরা করেন। আপনার নিয়ত ঠিক নাই, আপনার সমস্যা তো হবেই।
আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ জ্ঞান দান করুক আমিন।।
লেখক: ইসলামিক স্কলার ও হোমিও চিকিৎসক, ভোলা। মোবাইল: ০১৭১৬০০৫৯৮১।