বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ৩০

সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার গুরুত্ব

সম্প্রতি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংগঠিত ঘটনাটি ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার চরম অভাবের বাস্তব উদাহরণ।

সাভারে সিটি ইউনিভার্সিটি ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনার ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাচুর, নগদ টাকা লুটপাটসহ কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

সহিষ্ণুতা ও ধৈর্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক গুণ। পবিত্র কুরআনে বহু জায়গায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিজেকে ধৈর্যশীল ও পরম সহিষ্ণু হিসেবে পরিচয় দান করেছেন। কুরআন ও হাদিসে ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।ধৈর্যের গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআন মজিদে বলেছেন, ‘মহাকালের শপথ, মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়। (সুরা আসর)

ধৈর্য ধারণকারীর সাফল্য সুনিশ্চিত, কারণ আল্লাহ তাআলা ধৈর্য ধারণকারীর সঙ্গে থাকেন। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যার সঙ্গে থাকবেন, তার সফলতা অবধারিত।

পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে, হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। ( সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৩)।

রাসুলে করীম স বলেন, যে ব্যক্তি বিপদে-মুসিবতে দোয়া পড়বে, আল্লাহ তাআলা তার বিপদ দূর করবেন এবং তার যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়ে উত্তম জিনিস তাকে দান করবেন। (বুখারি ও মুসলিম)।

ধৈর্য তিন প্রকার। যথা:
১. ‘ছবর আনিল মাছিয়াত’ অর্থাৎ অন্যায়–অপরাধ হতে বিরত থাকা।
২. ‘ছবর আলাত তআত’, অর্থাৎ ইবাদত আল্লাহর আনুগত্য ও সৎকর্মে কষ্ট স্বীকার করা।
৩. ‘ছবর আলাল মুছিবাত’, অর্থাৎ বিপদে অস্থির না হওয়া। (তাফসিরে বায়জাবি)।

কোনো ব্যক্তি যদি উপরিউক্ত অর্থে ধৈর্য অবলম্বন করে, তবে তার জীবনে পূর্ণতা ও সফলতা অর্জন করতে পারে। কারণ প্রথমত, অন্যায়–অপরাধ তথা পাপকার্য থেকে বিরত থাকা, সকল প্রকার অকল্যাণ ও গ্লানি থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায়।

দ্বিতীয়ত, ইবাদত ও সৎকর্ম সম্পাদন করা সফলতার একমাত্র সোপান।

তৃতীয়ত, প্রতিকূলতায় দৃঢ়পদ থাকা লক্ষ্যে পৌঁছার একমাত্র মাধ্যম।

সুতরাং ‘ছবর কামিল’ বা পরিপূর্ণ ধৈর্যই মানবজীবনকে পূর্ণতা দিতে পারে। আমাদের উচিত যে কোনো পরিবেশে ও পরিস্থিতিতে নিজেকে সংযত রেখে ধৈর্যের সাথে, দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া। তাহলেই আল্লাহর সাহায্য-সহযোগিতা লাভ করা সম্ভব। এবং সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠাও সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *