|| আব্দুল হামিদ সরকার ||
দিনের আলোয় ছোটে পিয়ন কাঁধে জড়ানো ব্যাগে,
ডাকপিয়ন চিঠি হাতে ছোটে মুচকি মুচকি রাগে।
দবির মোল্লা চাদর গায়ে ডাকে এসো ভাই,
ছেলেটা মোর লিখবে চিঠি কখন যে তা পাই।
ঢুকরে কাঁদে দবির মোল্লা সেই যে গেলো ছেলে,
হেথায় খুঁজি, সেথায় খুঁজি, খুঁজি খালবিলে।
ময়লা পেড়ান, সাদা লুঙ্গি, ঢেউ জাগানো চুল,
লিখবে চিঠি সবুজ খামে হয় না যেনো ভুল।
দিন পেড়িয়ে চললো মাস তবুও এলো না চিঠি,
মোল্লা বাড়ির বিড়াল ছানাটি বিমর্ষ ছোটাছুটি।
উনুনেতে বসে না হাড়ি কেবলই চিঠির অপেক্ষা,
চশমা উচিয়ে পড়বে চিঠি মিটবে প্রতিক্ষা।
মাচানে দোলে কুমড়া লাউ সূর্যমুখী ডগা,
সবুজ খামটি ঠোঁটে করে আসবে বুঝি বগা।
ছানি চোখে দবির মোল্লা এপাশ ওপাশ করে,
ঢেঁকুর ছাড়ে উর্ধমুখী আঙিনা জুড়ে।
মাতৃহারা ছেলে আমার আসবে বিজয় ধরে,
মুক্ত হাওয়ায় উড়বে পাখি বিজয়ের সু়-ভোরে।
সবুজ খামে জানবে আমার দেহ আঙিনা কেমন?
লিখবো আমি তুমি বিহনে আছি যথা যেমন।
এলো বুঝি ডাকপিয়ন হাঁকবে চিঠি লও,
চলন বিলে ভিড়বে এবার বেদে বহরের নাও।
সবুজ খামে আসবে চিঠি মুক্ত সুন্দরবন,
জলহস্তি রয়েল বেঙ্গল ঢুলবে হাসি মন।
দবির মোল্লা উঠায় হাত বিধাতার পানে,
আসবেই চিঠি সবুজ খামে ঠেকবে কোনখানে?
বিজয়ের হর্ষধ্বনি এলোপাতাড়ি আওয়াজ,
ডাকঘরে দবির মোল্লা করে না কাউকে তোয়াজ।
হাওর বাওড় উঠলো ভরে রক্তমাখা জলে,
বাবড়ি চুলে ফিরলো সবে উঁচিয়ে বন্দুক নলে।
তাদের সুধায় দবির মোল্লা কোথায় সবুজ খাম,
ছেলেটা মোর যুদ্ধে গেছে জানো কি তার নাম?
ঢুঁকরে কাঁদে অজ্ঞাতরা এই নিন চিঠি,
সবুজ খামে লাল বর্ণে ঠিকানা মুক্তভূমির মাটি ।
লেখক: বিশিষ্ট কবি ও ঔপন্যাসিক এবং সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, বেলকুচি বহুমুখী মহিলা ডিগ্রি কলেজ, বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ। রচনাকাল: ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫।