রবিবার, অক্টোবর ২৬

সকল নাগরিকের সম্মানজনক নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম —মন্ত্রিপরিষদ সচিব

|| শেখ শাহরিয়ার | জেলা প্রতিনিধি (খুলনা) ||

মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ বলেছেন, বাংলাদেশ বর্তমানে জনমিতিক লভ্যাংশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০৩৩ সালের মধ্যে দেশে বয়সজনিত নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী যেমন বাড়বে, তেমনি গড় আয়ুও বৃদ্ধি পাবে। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সম্মানজনক ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতেই সরকার সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে।

রবিবার (২৬ অক্টোবর) সকালে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের অডিটোরিয়ামে সর্বজনীন পেনশন মেলা-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারের সমাজকল্যাণমূলক ১৪৩টি কর্মসূচি চলমান থাকলেও, অনেক ক্ষেত্রেই তা পর্যাপ্ত নয়। এবারের বাজেটে কিছু কর্মসূচি কমিয়ে ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হলেও বাস্তবতায় এখনো তা অপর্যাপ্ত। বর্তমানে মাত্র ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী পেনশন সুবিধার আওতায় আছেন, বাকি বিশাল জনগোষ্ঠী এ সুবিধার বাইরে। এই অবস্থায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম জনগণের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

তিনি বলেন, “আমাদের শিক্ষকরা সামান্য পেনশন পান, তাও পেতে হয়রানি পোহাতে হয়। অন্যদিকে বেসরকারি চাকরিজীবীরা চাকরি হারানোর ভয়ে থাকেন। নতুন পেনশন স্কিম এসব মানুষের জন্য একটি বড় সুযোগ।”
ড. রশীদ আরও জানান, “এই উদ্যোগে গ্রাহকরা নিজেদের পেনশন তহবিল থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন। কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা জমা করলেই পেনশন সুবিধা পাওয়া যাবে। সরকার এ স্কিমের শতভাগ নিশ্চয়তা দিচ্ছে। একে রাজনৈতিকভাবে দেখার কোনো কারণ নেই।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম, যিনি বলেন, “জনগণের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব থেকেই সর্বজনীন পেনশন উদ্যোগের সূত্রপাত। এর লক্ষ্য অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করা।”

সভায় খুলনার বিভাগীয় কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) মো. ফিরোজ শাহ সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দীন খান, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার এবং জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য (ফান্ড ম্যানেজমেন্ট) মো. গোলাম মোস্তফা। স্বাগত বক্তব্য দেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো. হুসাইন শওকত।

অনুষ্ঠানের আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে খুলনা আঞ্চলিক লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রাঙ্গণ থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

দিনব্যাপী মেলায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের ৫০টি স্টল সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত সেবা প্রদান করে।

পরে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “একটি কল্যাণরাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব হলো নাগরিকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন কঠিন, কিন্তু তারা যদি এই স্কিমের আওতায় আসে, তবে সম্মানের সঙ্গে নিরাপদ জীবনযাপন করতে পারবে।”

একই স্থানে তিনি বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *