বুধবার, ডিসেম্বর ৩১

শ্রদ্ধা ও অশ্রুসিক্ত ভালোবাসায় স্বামীর পাশেই সমাহিত আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া

|| ​নিজস্ব প্রতিবেদক | আলোকিত দৈনিক ||

লাখো মানুষের অশ্রুসিক্ত ভালোবাসা আর গভীর শ্রদ্ধায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকাল ৫টার দিকে শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়েছে। এর আগে বিকেল ৪টার দিকে মরদেহ দাফনের জন্য জিয়া উদ্যানে নিয়ে আসা হয়।

​দাফনকালে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ডা. জুবাইদা রহমান, ব্যারিস্টার জাইমা রহমানসহ পরিবারের সদস্যবৃন্দ। এছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, বিদেশি অতিথি, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। দাফন প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন রাখতে ঐ এলাকায় সাধারণ মানুষের চলাচল সীমিত রাখা হয়।

​এর আগে বিকেল ৩টায় রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম এই জানাজায় অংশ নিতে আসা মানুষের ভিড় সংসদ ভবন এলাকা ছাড়িয়ে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে এক মহাসমুদ্রে রূপ নেয়।

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক জানাজায় ইমামতি করেন। এই শেষ বিদায়ে অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তানের স্পিকার সরদার আইয়াজ সাদিকসহ নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।

এছাড়াও জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দেশের বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ জানাজায় শরিক হন। জানাজায় নারীদের অংশগ্রহণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার রাখা হয়েছিল।

​জানাজার আগে দলের পক্ষ থেকে বেগম খালেদা জিয়ার জীবন ও কর্ম তুলে ধরেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান। তিনি অত্যন্ত আবেগঘন পরিবেশে দেশবাসীর কাছে তাঁর মায়ের জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন।

​সকাল থেকেই এই আপসহীন নেত্রীকে শেষবারের মতো দেখতে ঢাকা ও এর আশপাশের জেলাগুলো থেকে মানুষের স্রোত আসতে থাকে। খামারবাড়ি, আসাদগেট, ফার্মগেট থেকে শুরু করে কারওয়ান বাজার ও ধানমন্ডি পর্যন্ত এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে জাতীয় পতাকায় মোড়ানো কফিন যখন মানিক মিয়া এভিনিউতে পৌঁছায়, তখন এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পুরো এলাকা জুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবির ২৭ প্লাটুন সদস্য মোতায়েন ছিল। এই দাফনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটল বাংলাদেশের রাজনীতির এক দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য অধ্যায়ের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *