
|| নিজস্ব প্রতিবেদক ||
সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্ম শিক্ষক নিয়োগ এবং উচ্চ মাধ্যমিকের সকল শাখায় ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং ইসলামি শিক্ষায় মৌখিক পরীক্ষা রাখার দাবি জানিয়েছেন সরকারের সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহসানুল হক মিলন-সহ শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।
শনিবার (১১ অক্টোবর) সকালে রাজধানীস্থ জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ ইসলামিক স্টাডিজ ফোরামের উদ্যোগে “সংকট আবর্তে ইসলাম শিক্ষা: উত্তরণ কর্মকৌশল” বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এই দাবি জানান। প্রফেসর মোঃ ছানা উল্লাহর সভাপতিত্বে এবং ড. আবদুল আজিজের ও উপাধ্যক্ষ মোঃ আবদুর রহমানের সঞ্চালনায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহসানুল হক মিলন। প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা করেন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ শামছুল আলম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, প্রফেসর ড. এ কে এম ওয়ারেসুল করিম বুলবুল, প্রফেসর ড. আবু জাফর খান, প্রফেসর মিয়া মুহাম্মদ নুরুল হক, প্রফেসর ড. মোঃ রইছ উদ্দিন, প্রফেসর ড. আ ব ম ছিদ্দিকুর রহমান আশরাফী, প্রফেসর ড. শাহ মুহাম্মদ আবদুর রাহীম, প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান, প্রফেসর আতিকুর রহমান, প্রফেসর মারুফুর রহমান শেখ, প্রফেসর রফিকুল ইসলাম, প্রফেসর আব্দুল কাদের মিয়া, প্রফেসর ড. মোঃ সাইদুল হক, এ এস এম জাফর সাদিক, মোঃ শহিদুল ইসলাম, প্রফেসর মাহবুব, মুফতী মহিবুল্লাহ, ড. হেদায়েত উল্লাহ, মোঃ মনিরুল হাসান প্রমুখ।
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তাগণ বলেন, বাংলাদেশ একটি ধর্মপ্রাণ মানুষের দেশ। এই দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম নাগরিকের ধর্ম ইসলাম। অন্যান্য ধর্মের নাগরিকগণও ধর্মপ্রাণ। কিন্তু রাষ্ট্রের নাগরিক ও নতুন প্রজন্মের জন্য জাতীয় শিক্ষা নীতি ও ব্যবস্থায় শিক্ষার কোনো স্তরেই “ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা” গুরুত্ব ও আবশ্যিকভাবে পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা নেই। নাগরিকগণ ধর্মশিক্ষা নানা সোর্স থেকে শেখে। ফলে অশিক্ষা কুশিক্ষা কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে ধর্মান্ধতা ও উগ্রতার উন্মেষ ঘটে। বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ধর্ম ও নৈতিকতায় অজ্ঞ থেকে সমাজ এবং রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে অনৈতিকতা ও অবক্ষয়ের ছয়লাব ঘটায়। এই নৈতিক অবক্ষয় রোধ এবং ধর্মীয় নৈতিক সমাজ ও রাষ্ট্র পরিগঠন ও নৈতিকতায় উজ্জীবিত করতে ও রাখতে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সর্বস্তরে ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষা আবশ্যিকভাবেই কারিকুলাম ও সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত রাখতে হবে।
বক্তাগণ আরো বলেন, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তি নীতিমালায় “ইসলাম শিক্ষা” বিষয়টি এবারও ঐচ্ছিক ৪র্থ বিষয় হিসেবে রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। যা বিগত পতিত সেক্যুলার ফেসিস্টদেরই পুনরাবৃত্তি এবং জুলাই বিপ্লবের শহীদের রক্তের সাথে বেইমানি। ইসলামপ্রিয় দেশবাসি, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা ও বিভাগে “ইসলাম শিক্ষা” বিষয়টি আবশ্যিক হিসেবে অধ্যয়নের ব্যবস্থা করার দাবি জানান অথবা ২০১২ সালের পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান এবং উচ্চ মাধ্যমিকের সকল শাখায় ইসলাম শিক্ষা বিষয় অন্তর্ভূক্ত করার দাবি জানান।
ইসলামিক স্টাডিজের শিক্ষকদের আরো দাবি: আন্তঃ শিক্ষা বোর্ডের ভর্তি নীতিমালায় অবিলম্বে পরিবর্তন আনতে হবে এবং এটা ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকেই বাস্তবায়ন করতে হবে, এটাই শিক্ষক সমাজের প্রত্যাশা। এর ব্যাতিক্রম হলে এ দেশের ইসলামপ্রিয় জনগণ ও শিক্ষার্থীরা তা কোনোভাবেই মেনে নিবে না, বরং তারা মাঠে নামতে বাধ্য হবে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তাগণ ১২ দফা দাবি পেশ করেন।
দাবিগুলো হলো :
(১) প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি হতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রাথমিক তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি এবং মাধ্যমিকে ষষ্ঠ হতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত আরবি বিষয়টি বাধ্যতামূলক করতে হবে।
(২) উচ্চমাধ্যমিক স্তরে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ আইসিটির মতো ১০০ নম্বরের একটি বিষয় বাধ্যতামূলকভাবে সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
(৩) ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে ‘ইসলাম শিক্ষা’ বিষয়টি উচ্চমাধ্যমিক একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে মানবিক শাখায় নৈর্বাচনিক এবং বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে পাঠ্যভুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(৪) স্নাতক পাস কোর্স, স্নাতক অনার্স ও স্নাতকোত্তর স্তরের সকল বিষয়, সাবজেক্ট, ডিসিপ্লিন এবং প্রোগ্রামে তথা কলা, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, মেডিকেল ও প্রযুক্তিগত সকল কোর্স ও ডিসিপ্লিনে “ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা” ন্যূনতম ১০০ নম্বরের ১টি বিষয় আবশ্যিকভাবে সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
(৫) সকল কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে ইসলাম শিক্ষা বিষয়’ এবং ডিগ্রি ও মাস্টার্সে ‘ইসলামিক স্টাডিজ বিষয় ও বিভাগ খুলতে হবে এবং সকল সরকারি ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদ ও বিভাগ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
(৬) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, প্যারা-মেডিকেল, কারিগরিসহ সকল বিশেষায়িত সরকারি ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যেক ডিসিপ্লিনে ১০০ নম্বরের ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ আবশ্যিক করতে হবে।
(৭) প্রশাসন, বিচারবিভাগ, শিক্ষা-প্রশিক্ষণ, ইন-সার্ভিস প্রশিক্ষণ এবং সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীসহ সকল ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১০০ নম্বরের ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ আবশ্যিক করতে হবে।
(৮) মধ্যপ্রাচ্যের জব মার্কেট পেতে এবং ধর্মীয় ও আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে আরবি ভাষা শিক্ষা গুরুত্বসহ সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
(৯) অবিলম্বে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করে উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগ দান করতে হবে।
(১০) সকল বিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে ধর্ম ও সংস্কৃতি চর্চার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(১১) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে ‘ধর্মীয়-কালচারাল’ শিক্ষক পদ সৃষ্টি করে উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
(১২) স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা এবং সুঠাম কর্মক্ষম জাতি পরিগঠনের লক্ষ্যে ‘প্রাথমিক সামরিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়’ সকল স্তরের শিক্ষায় আবশ্যিক করতে হবে।