বুধবার, জুলাই ৩০

রংপুরে হিন্দুপল্লীতে হামলা ও বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫

|| রাজিব মিয়া | নিজস্ব প্রতিনিধি ||

রংপুরের গঙ্গাচড়া ‍উপজেলার বেতগাড়ী ইউনিয়নের একটি হিন্দুপল্লীতে হামলা ও বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বুধবার (৩০ জুলাই) বেলা ১১টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান।

এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পার্শ্ববর্তী নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় যৌথবাহিনী অভিযানে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. ইয়াছিন আলী (২৫), স্বাধীন মিয়া (২৮), আশরাফুল ইসলাম (২৮), এস এম আতিকুর রহমান খান (২৮) ও সাদ্দাম হোসেন সেলিম (২২)। তারা ঘটনাস্থলের পাশের মাগুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা।

এর আগে, মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যার দিকে শ্রী রবীন্দ্রনাথ রায় (৫৫) নামে ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১০০০ থেকে ১২০০ জনের বিরুদ্ধে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা করে। এরপর যৌথ বাহিনী অভিযানে রাতভর তল্লাশি চালিয়ে ভিডিও ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করে ঘটনাস্থানের আশপাশের এলাকা থেকে ওই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।

এদিকে বুধবার দুপুরে আসামিদের রংপুর সদর কোর্টে হাজির করা হলে আদালত তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

রংপুর সদর কোর্ট ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রংপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান বলেন, ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হিন্দুপল্লীতে হামলার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

প্রসঙ্গত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে গত শনিবার (২৬ জুলাই) রঞ্জন কুমার রায় নামে এক কিশোরকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় পাশের উপজেলার এলাকার লোকজন এসে আলদাতপুর ছয়আনি বালাপাড়া হিন্দুপল্লীতে ওই কিশোরের বাড়ি মনে করে অন্য আরেকজনের বাড়িতে ভাঙচুর চালান। পর দিন রোববার আরেক দফা হিন্দুপল্লীতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

আতঙ্কে অনেক পরিবার বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেন বলে জানান ভুক্তভোগীরা। হামলা ঠেকাতে গিয়ে এক পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে সেনাবাহিনী ও পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়।

এদিকে আটক রঞ্জন কুমার রায়কে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রবিবার (২৭ জুলাই) আদালতের মাধ্যমে কিশোর পুনর্বাসনকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তবে সোমবার (২৮ জুলাই) বিকেল থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় স্বস্তি ফিরতে শুরু করে হিন্দুপল্লীতে। ভয়ভীতি ও হামলার আতঙ্ক কেটে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বাড়িতে ফিরে আসেন।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) উপজেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের বাড়িঘর মেরামত করার কাজ শুরু করা হয়। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে ১৫ বান্ডিল টিন ও ৩০ বস্তা শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০টি মাটির চুলা ও চারটি টিউবওয়েল মেরামত করে দেওয়া হচ্ছে। তাদের ঘরবাড়িগুলো মেরামত করতে যা কিছু লাগবে, তা আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বহন করব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *