রংপুরে চালু হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম রোবটিক সার্জারি। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে এই অপারেশন করা হবে। সার্বিক প্রস্তুতি নিতে আগামী ৫ জুলাই রংপুর আরডিআরএস ভবনে বাংলাদেশের প্রথম একটি সেমিনার হবে। সেমিনারে রোবটিক সার্জন ডা. সুধির সৃভাস্তব উপস্থিত থাকবেন।
রবিবার (৩০ জুন) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ও সার্জন ডা. জাবেদ আক্তার।
তিনি জানান, বিশ্বে শুরু হয়েছিল ২০০০ সালে। বাংলাদেশের একমাত্র রোবটিক সার্জারিতে ইউনিভার্সিটি ফেলোশিপ করা সার্জন তিনি। এই ফেলোশিপ ডব্লিউ ইউ ইয়ং সার্জনদের করার জন্য সব সার্জনদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি। যাতে তারা একটি স্পষ্ট ধারণা নিতে পারে এবং বাংলাদেশে রোবট আসলে ব্যবহার করতে পারে।
ডা. জাবেদ আক্তার বলেন, আমেরিকা, ইউরোপ, জাপানে ৯৩ শতাংশ ব্যবহার হয়। ইন্ডিয়াতে রোবটিক সার্জারি হয় মাত্র ১ শতাংশ। নেপালেও শুরু হয়েছে রোবটিক সার্জারি, বাংলাদেশে নেই। অনেক মানুষের চিকিৎসার জন্য অপারেশনের প্রয়োজন হয়। অপারেশন আমরা সাধারণত পেট কেটে করে থাকি। অপারেশনের আর একটা পদ্ধতি হলো ছিদ্র অথবা ফুটা করা। ছোট ফুটা করে অপারেশনের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে ল্যাপরোস্কপি। যেটা পৃথিবীর সবখানে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এখন ল্যাপরোস্কপির মাধ্যমে আমরা প্রায় সব অপারেশন করতে পারি, কিন্তু এটারও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। বড় বড় অপারেশন করা অনেক সময় সম্ভব হয় না।
তিনি আরও বলেন, এই ল্যাপরোস্কপির মাধ্যমে সার্জনদের প্রায় ৭০ শতাংশ ওভারঅল পেইন হয়, আর ব্যাক অ্যান্ড সোল্ডার পেইন হয় ৫০ শতাংশ। আমরা এখানে ৪ ডিগ্রি মুভমেন্ট পাই, যার জন্য জটিল অপারেশন এবং সংকীর্ণ ও অপ্রশস্ত স্থানে অপারেশন করা সম্ভব হয় না। কিন্তু রোবটিক অপারেশনে সেটা সম্ভব।
কারণ, ইনস্ট্রুমেন্ট এর মুভমেন্ট ৭ ডিগ্রি করা হয়েছে। যেটা মানুষের হাতের মুভমেন্ট এর সমান। অপারেশনের স্থান ভালো ও স্পষ্ট দেখার জন্য উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন থ্রিডি ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়। কোনো কারণে যদি সার্জনের হাত কাঁপে তাহলে অটোমেটিক্যালি সেটা বন্ধ হয়ে যাবে।
ডা. জাবেদ আরও বলেন, রোবটিক অপারেশনে সব ধরনের সার্জারি করা সম্ভব। বিশেষ করে ইউরোলজি, গাইনোকোলজি, কলোরেক্টাল সার্জারি, হেপাটোবিলিয়ারি এন্ড অ্যাবডোমিনাল ওয়াল রিকনস্ট্রাকশন সার্জারিতে ব্যবহার হয়।
তিনি বলেন, ওপেন ও ল্যাপরোস্কপি অপারেশনের চেয়ে, বিশেষ করে জটিল ও সংকীর্ণ স্থানে অপারেশন করতে অনেক সুবিধা সংযুক্ত করা হয়েছে। এখানে অপারেশন সংক্রান্ত জটিলতা, রক্তপাত ৩৯ শতাংশ ইনফেকশন কম হয়। এই ধরণের অপারেশন চালু হলে রোগীর ব্যথা, রক্তপাত ও ইনফেকশন কম হবে। সার্জন দূরে বসে অপারেশন সাকসেস করবেন। এখানে সার্জন নিজ আঙ্গুলে রোগীর অপারেশন করবেন। ওপেন কিংবা ল্যাপরোস্কপি হোক না কেনো বিশেষ করে জটিল ও সংকীর্ণ স্থানে অপারেশন করতে অনেক সুবিধা। আগামী ৬ মাসের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রম চালু হবে রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
ডা. জাবেদ আক্তার বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনো রোবট নেই। তবে বাংলাদেশ প্রস্তুত রোবটের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যেতে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের বিশেষভাবে সহযোগিতা প্রয়োজন।
তিনি দাবি করেন, রোবটিক অপারেশন বাংলাদেশে শুরু হলে, বাংলাদেশের জনগণ জটিল রোগের চিকিৎসা পেতে পারে এবং বিদেশমুখী প্রবণতা কমবে।