
|| প্রফেসর ড. আ ব ম সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী, ইবি, কুষ্টিয়া ||
আল্লাহর সৃষ্টির সবকিছুতেই রয়েছে বৈচিত্র। স্রষ্টা হিসেবে আল্লাহতালার নিদর্শনগুলোর অন্যতম হলো মানব তথা নারী-পুরুষের সৃষ্টি। এবং তাদের ভাষা এবং বর্ণের বৈচিত্র (সূরা আর-রুম:২২)।ছেলে-মেয়ে ভিন্ন চরিত্র ভিন্ন বৈশিষ্ট্য ভিন্ন আকৃতি এবং ভিন্ন করে অথচ সুন্দর অবয়বে সৃষ্টি করেছেন। (সূরা আত তীন:৪) উভয়ের মধ্যে রয়েছে কাম রিপু ক্ষুধা তৃষ্ণা ইত্যাদি কিছু কমন বিষয়। আবার লিঙ্গের দিক থেকে ভিন্নতার কারণে পরস্পর পরস্পরের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ অনুভব করে থাকে। আর এটা হয় টিনএজ ছেলেমেয়েদের মধ্যে। আর এসময়টাতেই তারা পিতা-মাতা অভিভাবকদের ছেড়ে স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় লেখাপড়া করতে যায়। এ সময়টাতে তারা একান্তে সান্নিধ্যে থাকে।
দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহশিক্ষার সুযোগ থাকায় তারা অবাধ মেলামেশার সুযোগ পায়। আর অধিকাংশ ছেলে-মেয়ে এ সুযোগটাকে কাজে লাগাতে তৎপর থাক।
ছেলেরা মেয়েদের প্রতি গঠন মুখাবয়ব দেখে যতটুকু না আকর্ষিত হয় তার চাইতে তারা বেশি আকর্ষিত হয় তাদের বিশেষ অঙ্গের প্রতি।
এজন্যই আল-কুরআনে মেয়েদের বড় ওড়না দিয়ে ঢেকে পর্দা হিজাবের সাথে চলাফেরা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। (সূরা আননূর:৩১)
আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইউনিফর্মের নামে কামিজের উপর যে ওড়না ব্যবহার করে থাকে তাতে ওড়না ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য তো পূর্ণ হয়ই না, বরং তাতে তাদের বিশেষ অঙ্গ আরো স্ফীতভাবে সহপাঠীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে প্রকাশ পেয়ে থাকে। এতে ছেলেরা যৌনাচারের প্রতি আরো বেশি আকর্ষিত হয়ে থাকে।
সারাদেশ যৌনাচারে ছেয়ে গেছে। আর যৌনাচারের প্রথম উৎস এই স্কুলগুলো। এখানে যদি আমাদের মেয়েদেরকে সেভাবে সুরক্ষা এবং নিরাপত্তাদানের ব্যবস্থা করা না যায়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এ জাতি রসাতলে যাবে।
তাই বর্তমান সরকারের প্রতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিম্নের বিষয়ের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি প্রদানের জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
১. বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইউনিফর্মে পরিবর্তন আনা হোক।
২. পুরো শরীর ঢাকা যায় এরকম বড় ওড়না ইউনিফর্মে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
৩. যেকোনো একটি মার্জিত কালারের বোরকা চালু করা যেতে পারে।
৪. মেডিকেলের ছাত্রীদের মতো ফুলহাতা এপ্রোন এর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
৫. ছেলে এবং মেয়েদের যেখানে আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, সেখানে ছেলেদের স্কুলে এবং কলেজে মাদ্রাসায় ছাত্রী ভর্তি নিষিদ্ধ করা যেতে পারে। ।
৬. যেখানে মেয়েদের আলাদা প্রতিষ্ঠান নাই সেখানে আলাদা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।
৭. নৈতিক শিক্ষা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সালাত আদায়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
৮. পর্দা করা ফরজ বিষয়টি ক্লাসে শিক্ষকগণ ছাত্রছাত্রীদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন।
৯. জেলা উপজেলা পর্যায়ে প্রতিষ্ঠান পরিদর্শক বৃদ্ধি করা হোক। যাতে শিক্ষাসহ মেয়েদের নিরাপত্তা বিধানে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে।
উপরোক্ত বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা গেলে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন ভালো হবে, লেখাপড়ার পরিবেশ তেমনি ফিরে আসবে। ছেলেমেয়েরা নিজেদের অপকর্ম থেকে বিরত রাখতে পারবে। নৈতিকতার প্রতি তারা আগ্রহী হয়ে উঠবে।
লেখক: সাবেক ডিন, থিওলজী এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।