
|| নিজস্ব প্রতিবেদক ||
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় তিন দফা দাবি আদায়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকবৃন্দ। আজ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় পাতারহাট বাজারের তেমুহনী চত্বরে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপজেলার সকল বেসরকারী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন।
বক্তব্য রাখেন পাতারহাট ইসলামিয়া ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জনাব আব্দুশ শাকুর, সহকারী শিক্ষক (কৃষি) জনাব, মোস্তাফিজুর রহমান এবং সহকারী মৌলভী জনাব আব্দুর রহিম, মেহেন্দিগঞ্জ মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জনাব মো:সজল চৌধুরী, লস্করপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার জনাব আঃহক, পাতারহাট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জনাব মোঃশফিকুল ইসলাম, সাদেকপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ বিভিন্ন বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বক্তারা বলেন, ২৪ এর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মূল শ্লোগান ছিলো বৈষম্য দূর করা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়া পর বেসরকারি শিক্ষকদের উল্লেখযোগ্য কোনো বৈষম্য দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন নাই। তাই গত ১২ অক্টোবর থেকে এই তিন দফা (২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া, মেডিক্যাল ভাতা ১৫০০ টাকা এবং উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ) দাবি নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন অধ্যক্ষ দেলওয়ার হোসেন আজীজীর নেতৃত্বে।তারই ধারাবাহিকতায় সকল জেলা ও উপজেলা সদরে সকল শিক্ষক ও কর্মচারী দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মুখে কালো কাপড় পরিধান করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
বক্তারা বলেন, শিক্ষায় বিনিয়োগ করলে তার সুফল সবচেয়ে তাড়াতাড়ি পাওয়া যায়। তাই শিক্ষা খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা দরকার, কিন্তু সরকার শিক্ষা খাতে কম বরাদ্দ দিয়ে থাকেন।
বক্তারা আরো বলেন, এসডিজি ৪নং লক্ষ্যমাত্রা হলো মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা। কাজেই মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকল্পে প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষক। আর মানসম্মত শিক্ষক পেতে দরকার মানসম্মত বেতন-ভাতা। একজন ইবতেদায়ী স্তরের শিক্ষকের বেতন হলো মাত্র ৯৩০০ টাকা, দাখিল ও মাধ্যমিক স্তরের একজন সহকারী শিক্ষকের বেতন হলো ১২৫০০ টাকা।চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা এবং বাড়িভাড়া ১০০০ টাকা। সেখান থেকে আবার অবসর সুবিধা হিসেবে ১০%কেটে নেওয়া হয়। এনটিআরসিএ এর মাধ্যমে সুপারিশপ্রাপ্ত একজন শিক্ষক নিজ এলাকা থেকে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে চাকরি করেন। সেই শিক্ষক ১২৫০০ টাকা এবং ১০০০ টাকায় বাড়ি ভাড়ায় কীভাবে সংসার চালাবেন? অপরদিকে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে লাগে কয়েক বছর। আমরা মনে করি, বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা দেড় হাজার টাকা করা এবং উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ করার দাবি পুরোটাই শিক্ষকদের মৌলিক অধিকার এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।
স্বাধীনতার পর থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস ও শিক্ষকদের অপমান করার যে প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে, সেই পুরোনো ও অকার্যকর ব্যবস্থা ভেঙে একটা আদর্শ জাতি ও কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে নতুন শিক্ষা-ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তীতে সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা ছিল, শিক্ষা ব্যবস্থাকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সেই আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়নি; বরং আমরা দেখেছি, বিগত আওয়ামী শাসনামলের শিক্ষা অব্যবস্থাপনার ধারাবাহিকতাই এই শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের দায়িত্ব হিসেবে ধরে নিয়েছে।
আমরা বিশ্বাস করি, অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার যদি সত্যিকারে শিক্ষাবান্ধব সরকার হয়ে থাকেন, তাহলে আমাদের দাবি দ্রুত মেনে নিয়ে আমাদেরকে ক্লাসরুমে ফিরিয়ে নিবেন।
