শনিবার, জুলাই ২৬

মৃত্যুর পর দুনিয়ার জীবনের কথা কি মনে থাকবে?

মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকে বলে আলামুল গায়েব বা অদৃশ্যের জগৎ। কোরআন হাদীসের কোথাও এ জগতে গিয়ে মানুষের দুনিয়ার কথা মনে পড়ে কী না, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা নেই। তবে কিছু বিবরণ পাওয়া যায় কোরআন ও হাদিসে। আজ এ বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করবো। মৃত্যুর পরপরই কে জান্নাতি আর কে জাহান্নামি এটা স্পষ্ট হয়ে যায়। তখন থেকেই প্রত্যেকের সঙ্গে সেরকমই আচরণ করা হয়।

মানুষের মৃত্যু অবধারিত। মৃত্যুর পর দুনিয়ার কর্মকাণ্ডের হিসাব-নিকাশ অনুষ্ঠিত হবে। দুনিয়ার এসব কর্মকাণ্ডের হিসাব-নিকাশ দেখে কিয়ামতের দিন অনেক মানুষ দিশেহারা হয়ে যাবে। সে সময় আফসোস আর আক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না। সে সময়ের কিছু অবস্থার কথা কোরআনে এসেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনে বলেন,

ذَلِكَ الْيَوْمُ الْحَقُّ فَمَن شَاء اتَّخَذَ إِلَى رَبِّهِ مَآبًا – إِنَّا أَنذَرْنَاكُمْ عَذَابًا قَرِيبًا يَوْمَ يَنظُرُ الْمَرْءُ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ وَيَقُولُ الْكَافِرُ يَا لَيْتَنِي كُنتُ تُرَابًا অর্থ: এই দিবস (পরকাল) সত্য। অতঃপর যার ইচ্ছা, সে তার পালনকর্তার কাছে ঠিকানা তৈরি করুক। আমি তোমাদেরকে আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম, যেদিন মানুষ প্রত্যক্ষ করবে যা সে সামনে (মৃত্যুর আগে) পাঠিয়েছে। আর (সেদিন তা দেখে) কাফেররা বলবে- ‘হায়, আফসোস! আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম। (সুরা নাবা-৩৯-৪০)

যারা পৃথিবীতে আল্লাহর সঙ্গে অন্যকে শরিক করতো, তারা পরকালে দুনিয়ায় শিরক করার বিষয়টি স্মরণ করে বলতে থাকবে-

وَيَقُولُ يَا لَيْتَنِي لَمْ أُشْرِكْ بِرَبِّي أَحَدًا সে বলতে লাগলো- হায়, আমি যদি কাউকে আমার পালনকর্তার সাথে শরিক না করতাম। (সুরা কাহফ-৪২)

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বিশ্বাস হলো মৃত্যুর পর সবাই মুনকার-নাকিরের প্রশ্নের মুখোমুখি হবে। বারজাখের শাস্তি ও সুখভোগ করবে। চাই তাকে দাফন করা হোক বা না হোক। এমনকি তার দেহ যদি ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়, হিংস্র প্রাণী তাকে খেয়ে ফেলে, সে পুরে ভস্ম হয়ে যায়, তাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হয় অথবা ছাই বানিয়ে তার দেহাবশেষ বাতাসে উড়িয়ে দেয় বা সমুদ্রে ডুবে যায়।

যেমন নুহ (আ.)-এর সম্প্রদায় সম্পর্কে বলা হয়েছে, তাদের অপরাধের জন্য তাদের নিমজ্জিত করা হয়েছিল এবং পরে তাদের দাখিল করা হয়েছিল আগুনে। এরপর তারা কাউকে আল্লাহর মোকাবেলায় পায়নি সাহায্যকারী। (সুরা নুহ-২৫)

আলমে বারজাখে মুমিন ব্যক্তি জান্নাতের সুখ-শান্তি উপভোগ করবে এবং প্রশান্তচিত্তে ঘুমিয়ে থাকবে। হাদিসে এসেছে, মুমিনের উত্তরে সন্তুষ্ট হয়ে মুনকার-নাকির বলবে, আমরা জানতাম তুমি এ কথাই বলবে। তারপর সে ব্যক্তির কবর দৈর্ঘ্য-প্রস্থে ৭০ গজ করে প্রশস্ত করা হবে এবং তার জন্য এখানে আলোর ব্যবস্থা করা হবে। তারপর তাকে বলা হবে, তুমি ঘুমিয়ে থাকো। তখন সে বলবে, আমার পরিবার-পরিজনকে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য আমি তাদের কাছে ফিরে যেতে চাই। তারা উভয়ে বলবে, বাসরঘরের বরের মতো তুমি এখানে এমন গভীর ঘুম দাও, যাকে তার পরিবারের সবচেয়ে প্রিয়জন ছাড়া আর কোনো ব্যক্তি জাগিয়ে তুলতে পারে না। (সুনানে তিরমিজি-১০৭১)

এছাড়াও আরো কিছু আয়াতে পরকালে মানুষের আফসোস ও আহাজারির কথা উঠে এসেছে। যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে, সে বলবে, হায় আমায় যদি আমার আমল নামা না দেয়া হতো। আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব! হায়, আমার মৃত্যুই যদি শেষ হত। (সুরা হাক্বকাহ-২৫-২৭)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *