
|| শেখ শাহরিয়ার | খুলনা প্রতিনিধি ||
গত রবিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে নগরীর ৪নং ঘাট এলাকা থেকে সুশান্ত কুমার মজুমদারকে অপহরণ করে কয়েকজন ব্যক্তি। একাধিক টিম সাড়ে ৫ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে খুলনার তেরখাদা উপজেলার আজগড়া বিআরবি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় সুশান্তকে উদ্ধার করে। বর্তমানে তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ঘটনায় রাতে রূপসার সেনের বাজারের ব্যবসায়ী আলমগীর কবির ও মুসা খানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
চিকিৎসাধীন সুকান্ত কুমার মজুমদার জানান, রেজা নামের ব্যক্তি কয়েকদিন ধরে তার কাছে টাকা দাবি করছিল। অপহরণের পর প্রথমে তার কাছে ১৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। অপহরণকারীরা তাকে বেদম মারপিট করলে তিনি ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা দিতে সম্মত হন। এর মধ্যে বিকাশে ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। পুলিশের তৎপরতা দেখে অপহৃতকে ফেলে পালিয়ে যায় অপহরণকারীরা।

অভিযোগ উঠেছে, অপহরণের মূল পরিকল্পনাকারী ও প্রধান আসামিকে আড়াল করতে রূপসা উপজেলার সেনেরবাজার এলাকার নিরীহ দুই বিকাশ এজেন্টকে অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পুলিশই এজাহারে ওই দুই ব্যবসায়ীকে আসামি করতে অপহৃতের স্ত্রীকে প্ররোচিত করে। পরদিন গ্রেপ্তারের তথ্য পুলিশের পক্ষ থেকে ফলাও করে প্রচার করা হয়। এতে বিভ্রান্ত হয়ে অনেক গণমাধ্যমে নিরীহ দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণকারী হিসেবে সংবাদ প্রচার করেছে। এতে পরিকল্পনাকারী ও অপহরণ চক্রের পুরো টিমই আড়ালে চলে গেছে।
খোজ নিয়ে জানা যায়, সেনেরবাজারের ঐ দুই বিকাশ এজেন্ট আলমগীর কবির ও মুসা খান দুই জনই খুব সজ্জন মানুষ। শুধুমাত্র তাদের এজেন্ট নাম্বারে অপহরণের টাকা আসার কারণে ঐ দুই ব্যবসায়ীকে হয়রানীমূলক গ্রেফতার করা হয়েছে। সেনের বাজার ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মোল্লা জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আলমগীর ও মুসা দুজনেই খুব ভালো মানুষ। বিকাশ এজেন্টের ব্যবসায় বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা আসে। আগে থেকে বোঝার উপায় নেই, এটা বোঝার উপায় নেই কিসের টাকা। নিরীহ দুই ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারে বাজারের সবাই বিক্ষুব্ধ।’
তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সদর থানা এস আই সাইদুর রহমান দাবি করেন, অপহরণের টাকা আলমগীরের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে। মুসা খানের নাম্বারে টাকা পাঠাতে বলা হয়েছে, এজন্য তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এজেন্ট নাম্বারে অপহরণের টাকা আসলেই বা নাম্বারে দিলেই তারা অপরাধী হবেন এবং গ্রেপ্তার করতে হবে-এটা আইনসম্মত নয়।
এ বিষয়ে সুশান্তের স্ত্রী মাধবী রাণী মজুমদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশই এজাহার তৈরি করে দিয়েছে, তিনি শুধু স্বাক্ষর করেছেন। তবে পুলিশ বলছে, ভুক্তভোগী ও তার স্ত্রী মামলার এজাহার তৈরি করেছেন। রেজার ছবি নিয়ে সুশান্তের কাছে গেলে তিনি রেজাকে শনাক্ত করেন এবং এই রেজাই তার কাছে চাঁদা চেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন।
মূল পরিকল্পনাকারী ছাত্রদলের সাবেক নেতা রেজা মাহমুদ তার ফেসবুকে বিএনপি ও যুবদল নেতাদের সঙ্গে অসংখ্য ছবি রয়েছে। অবশ্য জেলা যুবদলের আহ্বায়ক ইবাদুল হক রুবায়েত বলেন, ‘রেজা একটা প্রতারক। সবার সঙ্গে ছবি তুলে ভাঙিয়ে খায়। ওর সঙ্গে যুবদলের কোনো সম্পর্ক নেই।’
রবিবার রাতে সুশান্তকে উদ্ধারে পুলিশের একাধিম টিম অংশ নেয়। তাদের এক কর্মকর্তা জানান, রাতেই রেজার পরিচয় শনাক্ত হয়। কিন্তু খুলনার পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগের আন্দোলন চলমান এর মধ্যে ছাত্রদলের সাবেক নেতাকে গ্রেপ্তার নিয়ে চাপ অনুভব করছিলেন সবাই। তারপরও তারা অভিযান অব্যাহত রাখেন। কিন্তু প্রকৃত অপহরণকারীরা পালিয়ে যায়।
কেএমপির উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, অপরাধীর পরিচয় সে অপরাধী। সকল আসামী গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
প্রধান অভিযুক্ত রেজা ঘটনার পর থেকে পলাতক। তার মোবাইল নম্বরও বন্ধ রয়েছে। এজন্য তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।