রবিবার, ডিসেম্বর ২৮

মিয়ানমারে অভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রথম নির্বাচন: গৃহযুদ্ধ ও বিতর্কের মুখে শুরু হলো ভোটগ্রহণ

|| আন্তর্জাতিক ডেস্ক ||

মিয়ানমারে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর এই প্রথম সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় সকালে দেশজুড়ে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে প্রথম ধাপের এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। খবর: আল জাজিরার।

​মিয়ানমারে ২০২১ সালের রক্তক্ষয়ী সামরিক অভ্যুত্থানের দীর্ঘ প্রায় চার বছর পর প্রথমবারের মতো সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করেছে সামরিক জান্তা সরকার। তবে দেশজুড়ে চলমান গৃহযুদ্ধ, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর বর্জন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কঠোর সমালোচনার কারণে এই ভোটের বৈধতা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

​জান্তা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনটি মোট তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ প্রথম ধাপে ১০২টি জনপদে ভোটগ্রহণ চলছে। পরবর্তী ধাপগুলো ২০২৬ সালের ১১ ও ২৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং এই নির্বাচনকে ‘গণতন্ত্রে ফেরার পথ’ হিসেবে বর্ণনা করলেও জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা দেশগুলো একে একটি ‘প্রহসন’ বলে অভিহিত করেছে।

​নির্বাচনের প্রাক্কালে বড় শহরগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ইয়াঙ্গুনসহ বড় শহরগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে থাকা রাত্রিকালীন কারফিউ সাময়িকভাবে তুলে নেওয়া হলেও গ্রামীণ জনপদগুলোতে জান্তা বাহিনীর বিমান হামলা ও সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে শান ও সাগাইংয়ের মতো বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে কোনো ভোটগ্রহণ হচ্ছে না। ৩৩০টি প্রশাসনিক অঞ্চলের মধ্যে ৫৬টি জনপদকে পুরোপুরি নির্বাচনের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।

​২০২০ সালের নির্বাচনে ভূমিধস জয় পাওয়া অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) সহ প্রধান বিরোধী দলগুলো এই নির্বাচন বর্জন করেছে। সু চি বর্তমানে বিভিন্ন অভিযোগে দীর্ঘ মেয়াদে কারাদণ্ড ভোগ করছেন এবং তার দলকে ইতোমধ্যে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে জান্তা। ফলে এবারের নির্বাচনে সামরিক বাহিনী সমর্থিত ‘ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি’ (ইউএসডিপি) বড় ধরনের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই জয়ের পথে রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

​চীন ও রাশিয়ার মতো মিত্র দেশগুলো এই নির্বাচনকে সমর্থন দিলেও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, রাজনৈতিক দমন-পীড়ন এবং লাখ লাখ মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ার এই পরিস্থিতিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এটি মূলত সামরিক শাসনের আন্তর্জাতিক বৈধতা পাওয়ার একটি চেষ্টা মাত্র।

​নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ২০২৬ সালের জানুয়ারির শেষের দিকে ঘোষণা করা হতে পারে। তবে এই ভোট মিয়ানমারের চলমান সংঘাত নিরসন করবে নাকি পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলবে, তা নিয়ে জনমনে গভীর সংশয় রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *