
|| ডা. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ খান ||
মাদক দ্রব্যের ব্যবহার বর্তমান বিশ্বের একটি ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা। মাদকাসক্তির কারণে দেশের যুবসমাজ তথা যুবশক্তি দ্রুত ধ্বংসের পথে এগিয়ে চলছে। মাদকদ্রব্য মৃত্যু ও ধ্বংস ডেকে আনে। মানুষের দৈহিক সুস্থতা, নৈতিকতা ধ্বংস করে যুব সমাজকে অধঃপতনের মুখ ঠেলে দিচ্ছে। তাই, মাদকদ্রব্য সমাজ ও জাতির জন্য বিষাক্ত বিষবাষ্প।
আমাদের দেশে প্রচলিত মাদকদ্রব্যগুলো হলো- গাঁজা, ভাঙ, আফিম, তাড়ী, মদ, ঘুমের ঔষধ, হেরোইন, বুপ্রেরনফিন, পেথিডিন, ফেনসিডিল, ইয়াবা ইত্যাদি। এই সকল মাদকদ্রব্যের প্রতি আসক্তি বা এর ওপর নির্ভরশীলতাই মাদকাসক্তি। মাদকাসক্তি এমন একটি মারাত্মক অবস্থা যেখানে ব্যবহৃত দ্রব্যের প্রতি ব্যবহারকারীর শারীরিক ও মানসিক নির্ভরশীলতার জন্ম নেয়। মাদকদ্রব্য ব্যবহারের মাত্রা দিন দিন বেড়ে যায় এবং মাদক গ্রহণ না করলে শরীরে ব্যথা, মাংসপেশীর খিঁচুনী, অস্থিরতা, বমি-বমি ভাব, সর্দি, কোষ্ঠকাঠিন্য, শ্বাসকষ্ট, মাথা ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়।
মাদক থেকে যুবসমাজের দূরে থাকার উপায়
১। ব্যক্তিজীবনে মাদকদ্রব্য গ্রহণ না করা।
২। নেশা গ্রহণকারী বন্ধুদের সাথে মেলামেশা না করা।
৩। নিয়মিত কর্মব্যস্ত থাকা।
৪। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা।
৫। অবসর সময়ে খেলাধূলা ও সুস্থ বিনোদনের চর্চা করা।
৬। ব্যক্তি জীবনে কোনো সমস্যা হলে সাথে সাথে তা অভিভাবক/ শিক্ষক/ অপরের সাথে পরামর্শ করা।
৭। জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য ধারাবাহিক পরিশ্রম করা।
৮। সততা, নিষ্ঠা ও দেশ প্রেমের সাথে জীবন-যাপন করা।
মাদকমুক্ত যুবসমাজ গঠনে আমাদের করণীয়
১। সমাজের সকল ধরনের মাদকবিরোধী অভিযানের সাথে ছাত্র ও যুবকদেরকে সম্পৃক্ত করা।
২। নিজে ধূমপান/ মাদকদ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকা।
৩। সন্তানদের দিয়ে বিড়ি/ সিগারেট ক্রয় না করা।
৪। সন্তানদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা।
৫। সন্তানদের খেলাধূলা / সাংস্কৃতিক চর্চায় উৎসাহিত করা।
৬। অবসর সময় সন্তানদের সাথে কাটান।
৭। সন্তানদেরকে ধর্মীয় মূল্যবোধ শিক্ষা দেওয়া।
৮। নিজ নিজ এলাকায় মাদক চোরাচালান, বিক্রয় ও বিতরণের ঘাটি উচ্ছেদ কার্যক্রমের সক্রিয় অংশগ্রহণ করা।
৯। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী সভা, সমাবেশ, র্যালি, রচনা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা।
১০। চিকিৎসকদের চিকিৎসাপত্র ব্যতিরেকে কোনো প্রকার নেশা জাতীয় ঔষধ বিক্রি না করা।
১১। ঔষধ বিক্রেতা কর্তৃক ক্রেতাদেরকে মাদক জাতীয় দ্রব্য ক্রয়ে নিরুৎসাহিত করা।
১২। স্থানীয় পত্রিকার মাধ্যমে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও কুফল সম্পর্কে তুলে ধরা।
১৩। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাদকবিরোধী আইন প্রয়োগে সচেষ্ট থাকা এবং মাদক সরবরাহকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা।
১৪। এনজিও প্রতিনিধিদের স্ব-স্ব এলাকায় মাদক বিরোধী প্রচার অভিযানে সংশ্লিষ্ট করা (যেমনঃ পোষ্টার, ব্যানার, র্যালি)
১৫। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মাদকের কুফল সম্পর্কে তুলে ধরা ও ধর্মীয় অনুশাসন পালনে উদ্বুদ্ধ করা।
১৬। ওয়ার্ড কমিশনারগণের নেতৃত্বে পরিবার ও এলাকার জনপ্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে মাদকাসক্তি প্রতিরোধে কমিটি গঠন করা।
১৭। গণমাধ্যমে মাদকবিরোধী প্রচারণা ও প্রতিবেদন বেশী বেশী প্রকাশ করা।
১৮। প্রত্যেক নাগরিকের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাাস্থ্য, কর্মসংস্থান ইত্যাদি রাষ্ট্র কর্তৃক নিশ্চিত করা।
১৯। সমাজে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা।
২০। অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
২১। যুবসমাজের অনুকূল সুস্থ নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা।
২২। মাদকের ব্যাপারে নিজ সিদ্ধান্তে অটল থাকা ও মাদককে সর্বদা ‘না’ বলা।
মাদক একটি সামাজিক সমস্যা। তাই সামাজিকভাবে এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে। শিক্ষক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, ডাক্তার, আইনজীবি, ব্যবসায়ী, ছাত্র সবাই এই সমাজের বাসিন্দা। প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে মাদকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে। এই ক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সকলের প্রচেষ্টায় মাদক দ্রব্যের ব্যবহার নির্মূল করার জন্যে আসুন দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই।
লেখক: ইসলামিক স্কলার ও হোমিও চিকিৎসক, ভোলা। মোবাইল: ০১৭১৬০০৫৯৮১।