
|| শেখ শাহরিয়ার | খুলনা প্রতিনিধি ||
✅ রাস্তাঘাট, গলি ও বাজার হাঁটু সমান পানিতে ডুবে যায়
✅ স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী ও অফিসগামীদের সীমাহীন ভোগান্তি
✅ ১৫০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পেও সমাধান আসেনি, উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ
মাত্র এক ঘণ্টার টানা ভারী বর্ষণে পানির নিচে তলিয়ে গেছে খুলনা শহরের রাজপথ, গলিপথ এবং বাজার এলাকা। মঙ্গলবার (১৭ জুন) সকাল ৮টার পর থেকে শুরু হওয়া একটানা বৃষ্টিতে শহরজুড়ে দেখা দেয় চরম জলাবদ্ধতা, ড্রেনেজ সিস্টেম ছিলো বিপর্যস্ত।
হাঁটু পানিতে ডুবে শহর, অচল যানবাহনঃ
রাজপথে জমে থাকা পানি হাঁটু পর্যন্ত উঠে আসে। এতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যাওয়া কর্মজীবী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অনেক অটোরিকশা, মোটরসাইকেল রাস্তায় অচল হয়ে পড়ে। ফলে গণপরিবহন চলাচল ব্যাহত হয় এবং হাজারো মানুষকে হেঁটে গন্তব্যে যেতে হয়।
জলাবদ্ধতার সবচেয়ে বেশি প্রভাব রয়েল ও পিটিআই মোড়েঃ
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে—রূপসা, লবণচরা, খানজাহান আলী, গল্লামারী, সোনাডাঙ্গা, শিববাড়ী, নিরালা, মজিদ সরণি ও দৌলতপুর এলাকার বেশিরভাগ অংশে জলাবদ্ধতা দেখা গেছে। তবে বরাবরের মতোই সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল রয়েল মোড় ও পিটিআই মোড় এলাকায়, যেখানে হাঁটু সমান পানি জমে যায়।—
এটা এবারই নতুন কিছু নয়”—নগরবাসীর ক্ষোভঃ
স্থানীয় বাসিন্দা দীলিপ কুমার বলেন, “এটা এবারই নতুন কিছু নয়। প্রতিবছর বৃষ্টির সময় খুলনার রাস্তাগুলো পানির নীচে তলিয়ে যায়। সিটি কর্পোরেশন আর শহরের নেতারা শুধু উন্নয়নের গল্প শোনায়, কিন্তু বাস্তবে কাজের কোনো অগ্রগতি নেই।”
১৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প, কিন্তু সমাধান আসেনিঃ
খুলনা সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, গত পাঁচ বছরে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির সহায়তায় ‘ড্রেনেজ উন্নয়ন প্রকল্প’, সড়ক উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা নিরসন সংক্রান্ত নানা পরিকল্পনা।
তবে বাস্তবচিত্র বলছে ভিন্ন কথা—প্রকল্পগুলো ধীরগতির, কোথাও অসম্পূর্ণ, কোথাও নিম্নমানের। নাগরিকদের অভিযোগ, প্রকল্প গ্রহণ হলেও তা বাস্তবায়নে নেই স্বচ্ছতা ও তদারকি।
নগর ব্যবস্থাপনার নীতিগত ব্যর্থতা দায়ীঃ
নাগরিক নেতা অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন,
“খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা শুধুই বৃষ্টির জন্য নয়, এটি মূলত এক পরিকল্পনাহীন নগর ব্যবস্থাপনার ফল। খাল ও ড্রেন দখল, খনন না করা, প্লাস্টিক বর্জ্যে ড্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়া, উন্নয়ন প্রকল্পের অসম্পূর্ণতা—সব মিলিয়ে এটি একটি নীতিগত ব্যর্থতা।”
দোকানপাটে পানি, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শহরবাসীঃ
আজ সকালে দেখা গেছে, স্কুলগামী শিশুরা জুতা হাতে পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। শহরের বিভিন্ন দোকানপাটে পানি ঢুকে ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে। অনেক বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় বাসিন্দারা ঘর থেকেও বের হতে পারেননি।
বৃষ্টির পানির সঙ্গে নর্দমার বর্জ্য মিশে যাওয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে বহুগুণ। অনেক এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে তীব্র দুর্গন্ধ।
দ্রুত কার্যকর উদ্যোগের দাবিঃ
সরজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায় শহরের অধিকাংশ নীচু এলাকা বৃষ্টির পানির নীচে তলিয়ে আছে। ঘ্র-বাড়ি ও গলি-রাস্তা নোংড়া পানিতে ভরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে। নগরবাসীর দাবি—শুধু প্রকল্প গ্রহণ নয়, কার্যকর বাস্তবায়ন এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণই পারে খুলনার জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে। দখলদারিত্ব, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা বন্ধে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি এখন সময়ের দাবি। নাগরিকদের কারো কারো মতে, শহরের পানি নেমে হওয়ার একমাত্র মাধ্যম রুপসা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গভীরতা আশংকাজনকভাবে কমে গেছে। ফলে বৃষ্টির পরে, শহরে জমে থাকা পানি নদীতে দ্রুত নেমে যেতে তো পারেই না, সে সময় যদি নদীতে জোয়ার থাকে তবে নদীর পানি উল্টো আরো শহরে ঢুকে পড়ে। তাই অনতিবিলম্বে নদীর তলদেশ সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে খনন করে নদীর গভীরতা বাড়ানো প্রয়োজন।