শুক্রবার, জুন ২০

মস‌জি‌দের হিন্দু-সনাতনী খা‌দেম

ফজর নামাজ প‌ড়ে ঘুমা‌নোর চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছু‌তেই ঘুম আস‌ছে না। ‌কিছুক্ষণ এপাশ-ওপাশ করে উ‌ঠে রে‌ডি হ‌য়ে বে‌ড়ি‌য়ে পড়লাম। গন্তব‌্য গেদু মিয়া মসজিদ। ত্রিপুরা রা‌জ্যে মুসলমান‌দের সব‌চে‌য়ে সুন্দর স্থাপনা। জানা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গেদু মিয়া নামের একজন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠা করেন তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এই সুন্দর মসজিদটি। কালক্রমে তার নাম অনুসারেই মসজিদটি পরিচিতি পায়। মস‌জি‌দ চত্ত‌রে পূর্ব দি‌কে তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর কবর র‌য়ে‌ছে।

আগরতলায় এ‌সে যে হো‌টে‌লে উ‌ঠে‌ছি, সেই হো‌টেল থে‌কে অল্প দূ‌রে হওয়ায় পায়ে হে‌ঁটে হে‌ঁটেই ক‌য়েক মি‌নি‌টে মস‌জি‌দে পৌঁ‌ছে যাই। মস‌জি‌দের বা‌হি‌রে দেয়াল‌দি‌য়ে ঘেরা বিশাল চত্তর। প্রধান গেট দি‌য়ে মস‌জিদ চত্ত‌রে প্র‌বেশ কর‌তেই হাফ প‌্যান্ট পড়া একজন মানুষ‌কে বাল‌তি দি‌য়ে পা‌নি নি‌য়ে যে‌তে দেখলাম। মস‌জি‌দের দরজা খোলা পে‌য়ে ভেত‌রে প্রবেশ করলাম। ভেত‌রে কেউ নেই। বা‌হি‌রে বের হ‌য়ে আবার সেই ব‌্যক্তি‌কে পা‌নি টান‌তে দেখলাম। কোথা থে‌কে এ‌সে‌ছি তি‌নি জান‌তে চাই‌লেন। অ‌নেক কথা হ‌লো। জন‌তে পারলাম, ভ‌ারত ভা‌গের সময় স্থানীয় সকল মুসলমান চ‌লে যায়। শুধু ইমাম আবুল ফজল খুদরী সা‌হে‌বের প‌রিবার র‌য়ে যায়। ক‌য়েক বছর আগে তি‌নিও ই‌ন্তেকাল ক‌রে‌ছেন। এখন তাঁর প‌রিবার ও নতুন ইমা‌মের প‌রিবার মস‌জিদের পা‌শে বসবাস কর‌ছেন। এছাড়া আশেপা‌শে কোন মুস‌লিম প‌রিবার নেই। মস‌জি‌দে ইমাম সা‌হেব একাএকা নামাজ প‌ড়েন। জ‌ুমার দিনে কিছু মুসু‌ল্লি আসেন আর দুই ঈ‌দের বি‌ভিন্ন এলাকা থে‌কে ছ‌ড়ি‌য়ে ছি‌টি‌য়ে থা‌কা মুসলমানরা ঈ‌দের নামাজ পড়তে আসেন।

আমি এতক্ষণ যার সা‌থে কথা বলছিলাম, তি‌নি সান্তানুস সাহা। সানাতন ধর্মালম্বী। তি‌নি চাপকল থে‌কে পা‌নি নি‌য়ে মস‌জিদ চত্তর ধু‌য়ে দি‌চ্ছেন। তি‌নি জানা‌লেন, এই মস‌জি‌দের পূর্ব দেয়াল ঘেষা তাঁর বা‌ড়ি। মস‌জিদ চত্ত‌রে খেলাধুলা ক‌রে তি‌নি বড় হ‌য়ে‌ছেন। পড়া‌লেখা শেষ ক‌রে চাকরী ক‌রে‌ছেন। গত বছরের শুরু‌তে অবস‌রে গি‌য়ে‌ছেন। এখন প্রতি‌দিন সকাল বেলা উ‌ঠে মস‌জিদ চত্তর ধু‌য়ে-মু‌ছে প‌রিস্কার ক‌রেন। একা‌জে তি‌নি আনন্দ পান। যত‌দিন বে‌ঁচে আছেন, এই মস‌জি‌দের সেবা কর‌তে চান তি‌নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *