বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১

ময়নাতদন্তের জন্য লাশ তুলতে দেবে না স্বজনরা, মামলার বাদী কে জানেন না নিহতের পরিবার

|| বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি ||

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট দুপুরে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার সামনে কলেজ ছাত্র শিহাব আহমেদ (২২) মাদ্রাসা শিক্ষার্থী সিয়াম হোসেন(১৯) ও তাঁত শ্রমিক ইয়াহিয়া আলী (৩৫) গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। শিহাব আহমেদ নিহতের ঘটনায় গত ২০ আগস্ট ৩৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন স্থানীয় এনায়েতপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ন আহবায়ক সোলায়মান হোসেন। সিয়াম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় গত ২১ আগস্ট এনায়েতপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ন আহবায়ক হযরত আলী বাদী হয়ে ৮৯ জনকে আসামি করে এনায়েতপুর থানায় পৃথক আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

এই মামলার বিষয়ে জানেন না নিহতের স্বজনরা। সেই সাথে কে বা কারা বাদী হয়ে এই হত্যা মামলাটি করেছে তাকেও তারা চেনেন না। এই মামলাতে যাদের আসামি করা হয়েছে তারাও এই হত্যার সাথে জড়িত নয় এমনটি দাবি করে নিহতের স্বজনদের পক্ষ হতে এই মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হচ্ছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কবর থেকে তুলতে দেওয়া হবে না বলেও পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

নিহত শিহাব আহমেদের মা শাহনাজ পারভীন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে সেজন্য আমরা পুরো পরিবার চরমভাবে কষ্ট পাচ্ছি। এ জন্য মামলা দিয়ে কোনো নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি আমরা করতে চাই না। কে মামলা দিয়েছে তাঁকে আমরা চিনি না। আমরা কাউকে মামলা দেওয়ার অনুমতি দেইনি। আমরা কার বিরুদ্ধে মামলা করবো, যে পুলিশের গুলিতে আমার সন্তান নিহত হয়েছে সে পুলিশ জনরোষের শিকার হয়েছে। আল্লাহ তাদের বিচার করেছেন। আমরা এ বিচার আর চাই না।

শিহাবের বৃদ্ধ দাদী সাহিদা বেগম (৬০) বলেন, আমার সোনার টুকরো নাতি ভাই কত যত্ন করে বড় করছিলাম। এইভাবে জীবন দিতে হবে কেউ কখনো চিন্তাও করে নাই। ভাগ্যের লিখন, এখন কবরে সে শান্তিতে থাকুক এটাই আমরা কামনা করি। সাহিদা বেগম আরও বলেন, শুনলাম কারা নাকি এই হত্যার ব্যাপারে নিরপরাধ ভালো মানুষের নামে মামলা দিয়েছে। আমরা এই মামলা চাই না। পুলিশ আসছিল ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে লাশ তুলতে চায়। আমরা কোনো অবস্থাতেই এই লাশ তুলতে দিব না।

শিহাবের দাদা সিদ্দিক মিয়া বলেন, বিএনপির নেতৃবৃন্দ আমাদের বাড়িতে এসেছিল। আমরা তাদের এই মামলা তুলে নিতে বলেছি। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

নিহত কলেজ শিক্ষার্থী শিহাব আহমেদ সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার মাধবপুর গ্রামের শাহনাজ পারভীন ও প্রবাসী শফি মিয়া দম্পতির বড় ছেলে। সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলো। সম্প্রতি এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে সেখানে জিপিএ-৪ দশমিক ০৮ পেয়েছে শিহাব। বিএনসিসি ক্যাডেটসহ গ্রামে নানা সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে তার সস্পৃক্ততা ছিল। আন্দোলনের কারণে পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার ছুটিতে বাড়িতে এসে এলাকায় বন্ধুদের সাথে সেদিন আন্দোলনে অংশ নিয়ে এনায়েতপুর থানা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয় শিহাব। পরে তার সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। স্বজনেরা খবর পেয়ে প্রতিকৃল অবস্থায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাঁর মরদেহটি গ্রামের বাড়িতে নিয়ে স্থানীয় আজুগড়া কবরস্থানে দাফন করেন।

অপর দিকে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী সিয়াম হোসেন বেলকুচি উপজেলার গোপরেখী গ্রামের লাকী বেগম ও আবদুল কুদ্দুস দম্পতির ছেলে। স্থানীয় মাদ্রাসা থেকে কোরআনের হাফেজ হয়ে মওলানা হওয়ার আশায় সেখানেই আবারও পড়ালেখা শুরু করেছিলেন সিয়াম। পাশাপাশি স্থানীয় বেতিল বাজার এলাকায় নজরুল মুছা জামে মসজিদে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করতেন। এলাকায় বন্ধুদের সাথে সেদিনের আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। প্রতিকূল অবস্থায় তাকেও ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্থানীয় আজুগড়া কবরস্থানে নিহত শিহাবের কবরের পাশে দাফন করা হয়।

নিহত সিয়াম হোসেনের মা লাকী বেগম বলেন, আমার ছেলে কোরআনের হাফেজ ছিল। সে শহীদ হয়েছে। কারা এই হত্যাকাণ্ড করেছে আমরা তাদের দেখিনি। এখন ভালো লোকের নামে মামলা দিয়ে তাদের অভিশাপ নিতে চাই না। যারা মামলা দিয়েছে তাদের এই মামলা তুলে নিতে হবে। তা না হলে আমার ছেলের লাশ যদি জোর করে কবর থেকে তুলতে আসে তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করবো।

সিয়ামের বাবা আবদুল কুদ্দুস বলেন, সিয়ামের সহপাঠীদের কাছে শুনেছি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। ওই দিনের ঘটনায় ১৫ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। এখন নিরীহ মানুষকে আসামি করে আমরা মামলা দিতে চাই না। আমরা কাউকে মামলা দিতে বলিও নাই। কে মামলা দিয়েছে তাও জানি না। এখন পুলিশ তদন্তের জন্য লাশ কবর থেকে তুলতে চায় আমরা লাশ তুলতে দেব না। পুলিশকে বলেছি দয়া করে আমাদের কষ্ট আর দীর্ঘায়িত করবেন না।

একই সাথে তাঁত শ্রমিক ইয়াহিয়া আলী নিহতের ঘটনায় গত ২১ আগস্ট নিহত ইয়াহিয়া আলীর স্ত্রী শাহানা খাতুন বাদী হয়ে ৮৬ জনের নামে একটি হত্যার মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলাটি দায়ের করতে ইচ্ছুক ছিলাম না। বিএনপি দলীয় লোকজন এসে আমাদের পুরো পরিবার ও সংসারের দায়িত্ব নেন। তারপর তারা আমার কাছে থেকে একটা সই নেন তারপর সবার মুখে মুখে শুনতে পারি তারা এই সই দিয়ে থানায় এজাহার দিয়েছে মামলার বিষয় আমি কছিুই জানি না। এ মামলা দায়ের করলেও সেখানে কাদের আসামি করা হয়েছে সে বিষয়ে জানেন না মামলার বাদী শাহানা খাতুন । একই সাথে ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলনের বিষয়েও আপত্তি জানিয়েছেন তিনি।

নিহত ইয়াহিয়ার বড় ভাই খোকন আলম বলেন, আমার ভাই কোনো দলের সক্রিয় নেতা বা কর্মী ছিল না। এই মামলার এজাহার তৈরীতে এনায়েতপুর থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মঞ্জুর রহমান ও খুকনি ইউনিয়ন বিএনপির নেতা নজরুল ইসলাম সহযোগিতা করেছেন। আমার ভাই হত্যার বিচার চাই। তবে কোনো নিরীহ নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করতে চাই না।

নিহত তাঁত শ্রমিক ইয়াহিয়া আলী শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি ঝাউপাড়া গ্রামের চামেলি খাতুন ও শাহজাহান আলী দম্পতির ছেলে। গ্রামেই একটি তাঁত কারখানায় তাঁত শ্রমিকের কাজ করতেন ইয়াহিয়া। আন্দোলন চলাকালে এলাকায় বন্ধুদের সাথে সেদিনের মিছিলে অংশ নিয়ে একই সময় গুলিবিদ্ধ হন ইয়াহিয়া আলী। বন্ধুরা তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা পৌনে একটার দিকে তার মৃত্যু হয়। প্রতিকৃল অবস্থায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার মরদেহটিও গ্রামের আটার দাগ কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এ তিনটি হত্যার ঘটনায় পৃথক তিনটি হত্যা মামলায় ২০৯ জনকে নামিয় আসামি করা হয়েছে। এবং প্রতিটি মামলাতেই ৫-৭০০ জনকে অজ্ঞাত হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে। নামিয় আসামিদের তালিকায় অন্তত ২০-২৫ জন ব্যবসায়ীর রয়েছেন।

মামলার এজাহারগুলো প্রত্যক্ষ করে দেখা যায়, প্রতিটি মামলায় সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মমিন, তাঁর ছোট ভাই আবদুল আলিম মন্ডল, তার চাচাতে ভাই জুবায়ের মন্ডল,বেলকুচি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম, চৌহালী উপজেলা আওয়মীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিন, বেলকুচি পৌরসভার সাবেক মেয়র সাজ্জাদুল হক, শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র মনির আক্তার, সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনের পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেন, বেলকুচি উপজেলার তামাই গ্রামের তিন ব্যবসায়ী ফজলার রহমান তালুকদার, শেখ শামীম ও আবু হেনাকে আসামি করা হয়েছে।

মামলায় নামিয় অন্য আসামিদের মধ্যে এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহম্মদ মোস্তফা খান বাচ্চু, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি রাশেদুল ইসলাম, এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী , চৌহালী উপজেলার সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, বেলকুচি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রকি সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, চৌহালী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বাবুল আক্তার ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুর রহমান চুন্নু, স্থল ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ, ধুকুরিয়া বেড়া ইউপি চেয়ারম্যান হেলাল প্রামানিক, ভাঙ্গাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম, খাস কাউলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ, সদিয় চাঁদপুর ইউপি চেয়রম্যান জাহাঙ্গীর আলম, কৈজুরীর সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের নাম রয়েছে।

এই তিনটি মামলাতেই সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনের পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেনকে ১৪ নম্বর আসামি করা হয়েছ। বেলকুচি উপজেলার তিনজন ব্যবসায়ীর নাম পাশাপাশি একই সিরিয়ালে যুক্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোনের পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ১৯৭৭ সালে আমরা ঢাকায় চলে আসি। ১৯৮২ সনে আমাদের এনায়েতপুর থানার বেতিল গ্রামের বাড়িটি যমুনা নদীতে ভেঙে যায় তখন থেকেই দেশে আমাদের কোনো বাড়ি নেই। গোপালপুরে আমাদের বংশধরদের সাথে একটি ঠিকানা আছে, কিন্তু কোনো ঘরবাড়ি করা হয়নি কিংবা আমাদের কেউই সেখানে থাকেনি। সেই ঠিকানায় আমাকে আসামি করা হয়েছে। কোনো অবস্থাতেই আমি বুঝতে পারছি না কেন আমার নামটা দিল বা আমার অপরাধটাই বা কি? অনেক বছর হলো আমার প্রথাগত রাজনীতির সাথে কোনরকম সম্পৃক্ততা নেই।

বেলকুচি উপজেলার তামাই গ্রামের তাঁত ব্যবসায়ী শামীম শেখ বলেন, আমি ছোট বেলা থেকে কখনও কোনো দিন রাজনীতি করিনি। সবসময় বাবার সাথে ব্যবসা নিয়েই থেকেছি। বাবার মৃত্যুর পরেও এই তাঁতের লুঙ্গি উৎপাদন করাই আমার ব্যবসা। এখন শুনছি এই হত্যা মামলায় আমার নাম দেওয়া হয়েছে। এটা কোন ধরনের কথা।

এসব বিষয়ে এনায়েতপুর থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মঞ্জুর রহমান বলেন, দুইটা হত্যা মামলা পরিবারের অনুমতি নিয়েই দলীয় নেতৃবৃন্দ দায়ের করেছন। অপর একটি আমাদের খুকনিতে ইয়াহিয়া হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। আমরা সহযোগীতা করেছি। তবে এই মামলাগুলোতে যারাই আসামি হয়েছেন, তাঁরা সবাই কোনো না কোনোভাবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই হত্যার সাথে জড়িত বলেই তাঁরা আসামি হয়েছেন। লাশ উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, এখন এটি পরিবারের কোনো বিষয় নয়। আদালতের নির্দেশে প্রশাসন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।

এনায়েতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন ইয়াজদানী বলেন, মামলার পর এনায়েতপুর আমলি আদালতের বিচারক তিনটি মামলাতেই একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এ জন্য একই সাথে ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত করতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সে অনুযায়ী জেলা প্রশাসক ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত করেছেন। এখন আমরা নিহতের পরিবার ও ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে যোগাযোগ করছি। শীঘ্রই একটি দিন ক্ষণ নির্ধারিত করে লাশগুলো উত্তোলনের ব্যবস্থা করা হবে।

মাধবপুর গ্রামের নিহত শিক্ষার্থী শিহাব আহমেদের বাড়িতে গিয়ে মা, দাদা ও স্বজনদের সাথে কথা হয়। এক পর্যায়ে শিহাবের দাদা কবর দেখাতে সঙ্গে করে আজুগড়া কবরস্থানে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি দুটি কবরে নিহত শিহাব আহমেদ ও সিয়াম হোসেনকে কবরস্থ করা হয়েছে। পাশের গ্রাম গোপরেখীতে সিয়াম হোসেনের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার মা, বাবা ও স্বজনদের সাথে। গ্রামের একটি উচু টিনের ঘরে থাকেন তাঁর মা ও বাবা। সাংবাদিক এসেছেন খবর পেয়ে ঘরের বারান্দায় চেয়ার পেতে বসতে দেন। ঘরের ভেতর আড়াল থেকে সিয়ামের মা বলেন, ছেলে মারা গেছে সাড়ে ৩ মাস হয়েছে। এর মধ্যে মামলার যন্ত্রণা ও উৎপাতে পড়েছেন। কোনো অবস্থাতেই তিনি লাশ কবর থেকে তুলতে দেবেন না। এ জন্য যা করা দরকার। যেখানে যাওয়া প্রয়োজন তিনি জাবেন। সেখান থেকে পাশ্ববর্তী খুকনি ঝাউপাড়া গ্রামে নিহত ইয়াহিয়ার ভাঙা টিনের ঘরের সামনে উঠানে বসে কথা হয় স্ত্রী, বাবা, ভাইসহ স্বজনদের সাথে। তারা বলেন, মামলাগুলো করলো কে? তাই তো জানি না। আর ময়নাতদন্তের জন্য লাশ তুলতে দেবো না আমরা।

এ দিকে কলেজ শিক্ষার্থী শিহাব আহমেদ হত্যা মামলার বাদী সোলায়মান হোসেন এনায়েতপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কমিটির ১নম্বর সদস্য। বাদী সোলায়মান হোসেন বলেন, শিহাবের বাবা মালয়েশিয়াতে থাকেন তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে ও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে আমার দলীয় লোকজনের কথা হয়েছে। সে অনুযায়ী মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। এখন কোনো চাপে পরে পরিবারের পক্ষ হতে এলোমেলো বলতেই পারেন। শিহাবের পরিবারের পক্ষ হতে বিএনপি নেতৃবৃন্দকে বলা হয়েছে এই মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। দ্রুত মামলা তুলে না নিলে বাদীর নামেই মামলা দেওয়া হবে । এই প্রশ্নের জবাবে সোলায়মান হোসেন বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু শুনি নাই। ৪ আগস্ট হত্যার ঘটনায় কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে এমনটি আমার জানা নেই। আসল কথা হচ্ছে এই হত্যার বিচার হতে হবে।

মাদ্রাসা শিক্ষার্থী সিয়াম হোসেন হত্যা মামলার বাদী এনায়েতপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ন আহ্বায়ক হযরত আলী বলেন, মামলা দেওয়ার আগে সিয়াম হোসেনের পরিবারের সঙ্গে দলীয়ভাবে কয়েক জন তাদের বাড়িতে গিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী সিয়ামের বড় ভাইকে এই মামলার ১ নম্বর ও বাবাকে ২ নম্বর স্বাক্ষি করা হয়েছে। এখন তাঁরা কী কারণে বিষয়টি অস্বীকার করছেন আমি বুঝতে পারছি না। আমরা মামলা না দিলেও কোনো না কোনোভাবে এই হত্যার মামলা হতোই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *