বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১

মওলানা আব্দুর রহিম র. ও আজকের আলেমসমাজ

মওলানা আব্দুর রহিম র. পিরোজপুরের কাউখালীর কৃতি সন্তান। তিনি দেশের খ্যাতিমান আলিম, ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক, চিন্তক বাগ্মী পার্লামেন্টেরিয়ান, শতাব্দীর সেরা ব্যক্তিত্ব।

শুধু আলিয়া মাদ্রাসায় পড়ে কুরআন হাদিস ছাড়াও আল-কুরআনে বিজ্ঞান, দর্শন, রাষ্ট্র, রাজনীতি, সমাজ, জাতি, পরিবারতন্ত্র বিষয়ে তার মধ্যে জ্ঞানের যে পরিস্ফুটন ঘটে, সাধারণত অন্য কোনো আলেমের মধ্যে তা পরিলক্ষিত হয় না।

তিনি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন না। ছিলেন না শিক্ষার্থী। অথচ তার অনেক গ্রন্থই আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে রেফারেন্স/পাঠ্যগ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

মিডিয়ার যুগে আমরা ফেসবুক, পেপার-পত্রিকা, অনলাইনে দেশের অনেক আলেম, আল্লামা, মুফতি, মুফাসসির, পীর, শায়েখ, মাশায়েখ- এরকম বহু অভিধায় অভিহিত প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের চেহারার সাথে তাদের নাম, যশ, খ্যাতি, গুণাবলী দেখতে পাই।

কিন্তু এদের কারো একজনেরও একক বা সম্মিলিতভাবে জ্ঞানের ক্ষেত্রে এমন কোনো গ্রন্থ নেই যেটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয় বা গবেষণা করানো হয়, একমাত্র মওলানা আব্দুর রহিমের গ্রন্থ ছাড়া।

তার সম্পর্কে আমার যা দুই এক হরফ পড়াশুনা, তাতে এই কথা স্পষ্টভাবে আমি বলতে পারি যে, বর্তমানে দেশের আলেমদের ইসলামী শিক্ষাক্ষেত্রে যে অবদান আছে তার সবগুলো একত্র করলেও মওলানা আব্দুর রহিমের আল কুরআনে রাষ্ট্র ও সরকার, আল কুরআনের আলোকে উন্নত জীবনের আদর্শ, আল কুরআনে শিরক ও তাওহীদ, আল কুরআনে ইতিহাস দর্শন, হাদিস সংকলনের ইতিহাস, হাদীস শরীফ, সুন্নত ও বেদআত, পরিবার ও পারিবারিক জীবন, ইসলামী অর্থনীতি (বাংলা ও আরবি) ইসলামে জিহাদ, হাদীস সংকলনের ইতিহাস, ইসলামে হালাল হারামের বিধান, যাকাত বিধান, সৃষ্টিতত্ত্ব ইত্যাদি যেকোনো একটি বইয়ের সমান হবে না। আমার কথায় অনেক আল্লামাই মনে কষ্ট পাবেন। কিন্তু বাস্তব সত্যটা দেখুন-

দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়- যেমন ঢাকা, রাজশাহী ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে তার জীবন, কর্ম, দর্শন, সাহিত্য, শিক্ষা ও ইসলামিক ক্ষেত্রে অবদান নিয়ে একটি দুটি নয় আটটি (৮) এমফিল-পিএইচডি ডিগ্রি হয়েছে।

আরো ১৫ বছর আগে মওলানা আব্দুর রহিম সংশ্লিষ্ট একটি সেমিনারে আমি ছোট্ট একজন অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাই। আমার বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলি,
তার শিক্ষা দর্শন সংক্রান্ত অত্যন্ত জরুরী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আরো সাতটি পিএইচডি ডিগ্রি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে হতে পারে।

কিন্তু এখন দেখি না শুধু সাতটা নয় সাত দ্বিগুনে চৌদ্দটি বা ততোধিক পিএইচডি ডিগ্রি হতে পারে তার জীবনের বিভিন্ন দিক ভাগ নিয়ে।

আমরা আল্লামা শুধু মুখে মুখে বুলিতে বক্তৃতায় কাজে নয়। খালি পেটে খোশ গল্প করা যায়, অলীক কিচ্ছা কাহিনী গল্প বলা যায়; কিন্তু জ্ঞানসমৃদ্ধ কোনো গ্রন্থ রচনা করা যায় না।

আমি এ শতাব্দীতে আর একজন মওলানা আব্দুর রহিম দেখতে চাই, যিনি তাকে অতিক্রম করেছেন, সেটা মুখে বা বুলিতে নয়। প্রকৃতপক্ষে, এমন একজন আলেম যিনি তার জ্ঞান প্রজ্ঞা রচনাবলী দিয়ে দেশ জাতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *