বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ৯

ভূরুঙ্গামারীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক বিরোধে উত্তেজনা

|| কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ||

কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়জুড়ে তীব্র বিতর্ক ও চাপা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগপত্র ও তদন্ত প্রতিবেদনে একপক্ষীয়তা এবং লিখিত জবাব সংযুক্ত না করার অভিযোগ উঠেছে, যা নিয়ে শিক্ষক, অভিভাবক ও সচেতন মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা গেছে, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোছাঃ রোকসানা আক্তার এবং তার স্বামী জয়মনিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ মজিবর রহমান অভিযোগ করেন যে, সহকারী শিক্ষক মোছাঃ জেসমিন আরা বেগম বিদ্যালয়ে নানা অনিয়ম ও অসদাচরণে লিপ্ত। তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বিদ্যালয়ে অস্বস্তি ও বিশৃঙ্খলার পরিবেশ তৈরি করেছেন।

অন্যদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক মোছাঃ জেসমিন আরা বেগম এসব অভিযোগকে “মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক” আখ্যা দিয়ে বলেন, “আমাকে সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও মানসিকভাবে হেয় করার উদ্দেশ্যে এই অভিযোগ আনা হয়েছে। রোকসানা আক্তার, তার স্বামী মজিবর রহমান এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোশাররফ হোসেন বদলির ভয় দেখিয়ে আমাকে ফাঁসিয়েছে।”

তিনি অভিযোগ করেন, তদন্ত কর্মকর্তা উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোবাশের আলী তার দাখিলকৃত লিখিত জবাবপত্র সংযুক্ত না করে একতরফাভাবে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। “এতে আমি চরমভাবে হয়রানির শিকার হয়েছি। আমি এই মনগড়া প্রতিবেদন প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি,” যোগ করেন তিনি।

তদন্ত কর্মকর্তা মোবাশের আলী স্বীকার করেছেন যে অভিযুক্তের লিখিত জবাবপত্র তিনি গ্রহণ করেছেন, তবে তা প্রতিবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়নি। তিনি দাবি করেন, নোটিশ প্রদানের দায়িত্ব প্রধান শিক্ষককে জানানো হয়েছিল। কিন্তু অভিযুক্ত শিক্ষক জানান, তাকে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আকতারুজ্জামান বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করা হয়েছে এবং প্রতিবেদন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়েছে। তবে অভিযুক্তের লিখিত জবাব সংযুক্ত না করার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি তখন ছুটিতে ছিলাম, ফলে এ বিষয়ে সঠিকভাবে অবগত নই।”

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শ্রী স্বপন কুমার রায় চৌধুরী জানান, “তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সংশোধনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সংশোধিত প্রতিবেদনেও লিখিত জবাবপত্র সংযুক্ত করা হয়নি। এজন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে শো-কজ করা হবে।”

অভিযুক্ত শিক্ষকের স্বামী মোঃ আজিজুল হক অভিযোগ করেন, অভিযোগকারীরা পূর্ববর্তী সরকারের আমলে শিক্ষা অফিসে প্রভাব খাটিয়ে বদলি ও পদোন্নতি বাণিজ্য করেছে। এ বিষয়ে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে গত ১৪ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

এদিকে স্থানীয় অভিভাবকদের অভিযোগ, তদন্তে উভয় পক্ষের বক্তব্য যাচাই না করে প্রতিবেদন দিলে শিক্ষাঙ্গনে বিভাজন ও অস্থিরতা বাড়বে। তারা নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের দাবি জানিয়েছেন।

বর্তমানে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্ট মহলের প্রত্যাশা, দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এ বিরোধের অবসান ঘটানো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *