
|| শেখ শাহরিয়ার | খুলনা প্রতিনিধি ||
মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে খুলনা মহানগরের বিভিন্ন এলাকা, যার ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। গতকাল (১৭ জুন) ভোর থেকে একটানা অথবা থেমে থেমে আজ দুপুর ১ টা পর্যন্ত হওয়া বৃষ্টিতে শহরের প্রধান সড়কসহ বেশির ভাগ সড়কই পানির নিচে। তলিয়ে গেছে মানুষের বসত বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বিরামহীন বৃষ্টির কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় অফিসগামী মানুষদের। ভোগান্তিতে পরেন পথচারীরাও।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে কাঙ্খিত যানবাহনের জন্য। নগরীর রয়েল মোড়, বাইতিপাড়া সড়ক, সাতরাস্তা, বড় মির্জাপুর, টুটপাড়া এলাকায় নীচু সড়ক তলিয়ে গেছে, সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। সড়ক তলিয়ে যাওয়ার কারণে যানবাহন নিয়ে দুর্ভোগে পড়ে চালকরা। অনেক গাড়ির ইঞ্জিনে পানি প্রবেশ করায় বিকল হয়েছে। অনেক গাড়ি ঠেলে নিয়েও যেতে দেখা যায়। ফুটপাত দিয়েও অনেককে হালকা যানবাহন চালাতে দেখা যায়। পর্যাপ্ত যানবাহন পাওয়াও যাচ্ছে না আর যদিও পাওয়া যায় ভাড়া অনেক বেশী চাওয়ায় বিপাকে পড়েছে মানুষ।
খানজাহান আলী সড়কের বাসিন্দা মামুন বলেন, ভোর থেকে অঝোর ধারায় বৃষ্টির কারণে রয়্যালের মোড়, টুটপাড়ার বেশিরভাগ সড়কে পানি জমে গেছে। যে কারণে চলাচল করতে খুবই ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
মৌলভী পাড়ার বাসিন্দা রেহেনা খাতুন বলেন, বৃষ্টিতে সড়কে পানি জমে গেছে, এর কারণে মেয়েকে নিয়ে কোচিংয়ে যেতে পারিনি। টুটপাড়া জোড়াকলের বাসিন্দা সুনিলা দাস বলেন, শহরের ড্রেনগুলি বন্ধ হয়ে আছে। খুলনা শহরের বৃষ্টির পানি পাম্প দ্বারা রূপসা ও ভৈরব নদীতে ফেলে এই দূর্ভোগ কমাতে হবে।
মিয়াপড়া এলাকার বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার রফিক সাহেব বলেন, শহরের পানি নিষ্কাষিত হয়ে কিছু অংশ ভৈরব ও বেশিরভাগ অংশই রুপসা নদীতে যেয়ে পড়ে। ভৈরব নদীই কাষ্টমঘাট এলাকায় এসে রুপসা নাম ধারন করেছে, এখন ভৈরব বলেন আর রুপসা বলেন এই নদীর তলদেশ পলিতে ভরে নদীর গভীরতা কমে গেছে। ফলে শহরের ভিতরের বর্ষার অতিরিক্ত পানি এখন আর নদী ধারন করতে পারে না, ফলে জোয়ারের সময় পানি নদীতে নামার বদলে উল্টো শহরে পানি প্রবেশ করে। তাই অতি দ্রুত সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নদীর তলদেশের পলি ড্রেজিং করে অপসারন করা প্রয়োজন।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘন্টায় খুলনায় ৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে, যা এ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। আজ সারাদিনই বৃষ্টিপাত অব্যহত থাকবে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় থাকায় এমন বৃষ্টিপাত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
গত কয়েক বছর ধরেই বৃষ্টির সময় শহর জুড়ে জলাবদ্ধতা তৈরী হয়, কেসিসি জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় গত ছয় বছরে ১০৪টি ড্রেন পুনঃনির্মাণ করেছে। ময়ূর নদসহ সাতটি খাল পুনরায় খনন ও ৩২টি ড্রেনের সংস্কার ও নতুন করে নির্মাণ শেষের পথে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা। এ বিপুল অর্থব্যয়ের পরও নগরের জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এ বিষয়ে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রৌকশলী মোঃ মশিউজ্জামান খানের সাথে আলাপকালে জানান, ‘ড্রেনেজ ব্যবস্থায় কিছু সমস্যা এখনো আছে, সব ড্রেনের কাজ পুরাপুরি এখনো শেষ হয়নি, এটা খুব শিঘ্রই শেষ হবে, আর তারপরে জলবদ্ধতা কমে যাবে বলে আশা করা যায়’।