সোমবার, অক্টোবর ২৭

বেলকুচি পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের অবৈধ সংযোগের ছড়াছড়ি : বৈধরা ক্ষতিগ্রস্ত

|| আল-আমিন হোসেন | জেলা (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি ||

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পল্লী বিদ্যুতের শতাধিক অবৈধ সংযোগে বৈধ গ্রাহকেরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এর মধ্যে ৬টি অবৈধ সেচপাম্প সংযোগ রয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের কাগজপত্র সঠিক থাকা সত্ত্বেও আমরা সেচপাম্পের সংযোগ পাই না। অথচ অবৈধ লাইসেন্সকারীরা পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাদের মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়ে সংযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। এতে আমরা সাধারণ গ্রাহক ভোগান্তির শিকার হচ্ছি।

এদিকে, সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর বেলকুচি জোনাল অফিসের (ডিজিএম) ছানোয়ার হোসেন দাবী করেন, তার এলাকায় কোনো অবৈধ সংযোগ নেই। এমনকি ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ও তিনি অস্বীকার করেছেন।

বেলকুচি পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের অবৈধ সংযোগের ছড়াছড়ি : বৈধরা ক্ষতিগ্রস্ত

রবিবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, আমাদের উপজেলার কয়েকটি গ্রামে পল্লী বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ নিয়ে ঘরের কাজ, অটোরিকশা চার্জ ও সেচপাম্প চালাচ্ছেন। এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ সব অবৈধ সংযোগ বন্ধ করা হলে আমাদের এলাকায় অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।

এ বিষয়ে খামার উল্লাপাড়া গ্রামের বৈধ লাইসেন্সধারী কৃষকেরা বেলকুচি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কার্যালয়ে অভিযোগ করেন। এ অভিযোগের পর বেলকুচি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম ছানোয়ার হোসেন অবৈধ লাইনের বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এরপর এই অবৈধ লাইনের বিষয়ে তদন্তে মাঠে নামেন বেলকুচি উপজেলার তামাই-সাব-জোনাল অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার জসিম উদ্দিন। তদন্তে ৬টি বিদ্যুতের লাইনে অবৈধ লাইসেন্সে সংযোগ পাওয়ার সত্যতা পান তিনি। অবৈধ লাইসেন্সের এসব বিষয়ে জড়িত ছিলেন, বেলকুচি উপজেলার সহকারী জেনারেল ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম ও মাঠ পরিদর্শক আহসান হাবিব। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ওই সব অবৈধ লাইনের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বাচিয়ে দেন। পল্লী বিদ্যুতের অসাধু এই কর্মকর্তাদের কারণে কোন সমাধান পাচ্ছে না সাধারণ গ্রাহকেরা।

২০২৩ সালের অবৈধ সংযোগকারীরা হলেন, বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়া বেড়া ইউনিয়নের খামার গ্রামের সাঈদ আকন্দের ছেলে চয়ন মিয়া (মিটার নং-৭৩৫৮৩৫), খামার উল্লাপাড়া গ্রামের মৃত আজাহার আকন্দের ছেলে আব্দুল কাদের আকন্দ (মিটার নং-৭৩৫৮৪৫), একই গ্রামের মৃত জোনাব আলীর ছেলে ছবেদ আলী (মিটার নং-৭৩৫৮২৫), নুর বক্সের ছেলে আশরাফুল হোসেন (মিটার নং-৭৩৬৫৫৫), ইসমাইল সরদারের ছেলে শহিদুল সরদার জয়নাল (মিটার নং-৭৩৮৩৮৫) ও সড়াতৈল গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে আয়নাল হোসেন (মিটার নং-৭৩৮৩৫৫)।

বেলকুচি উপজেলার খামার উল্লাপাড়া গ্রামের আলতাব শেখ বলেন, ধুকুরিয়া বেড়া ইউনিয়নের ৬টি সেচপাম্প চালানোর কোন অনুমোতি নেই। তারা সেচপাম্পগুলো চালাচ্ছেন সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে। শুধু তাই নয় অবৈধভাবে বাণিজ্যিক কাজেও বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে। এসকল বিষয় যেন পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কারও চোখেই পরছে না।

ভুক্তভোগী ময়নাল উদ্দিন বলেন, বেলকুচি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজগে অবৈধ লাইসেন্সের মাধ্যমে লাইনগুলো চলছে। এসব অবৈধ লাইন দিয়ে রিতিমত চলছে তাদের সকল কার্যক্রম। অটোরিকশা চার্জসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হচ্ছে অবৈধ লাইন।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাঁশ ও সিমেন্টের খুঁটি দিয়ে বৈদ্যুতিক তার টানিয়ে সেচপাম্প বসানো হয়েছে। এতে যে কোনো সময় বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই গ্রামে অবৈধভাবে বসানো হয়েছে কয়েকটি সেচপাম্প। কিন্তু কৃষকের বৈধ সেচপাম্প থাকা সত্ত্বেও অবৈধ সেচপাম্পের কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বৈধ সেচ পাম্পের মালিকরা। তার পরেও পল্লী বিদ্যুৎ অফিস অবৈধ সংযোগের বিষয়ে কোন প্রকার ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

তামাই-সাব-জোনাল অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার ও তদন্ত কমিটির সদস্য জসিম উদ্দিন বলেন, প্রায় ৭ মাস আগে অবৈধ সংযোগের বিষয়ে মাঠে গিয়ে তদন্ত করে ৬টি সেচপাম্পের সংযোগ অবৈধ প্রমাণিত হয়। পরে সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অফিসে তদন্তের রিপোর্টগুলো জমা দেওয়া হয়। আমি আর এর বেশি কিছু বলতে পারবো না।

বেলকুচি জোনাল অফিসের ডিজিএম ছানোয়ার হোসেন বলেন, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে আমার সাথে কারও কোনো কথা হয়নি। আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। বলে মোবাইল ফোন কেটে দেন।

সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার আবু আশরাফ মোঃ ছালেহ্ বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *