শুক্রবার, নভেম্বর ১৪

বিশ্ব রাজনীতি, নির্বাচন ও বাংলাদেশের অর্থনীতি : ভাবনার সময় এখনই

দেশ এখন নির্বাচনী ট্রেনে। নির্বাচন নিয়ে আর কোনো কথা নয়। নির্বাচন এখন জনগণ প্রত্যাশা করে। ঘোষিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে— সেটি এখন সকলের প্রত্যাশা। একটি দেশের জন্য নির্বাচন অনেক গুরুত্ব বহন করে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছু নির্ভর করে নির্বাচনের উপর। দেশ এগিয়ে যাক— এটি আমার মতো সকলের প্রত্যাশা। আমার মতো কোটি কোটি নাগরিক তাকিয়ে রয়েছে নির্বাচনের দিকে। অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার জন্য রাজনীতিবিদদের ভূমিকা কিন্তু কম নয়।

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরসহ মোংলা বন্দর লিজ বা ইজারা দেওয়ার কথা উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে। জানামতে, চট্টগ্রাম বন্দর একটি লাভজনক বন্দর— এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। মোংলা বন্দরের প্রতিও বিদেশিদের আগ্রহ কম নয়। লাভজনক বন্দরটি ঘিরে বিদেশিদের আগ্রহ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বন্দরগুলো বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া সাধারণ জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বন্দরকে ঘিরে যারা জীবন-জীবিকা চালাচ্ছেন, তাদের স্বার্থও বিবেচনা করা জরুরি। তাই বিষয়টি রাজনৈতিক নেতাদের হাতে সোপর্দ করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। নির্বাচিত সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে— কী করা যায় তা নির্ধারণ করবে।

একটু বহির্বিশ্বের দিকে মনোযোগ দেওয়া যাক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এশিয়া সফরের মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্ব ও এশিয়ার মধ্যে একটি নতুন সম্পর্ক তৈরি হতে চলেছে। পশ্চিমা বিশ্ব বুঝতে পেরেছে— এশিয়া যদি হাতছাড়া হয় বা সুসম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পেরেছে, তার শুল্কনীতি অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে গিয়ে নিজের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চীনের সঙ্গে যে বাণিজ্য বিরোধ রয়েছে, মনে হয় এই এশিয়া সফরের মাধ্যমে তা নিরসন হতে চলেছে। বাণিজ্য বিরোধ মিটলে চীনের উৎপাদিত পণ্য মার্কিন বাজারে প্রবেশ করতে পারবে। চীনের পোশাক শিল্প মার্কিন বাজারে প্রবেশ করলে আমাদের পোশাক শিল্পের ওপর প্রতিযোগিতার চাপ কেমন হবে, তা ভাবতে হবে। ভাবনার জায়গা থেকে বলতে গেলে প্রতিযোগিতা তীব্র হবে।

ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আবারো গভীরতার দিকে এগোচ্ছে। যদি শুল্ক কমানো হয় ভারতের জন্য, তাহলে পরিস্থিতি আরও পরিবর্তিত হবে। প্রতিযোগিতা বাড়বে, কমবে না। আমাদের বন্দর যদি বিদেশি দেশের হাতে পরিচালনার জন্য দেওয়া হয়, তাহলে রপ্তানীর ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উৎপাদন ও রপ্তানি ব্যয় যদি বেশি হয়, তাহলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কতটা সম্ভব, তা ভাবতে হবে।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ওপর অনেকের জীবন-জীবিকা নির্ভর করছে। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে অনেক মানুষ, যা আমাদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রেখেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে সকল আয়োজনে কর্মকাণ্ড চলবে। দিনের শেষে, বাংলাদেশ আমার দেশ। এ দেশের মাটি আমার। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা কতটুকু সক্ষম, সেটিও ভাবতে হবে।

কয়েকদিন আগে আমরা দেখেছি হযরত শাহজালাল (রাঃ) বিমানবন্দরের ভয়াবহ দুর্ঘটনা। সিভিল এভিয়েশনের নিয়ম নীতির আগে মানবিকতার কথা বিবেচনা করে আমাদের যাত্রীবাহী বিমানকে নেতাজি বিমানবন্দর, কোলকাতায় নিরাপদে অবতরণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এটি কোন কূটনীতির সাথে তুলনা করা যায়? এটি বন্ধুত্বপূর্ণ কূটনীতি ছাড়া আর কিছু নয়। মানবতা ও মানবিকতা শব্দ দুটি বাস্তবে কঠিন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাণিজ্যিক শক্তিশালীকরণের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোঝাপড়া যদি ভালো হয়, তবে আমাদের অর্থনীতির জন্য কতটুকু সুখবর বয়ে আনবে, সেটি ভাবতে হবে। আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হলে বৈশ্বিক রাজনীতিতে ভারত, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ককে শক্তিশালী করতে হবে। মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে কূটনৈতিক কার্যক্রম বাড়াতে পারলেই হয়ত বিশ্ব বাজারে টিকে থাকা যাবে, অন্যথায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মার্কিন—চীন বাণিজ্য বৈরিতা আমাদের কিছু সুবিধা দিতে পারলেও তা সুদূরপ্রসারিত নয়। রপ্তানি ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিযোগি দেশের সংখ্যা কম নয়। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে মার্কিন আলাপও আমাদের জন্য কঠিন অবস্থার সৃষ্টি করেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন হবে। এই অবস্থার উত্তরণের জন্য আমাদের কৌশলী হতে হবে।

ট্রাম্প তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে লড়াইয়ের পথে যাচ্ছেন। সমস্যা সমাধানে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে। বিকল্পভাবে সামনে এগোতে হবে, তবেই মুক্তি আসতে পারে। রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই, কূটনীতিতেও সমাপ্তি শব্দ নেই। বিশ্ব রাজনীতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। আমাদেরও প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে। আমরা অনেকটা আটকে গেছি বা আটকে যেতে বাধ্য হচ্ছি। যাই হোক, মানিয়ে নিতে হবে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে। সমস্ত কিছুকে স্বীকার করে পথ চলতে হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার আরোপিত শুল্ক নীতি থেকে অনেকটা সরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন, নিজের অসিস্তার রক্ষার স্বার্থে। বিশ্ব রাজনীতির কথা বিবেচনা করে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি চিনফিং আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক নীতি বা অতিরিক্ত শুল্ক প্রয়োগের বিষয়টি অনেকটা হলেও গলতে শুরু করেছে। ভারত, রাশিয়া, চীন অনেকটা একসাথে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে, যার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও ভাবতে হচ্ছে।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি ও মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালের প্রচেষ্টায় তালেবান সরকারের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তালেবান পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সফর এবং ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও ভাবিয়ে তুলেছে। আফগানিস্তানের বাগমার বিমান ঘাঁটির বিষয়টি নিয়ে হুমকি সত্ত্বেও ভারতের সঙ্গে আলোচনা আফগানিস্তানের জন্য সুখকর। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, আফগানিস্তানের অখণ্ডতার ক্ষেত্রে ভারত সার্বিক সহযোগিতা করবে। এটি ভারত—আফগান সম্পর্ককে সুদৃঢ় করবে। আফগানিস্তানের প্রতি ভারতের সমর্থন তালেবান সরকারকে শক্তিশালী করেছে। রাশিয়াও তালেবান সরকার প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সমর্থন দিয়ে আসছে।

ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার হয়েছে। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র ১০ বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ভারতের যৌথ কার্যক্রম আফগানিস্তানের প্রেক্ষাপটেও কার্যকর। চীন ও ভারতের সঙ্গে মার্কিন শুল্কনীতির সম্পর্কও আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নমনীয়তা আমাদের জন্য সুখবর বয়ে আনতে পারে। দেশের অর্থনীতি রক্ষা করতে হলে অবশ্যই বাণিজ্য করতে হবে। বিদেশী বিনিয়োগ না থাকলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

চীন ও ভারতের উৎপাদিত পণ্য মার্কিন বাজারে ঢুকলে আমাদের পণ্যও প্রতিযোগিতায় প্রবেশ করতে হবে। ইতিমধ্যেই বিজিএমই জানিয়েছে— দেশের ২৫৮টি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এটি অর্থনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ। বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে না চললে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাবিথ আউয়াল বলেছেন, ভারতীয় ফুটবল দল বাংলাদেশে আগমনে আতিথেয়তায় কোনো কমতি দিতে আগ্রহী নয়। এটি শুভ লক্ষণ। আতিথেয়তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে চাই। সম্পর্ক হোক বন্ধুত্বের। রাজনীতি ও কূটনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। আমরা চাই সুসম্পর্ক। নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার আসবে, প্রত্যাশা থাকবে— সেই প্রত্যাশা পূরণে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। আমরা যদি একত্রিতভাবে এগিয়ে যাই, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *