|| প্রফেসর ড. মো: ময়নুল হক, ইবি, কুষ্টিয়া ||
তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ ডিগ্রির বেশি ও ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত সেলসিয়াসকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রাকে বলা হয় তীব্র তাপপ্রবাহ। এর বেশি হলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। ২০২৩ইং পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। এ বছর গত ২৬ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪২.৭ ডিগ্রিতে, সেই চুয়াডাঙ্গায়।
অব্যাহত তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশগত ও সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে- এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-ঝড়, বন্যা, খরা, তাপপ্রবাহ এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়া, জীববৈচিত্র্য হ্রাস এবং অনেক প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল হুমকীতে পড়ে যাওয়া, পানিবাহিত রোগ, খাদ্য ঘাটতি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা।
তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ ইংরেজিতে Heat Wave একটি আবহাওয়া সংক্রান্ত শব্দগুচ্ছ যা দ্বারা বায়ুর অতিরিক্ত উষ্ণ অবস্থা নির্দেশ করা হয়। প্রতিটি প্রাণীর মতো মানবদেহ একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সচল থাকে। সাধারণত ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলো এর গণ্ডি। এর ব্যতায় হলে দেহ অচল হয়ে পড়ে, এমন কী মৃত্যুও ঘটে যেতে পারে। গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহের বাড়ন্ত খড়তাপে আমরা প্রতিনিয়ত দাহ্য হই এটাই তাপদাহ। এই তাপদাহের যেমন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে ঠিক তেমনি এর কুরআন-হাদীস লব্ধ জ্ঞানেরও একটা ব্যাখ্যা আছে যাকে আমরা বলার চেষ্টা করছি পাপদাহ।
প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য বৃক্ষরাজি জীবজন্তু ও অন্যান্য জীবকোষের পারস্পরিক যোগাযোগ, নির্ভরশীলতা ও প্রয়োজনীয়তাকে ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্র বলা হয়ে থাকে। কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যের সাথে খাপ খাইয়ে যে সকল জীব টিকে ও বংশবৃদ্ধি করে সেই জীবগোষ্ঠী এবং তার পরিবেশের অজীব উপাদানসমূহ মিলে যে সিস্টেম তৈরি হয় তাকে বলা হয় ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্র। এই ইকোলোজীক্যাল ব্যালান্স রক্ষা করার দায়িত্বটি ছিল মানুষের কিন্তু মনুষ্য সৃষ্ট বিপর্যয় ইকোসিস্টেমকে করে তুলেছে ভারসাম্যহীন। আল্লাহ যখন এ পৃথিবী সৃষ্টি করেন, তখন নির্দিষ্ট পরিমাণ বিভিন্ন উপাদান ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যাবলী দিয়েই তাকে তৈরী করেছেন, যাতে ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণশীল জীবজন্তু ও মনুষ্য জীবন প্রণালী সুস্থ ও সুন্দরভাবে, সাবলীল গতিতে পরিচালিত হতে পারে। আল্লাহ তা’আলা বলেন: প্রত্যেক বস্তুই তিনি পরিমিত সৃষ্টি করেছেন। (সূরা-আল-ফুরকান-০২)। কিন্তু যথেচ্ছ ও অপরিকল্পিত ব্যবহার পরিমিত বস্তু সামগ্রীর ভারসাম্য বিঘ্নিত করে সৃষ্টি করছে পরিবেশ বিপর্যয়। এছাড়া মানুষ তার পাপাচারী লাইফ স্টাইল দ্বারাও ডেকে আনছে প্রাকৃতিক নানা বিপর্যয় যা পৃথিবীকে বাসযোগ্য থাকতে দিচ্ছে না। আল্লাহ তা’আলা বলেন: জলে ও স্থলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরাহ-আর-রূম-৪১)।
কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিভংগীতে জনপদের অধিবাসীরা যখন অত্যাচারী যালিম রূপে আত্মপ্রকাশ করে, দেশের বিত্তশালীরা যখন পাপাচারে লিপ্ত হয়, শাসক শ্রেণি যখন অযোগ্য ও চরিত্রহীন হয়ে পড়ে, মদ্যপান ও দেহ ব্যবসা যখন প্রকাশ্যে চলতে থাকে, বাদ্যযন্ত্র ও নাচ-গাণের প্রসার যখন ঘটে, ছেলে সন্তান যখন পিতামাতার অবাধ্যতা শুরু করে, দেশ ও জাতির শৃংখলা রক্ষার দায়িত্ব যখন অর্থলোভী, দুশ্চরিত্র, অভদ্র লোকদের হাতে ন্যস্ত হয়, শাসকশ্রেণি যখন রাষ্ট্রীয় কোষাগারকে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করে, আল্লাহ প্রদত্ত জীবন-বিধানকে অনুসরণ না করে নিজেদের খেয়াল খুশিমত যখন চলতে থাকে, তখন আল্লাহর আযাব এ পৃথিবীতে নেমে আসে। বন্যা, খরা, সাইক্লোন, ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস, অতিবৃষ্টি, তাপদাহ, নানাবিধ রোগ-বালাই এসব দ্বারা মনুষ্য প্রজাতিকে আল্লাহ সতর্ক করেন এবং তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল দেন যাতে তারা তওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসে। এটাকেই আমরা পাপদাহ বলে থাকি। পাপদাহ থেকে বাঁচার পথও আল্লাহ বাতলে দিয়েছেন: ‘আমি তাদেরকে বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন।’ (সূরা নুহ : ১০-১১)। তিনি আরো বলেন, ‘তারা যদি সঠিক পথের ওপর অটল থাকে, তাহলে অবশ্যই আমি তাদেরকে প্রচুর বৃষ্টি প্রদান করব।’ (সূরা জিন-১৬)।
তাপদাহ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর রাসূল সা. ইস্তেগফার করেছেন, সালাতুল ইস্তেস্কা আদায় করেছেন এবং আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি মানুষ ও পশু-পাখী, গাছপালার জন্য শান্তি বয়ে এনেছে। সজীবতা দিয়েছে ইকোসিস্টেমকে।
প্রশ্ন হলো আমরা বিবেক বর্জিত পন্থায় আল্লাহ প্রদত্ত প্রাকৃতিক পরিবেশের বিপর্যয় ঘটাচ্ছি, তাওবাহ, ইস্তেগফার কী সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে দিবে? আমাদেরকে ভাবতে হবে আমাদের কৃতকর্ম থেকে কীভাবে আমরা তাওবাহ তথা ফিরে আসতে পারি। আর সেটাই হবে প্রকৃত অর্থে তাওবাহ।
বৈজ্ঞানিকভাবেই পৃথিবীতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে মানুষের কিছু কার্যকলাপ। যেমন-গ্রিনহাউজ গ্যাস নি:সরণ। এ গ্যাসগুলো বায়ুমণ্ডলে তাপ আটকে রাখে, যার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়; এগুলো উৎপাদিত হয়: জীবাশ্ম জ্বালানি দহন, ইটের ভাটায় সৃষ্ট ধোঁয়া, বন উজাড়, গাছপালা কমতির ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে; কৃষি ক্ষেতে সার ব্যবহারের ফলে নাইট্রাস অক্সাইড নির্গত হয়, শিল্প কারখানার ধোঁয়া ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তৈরী হয় মিথেন গ্যাস, বিদ্যুৎ উৎপাদনে কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত হয়, যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া, জলবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নির্গত বাষ্প, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নির্গত তাপ, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও জলাশয় ভরাট করে উন্নয়ন, কিছু প্রাকৃতিক বিষয়-সৌর ক্রিয়াকলাপ, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, বরফ গলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, জলবায়ুর পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি দহন এবং বন উজাড় হলো পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারণ।
জিএইচজিস্যাট-এর স্টিফেন জারমেইন জানিয়েছেন, গত ১৭ এপ্রিল, ২০২৪ইং তাদের হুগো স্যাটেলাইট দেখিয়েছে যে, এই মুহূর্তে রাজধানী ঢাকার মাতুয়াইল ময়লার ভাগাড় থেকে প্রতি ঘণ্টায় ৪ হাজার কেজি মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়ে বায়ুমণ্ডলে মিশে যাচ্ছে, যা এক লাখ ৯০ হাজার গাড়ির বায়ুদূষণের সমান দূষণ। আল্লাহ রক্ষা করুন।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা মোকাবিলায় মানুষকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস-নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস ব্যবহার বৃদ্ধি, জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি এবং যানবাহনের ব্যবহার হ্রাস; বনায়ন-গাছপালা বৃদ্ধি করে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড দ্রুত শোষণ করার ব্যবস্থা করা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, বিদ্যুৎচালিত গণপরিবহণ বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব ভবন নির্মাণ করতে হবে। তাহলে হয়তো কিছুটা সহনীয় তাপমাত্রা মিলবে।
উন্নয়নের নামে আমরা যা করছি, তা পরিবেশের কতটা ক্ষতি সাধন করছে সেটা নিয়ে আগেই ভেবে দেখা প্রয়োজন। আগামী প্রজন্মের জন্য অঢেল আর্থিক সম্পদ রেখে যাওয়াই টেকসই উন্নয়ন নয়, বরং উন্নয়নের সাথে রেখে যেতে হবে মান সম্মত খাবার পানি, বিশুদ্ধ বায়ু, যাতে আগামী প্রজন্ম সুস্থ পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়। উন্নয়নের সাথে আমরা যদি এক স্তুপ আবর্জনা রেখে যাই তবে এর মূল্য দিতে হবে আগামী প্রজন্মকেই। ফিলিপ ফ্লাড বলেন: Sustainable development is not just about economic growth it is about improving the quality of life for people and communities, that requires attention to ecological sustainability.(BIISS Journal, Vol. 16, 1995, P. 37-38) অর্থাৎ টেকসই উন্নয়ন মানে শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নয়, এটি মানুষ এবং সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা, যার জন্য পরিবেশগত স্থায়িত্বের দিকে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
বিগত দুই দশকে বাংলাদেশে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা কমেছে ৬ লাখ একর। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ২৮ বছরে ঢাকা থেকে ২৪ বর্গকিলোমিটারের সম-আয়তনের জলাধার এবং ১০ বর্গকিলোমিটারের সমপরিমাণ সবুজ কমে গেছে। এখন জেলা-উপজেলা পর্যায়েও পুকুর বা জলাধার ভরাট করে পরিকল্পনাহীন ভবন নির্মাণ চলছে। নগরগুলোতে পরিকল্পিত ভবন নির্মাণ এবং তৎসংলগ্ন এলাকাগুলোয় ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ করা প্রয়োজন।
রাসূল সা. বলেছেন: যখনই কোন মুসলিম গাছ লাগায় বা শস্য বপন করে এবং এ থেকে মানুষ, পাখি বা পশু তাদের আহার্য গ্রহণ করে, তখন এটা তার (রোপনকারীর) পক্ষে একটা সাদকাহ হিসেবে পরিগণিত হয়। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং-২১৫২, সহহিু লে-মুসলিম, হাদীস নং-২৯০৪)।
রাসূল সা. আরো বলেছেন: যদি তোমাদের কেউ কিয়ামত সংঘঠিত হতে দেখে, আর এমতাবস্থায় তার হাতে কোন গাছের চারা থাকে, তাহলে সে যেনো সে চারাটি রোপন করে। (সহীহুল বুখারী, হাদীস নং-৪৭৯, মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং-১২৯০২)।
দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত গাছপালার ভূমিকা অনস্বীকার্য। রাসূল সা. এর উপলব্ধিতে তা পরিস্ফুটিত হয়েছে। গাছপালা আমাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, ঔষুধ হিসেবেই শুধু কাজে লাগে না, আমাদের জীবন ধারণের জন্য বিশুদ্ধ অক্সিজেন সরবরাহ করেই সে ক্ষ্যান্ত হয় না, বায়ুমণ্ডলের ক্ষতিকর কার্বনডাই অক্সাইড গ্যাসকে শোষণ করে তাপমাত্রাকে সহনীয় পর্যায় রাখতেও অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছে। আমরা যদি আমাদের দেশের জন্য ২৫% ভূমি বনায়ন ও সবুজায়ন করতে পারি, তাহলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা যেমন বেড়ে যাবে তেমনি তাপমাত্রাও কমে আসবে। বৃক্ষরোপেনের মতো সাদাকায়ে জারিয়ার কাজে আমাদের সবাইর এগিয়ে আসা উচিত।
আল্লাহ তা’আলা বৃষ্টির পানি তৈরীর প্রসঙ্গে বলেন: তোমরা যে পানি পান কর সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছো কী? তোমরা তা মেঘ থেকে নামিয়ে আন, না আমি বর্ষণ করি? আমি ইচ্ছা করলে তাকে লোনা করে দিতে পারি। অত;পর তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না। (সূরা ওযাকিয়া-৬৮-৭০)।
এখানে আল্লাহ তা’আলা তাঁর কারিগরি কৌশল তুলে ধরেছেন যাকে অমরা পানি চক্র বলে থাকি। নদ-নদী, খাল বিল, সমুদ্রের পানিকে বাষ্পাকারে আল্লাহ তুলে নেন আকাশে, তারপর মেঘমালা তৈরী করে বাতাসকে ব্যবহার করে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেন এবং প্রয়োজন মাফিক তা বর্ষণ করে সিক্ত করেন ভূমিকে। বৃষ্টির পানি মাটি চুয়ে মাটির অভ্যন্তরে তৈরী করে জলাধার, আর কিছু নদ-নদী, ঝর্ণা বাহিত হয়ে আবার গিয়ে সমুদ্রে মিশে। আল্লাহ তা’আলা সমুদ্রের লোনা পানিকে মিষ্ট পানিতে পরিণত করে বৃষ্টি বর্ষণ করেন- কী অদ্ভূত কারিগরী কৌশল! আবার আল্লাহ চাইলে মাটির অভ্যন্তরে সংরক্ষিত পানির লেয়ার মানুষের নাগালের বাইরেও নিয়ে যেতে পারেন। আল্লাহ বলেন: বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছো কী? যদি তোামাদের পানি ভূ-গর্ভের গভীরে চলে যায়, তবে কে তোমাদেরকে সরবরাহ করবে পানির স্রোতধারা। (সূরা মূলক-৩০)।
এখন আমাদের ভাববার বিষয় আমরাতো নদ-নদী খাল-বিল জলাশয় সব ভরাট করে বিশাল বিশাল অট্টালিকা নির্মাণ করে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিলাম, পানি বাষ্পীভূত হবে কোত্থেকে? শুধুই সমুদ্র? সেটাও কী আমরা আস্ত রেখেছি? ওকে তো কল-কারখানার বর্জ্য ডাম্পিং করে সমুদ্র জীববৈচিত্রের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছি এবং পানিকে দূষিত করে এসিড বৃষ্টি তৈরীর ব্যবস্থা করেছি। আল্লাহ তো আমাদের কৃতকর্মের ফল অবশ্যই ভোগ করাবেন। আমরা যদি আমাদের অপরিনামদর্শী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত না হই তাহলে তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে একদিন হয়তো বাংলাদেশের মতো সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের দেশগুলো হারিয়ে যাবে সমুদ্রের পানির নীচে। তারপর শত বছর পর কেউ হয়তো আবিস্কার করবে এখানে একদিন জনপদ ছিল, শত হাজারো অট্টালিকায় তারা বাস করতো যা এখন পানির নীচে। আল্লাহ আমাদেরকে বাঁচার মতো পরিবেশ সংরক্ষণে ও উন্নয়নে ভূমিকা রেখে যাবার তৌফিক দান করুন, যাতে আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে পারি।
**** “ইসলামের আলোকে পরিবেশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে পড়তে পারেন আমার লেখা নিম্নোক্ত বইটি (ড. মো: ময়নুল হক, ইসলাম: পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, তৃতীয় সংস্করণ, ২০১৮ইং, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা)।”
লেখক: অন্যতম জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান, আল-হাদীস এণ্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ।