বৃহস্পতিবার, মার্চ ১৩

বানারীপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট: প্রশাসনের নিরব ভূমিকা

|| আছিবুল ইসলাম | বানারীপাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি ||

বানারীপাড়া ৫০শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, যেটি কিছুকাল আগেও মাতৃ-প্রসূতি সেবায় জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার অর্জন করেছে, অথচ বর্তমানে সেখানে অ্যানেস্থেসিয়া ও গাইনী চিকিৎসক না থাকায় প্রসূতি সেবায় মারাত্মক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে দারিদ্র্যপীড়িত রোগীরা প্রতিনিয়ত অমানবিক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

গত বছরের নভেম্বর মাসে, অ্যানেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আমিনুর রহমান ও ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে জুনিয়র গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. ইসরাত শারমিন বদলি হয়ে যাওয়ার পর থেকে প্রায় ৫ মাস ধরে হাসপাতালটিতে সিজারিয়ান অপারেশনসহ বড় ধরণের সার্জিক্যাল চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার মানুষ। বিগত এক বছরে, বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১১৩ জন প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন এবং ৬৩১ জনের নরমাল ডেলিভারী হয়েছে, যা এই হাসপাতালে একসময়ের সাফল্যকে তুলে ধরে। তবে চিকিৎসক সংকটের কারণে বর্তমানে বহু রোগী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যেসব দরিদ্র রোগীরাই এই হাসপাতালে সেবা নিতে আসেন, তারা বিশেষত চরম বিপদে পড়ছেন। ফলে নারীদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ক্রমেই হুমকির মুখে পড়ছে।

প্রসঙ্গত, বানারীপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যানেস্থেসিয়া ও গাইনী চিকিৎসকের অভাব সত্যিই স্থানীয় জনগণের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দুই গুরুত্বপূর্ণ পদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে, বিশেষ করে অস্ত্রোপচার বা জরুরি গাইনী সমস্যা দেখা দিলে রোগীদের জন্য বড় ধরনের ভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। চিকিৎসক না থাকায়, অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন প্রাইভেট ক্লিনিকের স্বরনাপন্ন হতে। ফলে দরিদ্র রোগীরা আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই শূন্যপদ দ্রুত পূরণ করার জন্য কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, যাতে এলাকার জনগণ চিকিৎসা সেবা পায় এবং তাদের স্বাস্থ্যের সমস্যা দ্রুত সমাধান হতে পারে।

এ পরিস্থিতিতে প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ। দীর্ঘদিনের এই চিকিৎসক সংকট নিয়ে এখনও পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সিভিল সার্জন। হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়োগের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং অবহেলা অনেকটা পরিষ্কার। অথচ, এ ধরণের অবস্থা আরও দীর্ঘস্থায়ী হলে, ভবিষ্যতে গুরুতর স্বাস্থ্য বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে, যা আরও অনেক মানুষের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এই সংকটের কারণে দারিদ্র্যপীড়িত রোগীরা কীভাবে নিজেদের চিকিৎসা নিশ্চিত করবেন, তা একটি বড় প্রশ্ন। তাদের কাছে রোগমুক্তির জন্য কোনো সুযোগ নেই, অথচ চিকিৎসার অভাবে জীবন সংকটে পড়ছে।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ভুক্তভোগী রোগীরা জানান, ‘প্রশাসনের উচিত দ্রুত এই চিকিৎসক সংকট সমাধান করা, যাতে বানারীপাড়া হাসপাতালটিতে সঠিক ও সময়মতো স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা সম্ভব হয়। স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে জড়িত সকল দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষকে এই পরিস্থিতি নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায়, দরিদ্র জনগণের ওপর স্বাস্থ্য সেবার ব্যাপক সংকট আরও গভীর হয়ে পড়বে, যা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিতে পারে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *