
|| মো. আছিবুল ইসলাম | বানারীপাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি ||
একটা সময় ছিল, যখন খেজুরবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে বুকভরা আশা নিয়ে বসতি গড়েছিলেন ৩১টি পরিবার। নদীভাঙনে নিঃস্ব হওয়া মানুষগুলো এখানে এসে নতুনভাবে জীবন শুরু করেছিলেন। কিন্তু আজ সেই ঘরেই তালা। তাদের ঠাঁই এখন খোলা আকাশের নিচে।
স্থানীয় ইউএনও মো. বাইজিদুর রহমান জানান, ঘরগুলোর দখলে থাকা পরিবারগুলোর কোনো বৈধ মালিকানা দলিল নেই। তবে বাসিন্দারা দাবি করেছেন, ঘর বরাদ্দ পাওয়ার সময় তৎকালীন ইউএনও ও চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরসহ একটি লিখিত অনুমতিপত্র পেয়েছিলেন, যা তারা মালিকানা প্রমাণ হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, প্রশাসন বলছে, ‘দলিল নেই’, তাই অবৈধ। কিন্তু যে অনুমতিপত্র আমরা দেখাচ্ছি, সেটা তো কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরিত। যদি সেটা ভুল হয়, তবে দায় কাদের? এ ঘটনার ছয় মাস পার হলেও হয়নি আমাের কোনো পুনর্বাসন। অথচ প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি ছিল, যাচাই করে পুনর্বাসন করা হবে। আজও সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি। আশ্রয়ণের নামে মানুষকে আশাহীন করে ফেলা কোনোভাবেই উন্নয়ন নয়। বরং এটা মানবিকতা আর প্রশাসনিক দায়িত্ববোধের ব্যর্থতা।’
২০২৩ সালে বরিশালের বানারীপাড়াকে সরকারিভাবে ‘ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত’ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটা ঘটেছে। ২০২৪ সালের শেষ দিনে উপজেলা প্রশাসন কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই খেজুরবাড়ি আশ্রয়ণে তালাবদ্ধ করে দেয় ৩১টি ঘর।
এইসব পরিবার এখন ঘরের সামনের ফাঁকা জায়গায় খড়ের ছাপড়া তুলে কোনোমতে বেঁচে আছে। শিশুদের স্কুল ছুটে গেছে, রোগীদের ওষুধ নেই, ভিজে খাবারেই চলছে সংসার।
প্রশাসন পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিলেও গত ছয় মাসেও কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে যে, ‘দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না’— এই ঘোষণার বাস্তবায়ন কোথায়?