|| মো. নুরুল হুদা ||
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের পর ১৯৭২ সালে প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধান বর্জন-সংশোধন কিংবা নতুন সংবিধান প্রণয়ন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মাঝে প্রস্তাবিত সংবিধানের মূলনীতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। সেখানে ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূলনীতি এবং পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালের সংশোধিত মূলনীতির পরিবর্তে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্রের কথা বলা হয়েছে। এ প্রস্তাবিত সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি বহুত্ববাদ সম্পর্কে বিশেষভাবে আলোচনা-সমালোচনা শুনা যায়। তাই এ বিষয়ে স্বল্প পরিসরে আলোচনার প্রয়াস চালাচ্ছি।
বহুত্ববাদ এর স্বরূপ:
বহুত্ববাদ (Pluralism) হলো এমন একটি দার্শনিক ধারণা বা নীতি, যা সমাজে বিভিন্ন সংস্কৃতি, ধর্ম, জাতি, ভাষা, বিশ্বাস, বা মতাদর্শের সহাবস্থান এবং সমান মর্যাদাকে সমর্থন করে। এটি বৈচিত্র্যের প্রতি সহনশীলতা, গ্রহণযোগ্যতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ওপর জোর দেয়।
বহুত্ববাদের মূল ধারণা:
১. বৈচিত্র্যের স্বীকৃতি: সমাজে বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের পার্থক্য থাকা স্বাভাবিক এবং ইতিবাচক।
২. সমান অধিকার: সবাইকে সমান সুযোগ এবং অধিকার দিতে হবে, কোনো বৈষম্য থাকবে না।
৩. পারস্পরিক সহযোগিতা: বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সহযোগিতা ও সংলাপ প্রতিষ্ঠা করা।
৪. সাম্প্রদায়িক সহনশীলতা: বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করবে।
উদাহরণ:
একটি বহুত্ববাদী সমাজে, মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ এবং অন্যান্য ধর্মের মানুষ একসঙ্গে শান্তিতে বসবাস করতে পারে।
বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষ নিজেদের পরিচয় বজায় রেখেও একই রাষ্ট্রে কাজ করতে পারে।
গুরুত্ব:
বহুত্ববাদ সমাজে সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার, এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে দৃঢ় করে, যেখানে কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠতার চাপে নিজস্ব পরিচয় হারায় না।
এখন কথা হচ্ছে, শতকরা ৯০ ভাগ সংখ্যাগরিষ্ট জনগণের ধর্ম ইসলাম নাম সর্বস্ব শান্তির ধর্ম! মহান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম, সংবিধানের শুরুতে বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম বাদ বাংলাদেশ কি আদর্শ কল্যাণ রাষ্ট্র হবে? আবার ইসলামকে মুছে দিলেই কি বাংলাদেশে শান্তি ফিরে আসবে? তা যদি না হয় সুনীতির চর্চা না করে নাম-সাইনবোর্ড পাল্টিয়ে কি লাভ?
মোট কথা, সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে হলে জন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে। আদর্শের চর্চা করতে হবে। রাষ্ট্র সুনাগরিক দ্বারা পরিচালিত না হলে এবং জনগণকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে না তুলে বিভাজন টিকিয়ে রাখলে শান্তি আশা করা কঠিন।
লেখক: কবি ও সাহিত্যিক এবং লেখক ও গবেষক, ঢাকা।