শুক্রবার, জুলাই ২৫

বড়াইবাড়ী দিবস ১৮ এপ্রিলকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবি

|| নিজস্ব প্রতিবেদক ||

২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল কুড়িগ্রামের বড়াইবাড়ীতে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বিজয়কে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘১৮ এপ্রিল ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বড়াইবাড়ী দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবিতে’ আয়োজিত এক সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের জেষ্ঠ যুগ্ম-আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন।

সমাবেশে ১৮ এপ্রিলকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘জাতীয় প্রতিরোধ দিবস’, শহীদ তিন বিডিআর সদস্যকে বীর শ্রেষ্ঠ ও যুদ্ধে অংশ নেয়া সামরিক-বেসামরিক নাগরিকদের মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে দলটি।

সমাবেশে বড়াইবাড়ী যুদ্ধকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে সরকারের কাছে বিস্তারিত প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে বড়াইবাড়ীতে শহীদ তিন বিডিআর ল্যান্স নায়েক মো: ওয়াহিদুজ্জামান, সিপাহি মাহফুজুর রহমান ও সিপাহি আবদুল কাদেরকে বীরশ্রেষ্ঠ; যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বিডিআর সিও শাহরুখ জামানকে বীর প্রতীক; প্রতিরোধের অগ্রনায়ক বড়াইবাড়ীর ডা. সাইফুল ইসলাম লাল মিয়া ও প্রথম সংবাদদাতা মো. মিনহাজ আলীকে জাতীয় বীর ঘোষণা করার প্রস্তাব করা হয়।

সমাবেশে বক্তৃতা করেন বড়াইবাড়ী যুদ্ধে সাধারণ জনগণকে নেতৃত্বদানকারী ডা. সাইফুল ইসলাম লাল মিয়া।

তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএসএফ পদুয়ায় যখন বিডিআরের সঙ্গে হেরে যায়, তখন প্রতিশোধ নিতে বড়াইবাড়ীতে হামলা চালায়। সেদিন ক্যাম্পে ছিলেন মাত্র নয়জন বিডিআর সদস্য। বিপরীতে ৫৫০ জন বিএসএফ সদস্য হামলা চালায়। সেদিন তাদের আমরা গ্রামবাসী সাহায্য করেছি। গ্রামের প্রতিটি মানুষ দেশপ্রেম থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। একাত্তরের মতো সেদিনও আমরা যুদ্ধ করেছি।

লাল মিয়া অভিযোগ করেন, এত বড় একটি ঘটনা বিগত কোনো সরকার বিস্তারিতভাবে মিডিয়ার সামনে আনেনি। এখন আমাদের দাবি এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে অবশ্যই স্বীকৃতি দিতে হবে। এছাড়াও ভারতীয় আগ্রাসন মোকাবেলায় বর্তমানে ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী প্রতিটি গ্রামের মানুষকে রাইফেল ট্রেনিং দিতে হবে।

সমাবেশে বড়াইবাড়ীতে বিএসএফ অনুপ্রবেশের প্রথম সংবাদদাতা মিনহাজ আলী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, সেদিন ভোর ৫টায় দেখি ভারতের বিএসএফ আমাদের গ্রামে ঢুকে পড়েছে। তাৎক্ষণিক বিডিআরকে সেটা জানাই। এর কিছুক্ষণ পর আমাদের গ্রামে যুদ্ধ শুরু হয়। আমি তখন বিডিআরের সঙ্গে ছিলাম। এলাকার মানুষও ছিল।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ১৮ এপ্রিল একটা ঐতিহাসিক দিবস। সেদিন অনেক সাহসিকতার সঙ্গে বিডিআর আর গ্রামবাসী মোকাবিলা করেন, অথচ সেটা আমরা ভুলে গেছি। প্রতিনিয়ত বিএসএস আমাদের ভাইদের গুলি করে, অথচ ভারত সঙ্গে থাকা অন্য দেশের সীমান্তে গুলি চালায় না। সেখানে কোনো হত্যাকাণ্ড নেই। আমাদের নির্বিচারে গুলি করেছিল শুধু আমাদের নতজানু সরকারের কারণে।

তিনি বলেন, ভারত শুধু একটি দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায়, তারা এই দেশের জনগণ কিংবা রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায় না। আমাদের ছাত্র-জনতা বুঝিয়ে দিয়েছে, ভারত চাইলে এখানে কোনো নতজানু সরকার বসাতে পারবে না। বর্তমানে বাংলাদেশে কাউকে ক্ষমতায় আসতে ভারতের দরকার হবে না। ভারত আর বাংলাদেশকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবে না।

সভাপতির বক্তব্যে দলের জেষ্ঠ যুগ্ম-আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন বলেন, ২০০১ সালে যখন ভারত বড়াইবাড়ী গ্রাম দখল করতে চায়, তখন আমাদের বিডিআর আর গ্রামবাসী যুদ্ধ করে ওই গ্রাম বাঁচিয়েছেন। এই যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের জাতীয় বীর স্বীকৃতি দিতে হবে। যারা আহত আছেন তাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দিয়ে ভাতা প্রদান করতে হবে।

তিনি বলেন, গত বছর বড়াইবাড়ী দিবস পালন করতে দেয়নি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। ভারতকে খুশি করতে বড়াইবাড়ি যে শহীদ মিনার রয়েছে গত বছর তাতে তালা মেরে বন্ধ রাখে।

তিনি আরও বলেন, বড়াইবাড়ী সীমান্তের লড়াই পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে এটা জানাতে হবে।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ভারতীয় আগ্রাসন বিরোধী নেতা ইঞ্জিনিয়ার থোয়াই চিং মং শাক, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব মো:আবু হানিফ, সিনিয়র সাংবাদিক শাখাওয়াত হোসেন ইবনে মঈন চৌধুরী, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সদস্য সচিব হাসান আরিফ, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইয়েদ কুতুব, সহকারী সদস্য সচিব গালিব ইহসান, আমজনতার দলের দপ্তর সম্পাদক আরিফ বিল্লাহ, মুভমেন্ট ফর প্যালেস্টাইনের নেতা মো: হারুন অর রশীদ খান, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আব্দুল ওয়াহেদ, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুর রহমান যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মুজাহিদ, সহকারী সদস্য সচিব আশরাফুল ইসলাম, ঢাক বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম নূর শাফায়েতুল্লাহ ও সহকারী সদস্য সচিব ফারজায়ান আহসান কৃতিত্ব, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম ও যুগ্ম আহ্বায়ক জোবায়ের আহমেদ এবং কেন্দ্রীয় সদস্য তাশফিকুল ইসলাম।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সহকারী সদস্য সচিব আব্দুস সালাম, সৌরভ সাকিল, ডা. মাসুম বিল্লাহ ও অলিদ তালুকদার, শাহ পরাণ সায়েম, তোফায়েল আহমেদ, ওয়াসিম আহমদ ও সাকিব সামীন প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *