
|| জাকারিয়া শেখ | ফুলবাড়ি (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি ||
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি সড়কে নিম্নমানের কাজের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। উপজেলা সদরের শাহ বাজার থেকে নওদাবশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় ২ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক নির্মাণের এক সপ্তাহ পার না হতেই বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে যেতে দেখা গেছে বলে জানান এলাকাবাসী।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (IFAD) অর্থায়িত “অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও তথ্যের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সহনশীলতা বৃদ্ধি (প্রভাতী)” প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১ কোটি ৮৮ লাখ টাকায় এই সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। কাজের দায়িত্বে ছিল কুড়িগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খাইরুল এন্টারপ্রাইজ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণকাজে নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে, পরিমাণও ছিল অনেক কম। রাস্তার দুই পাশের মাটি ভরাটের কথা থাকলেও সেটি করা হয়নি। এছাড়া কার্পেটিংয়ের আগে সড়ক পরিষ্কার না করে কাদামাটি ও ময়লার ওপরেই পিচ ঢেলে কাজ শেষ করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা অভিযোগ করেন, কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় তাকে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং প্রকৌশল অফিসের লোকজন ও ঠিকাদার পক্ষের লোকজন তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। আরেক বাসিন্দা, ৭৫ বছর বয়সী আব্দুল আউয়াল জানান, রাতে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তা তৈলাক্ত করে পিচ ঢালতে দেখে তিনি বাধা দিয়েছিলেন। এর জেরে তাকে টেনে হিঁচড়ে রাস্তা থেকে সরানো হয়।

উত্তর বড়ভিটা গ্রামের লিটন মিয়া এবং নওদাবস গ্রামের মহেশ্বর রায়সহ অনেকেই অভিযোগ করেছেন, কাজ চলার সময়ই তারা এর মান নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন, কিন্তু কোনো প্রতিকার মেলেনি। বরং তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ মদদেই কাজ শেষ করা হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।
এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, সড়কটি স্থানীয় হাজার হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র সহজ মাধ্যম। বর্ষায় কাঁচা রাস্তায় চলাচল দুর্বিষহ হয়ে উঠত। পাকা রাস্তার কাজ শুরু হওয়ায় এলাকাবাসী খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু নিম্নমানের কাজের কারণে সেই আনন্দ মিলিয়ে গেছে।
স্থানীয়দের দাবি, কাজ শেষ হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে গেছে। এর পর বালু ফেলে সেই অংশ ঢেকে দায়মুক্তির চেষ্টা করা হয়েছে। তারা শঙ্কা করছেন, অল্পদিনেই সড়কটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকৌশলী মামুনুর রহমান বলেন, “যেসব স্থানে কার্পেটিং উঠে গেছে, সেগুলো এরই মধ্যে মেরামত করা হয়েছে। পুরো কাজ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে কোনো ত্রুটি পাওয়া গেলে সেটিও ঠিক করা হবে। ঠিকাদারকে দায়সারা কাজ করে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না।”
এলাকাবাসী অবিলম্বে সড়কটির মান যাচাই করতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তদন্ত ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।