সোমবার, আগস্ট ১৮

প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির সিএসই বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের চমক!

|| নিজস্ব প্রতিবেদক ||

প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) ডিপার্টমেন্টের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা ও পরিশ্রমের ফলাফলে সবাইকে চমকে দিয়েছে। ভর্তি হওয়ার আগে যাদের কোডিং জ্ঞান ছিল শূন্যের কোঠায়, তারা এখন নিজেদের প্রচেষ্টা ও শিক্ষকদের দিকনির্দেশনায় তৈরি করেছে চমকপ্রদ সব কম্পিউটার গেমস। “সি” প্রোগ্রামিং ভাষা এবং রেইলিব গ্রাফিক্স লাইব্রেরি ব্যবহার করে তারা এই গেমগুলো তৈরি করেছে, তাঁদের প্রথমবর্ষের প্রোগ্রামিং ল্যাবরেটরি প্রোজেক্ট-এর অংশ হিসেবে।

এই প্রকল্পে মোট ১০টি দল অংশ নেয়, প্রতিটি দলে ছিল সর্বাধিক ২ জন করে শিক্ষার্থী। দলগুলো নিজ নিজ ধারণা অনুযায়ী কম্পিউটার গেমের পরিকল্পনা করে এবং সেটিকে বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত সময়ে নকশা, কোডিং ও টেস্টিং সম্পন্ন করে। এর মধ্যে ৩টি দলের তৈরি গেমস তাদের উদ্ভাবনী ভাবনা ও কারিগরি দক্ষতার কারণে বিশেষভাবে সবার নজর কেড়েছে। ইউনুস চৌধুরী এবং রাফিদুল আলম শিমুল তৈরি করেছে জনপ্রিয় গেম ফ্ল্যাপি বার্ড-এর নতুন রূপ, যেখানে তারা নিজস্ব নকশা ও নিজেদের চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে গেমটিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। রিমি শিকদার এককভাবে নির্মাণ করেছে মেইজ রানার, যা জটিল ধাঁধা সমাধানের মাধ্যমে খেলোয়াড়কে গন্তব্যে পৌঁছানোর চ্যালেঞ্জ দেয়। আবদুল্লাহ ইবনে তাহের এবং এফ এম তাইসুম যৌথভাবে তৈরি করেছে “পং” গেমের নতুন সংস্করণ, যেখানে খেলোয়াড়কে মোকাবিলা করতে হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন প্রতিপক্ষের সঙ্গে।

সিএসই ডিপার্টমেন্টের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের এই অর্জনের পেছনে তাদের নিরলস পরিশ্রমের পাশাপাশি অনুপ্রেরণা ও সার্বিক সহায়তা প্রদান করেছেন সিএসই ডিপার্টমেন্টের অভিজ্ঞ ও মেধাবী শিক্ষকবৃন্দ। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এই কোর্সের ইনস্ট্রাক্টর ও সিএসই বিভাগের লেকচারার, বুয়েট অ্যালামনাই অর্ক শিকদার। তিনি শুরু থেকে শিক্ষার্থীদের গেম তৈরির পুরো প্রক্রিয়ায় ধাপে ধাপে দিকনির্দেশনা দেন, প্রোগ্রামিংয়ের জটিল অংশগুলো সহজভাবে বুঝিয়ে দেন এবং প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সহায়তা নিশ্চিত করেন। তাঁর আন্তরিক তত্ত্বাবধান ও সৃজনশীল পরামর্শ শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস ও উদ্দীপনা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। অর্ক শিকদার জানান যে সিএসই ডিপার্টমেন্টের হেড ডক্টর নাঈম স্যার সব সময় আমাকে অনুপ্রেরণা দেন যে “আউট অব দা বক্স” চিন্তা করতে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতে যেন ওরা প্রশ্ন করতে ভয় না পায়। মূলত স্যারের অনুপ্রেরণা আমাকে এই পদক্ষেপে উৎসাহিত করেছে।

সিএসই ডিপার্টমেন্টের হেড ও ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলের ডিন অধ্যাপক ড. শহিদুল ইসলাম খান নাঈম নবীন শিক্ষার্থীদের এই সাফল্যে গর্ব প্রকাশ করে বলেন, “প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের এই কৃতিত্ব প্রমাণ করে যে সঠিক দিকনির্দেশনা এবং সহায়ক পরিবেশ পেলে তারা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই প্রযুক্তিক্ষেত্রে অসাধারণ কিছু করে দেখাতে সক্ষম হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির সিএসই ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীরা কেবল পাঠ্যক্রমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং নানা ক্লাব কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেদের আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতায় গড়ে তুলছে। আর একটি বিষয়, আমাদের ট্রাষ্টিবোর্ড শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সময় সবসময় সেরা গ্র্যাজুয়েটদেরকেই বাছাই করেন যেমন এই প্রজেক্টের এডভাইজার অর্ক বুয়েট সিএসই-র মেধাবী ছাত্র হওয়ার পাশাপাশি ম্যাথ অলিম্পিয়াডের ন্যাশনাল লেভেলে একাধিকবার স্বর্ণপদক বিজয়ী। একই সাথে তিনি বুয়েটের প্রোগ্রামিং কনটেস্টগুলোতে সবসময় অন্যতম শীর্ষস্থান দখল করেছেন। প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির সব শিক্ষকই মেধা এবং দক্ষতায় অতুলনীয়”।

প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির সিএসই ডিপার্টমেন্টে রয়েছে সমৃদ্ধ ও বহুমুখী একাডেমিক পরিবেশ। এখানে প্রোগ্রামিং ক্লাব, এআই ক্লাব, ব্লকচেইন ক্লাব, রোবোটিক্স ক্লাবসহ শিক্ষার্থীদের নানা সংগঠন সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এসব ক্লাবে প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স এবং আরও অনেক আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, গবেষণা ও অনুশীলন চালানো হয়। এছাড়াও রয়েছে ফটোগ্রাফি ক্লাব, ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লা্ব‌, কালচারাল ক্লাব, ডিবেটিং ক্লাব যা শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করছে। এসব কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি বাস্তব জীবনের সমস্যার সমাধানেও দক্ষ করে তুলছে।

শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির সিএসই ডিপার্টমেন্ট আজ দেশের অন্যতম শীর্ষ তথপ্রযুক্তি শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি—নতুন প্রজন্মকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান, গবেষণা, উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও সুদক্ষ শিক্ষকমণ্ডলীর তত্ত্বাবধানে বিশ্বমানের জনশক্তিতে পরিণত করা হবে—যাদের হাতে থাকবে নতুন বাংলাদেশের নেতৃত্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *