রবিবার, ডিসেম্বর ৭

প্রকল্পে অনিয়ম–অব্যবস্থাপনা: মাদ্রাসাসহ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিল সওজ

|| শেখ শাহরিয়ার | জেলা প্রতিনিধি (খুলনা) ||

পাইকগাছার কপিলমুনিতে সড়ক সরলীকরণের নামে ডিগ্রি মাদ্রাসাসহ নানা স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে। জমি অধিগ্রহণের অর্থ এখনো পরিশোধ না হওয়ায় অনেকেই ক্ষতিপূরণ ছাড়া উচ্ছেদ হওয়ার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় উঠছে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, বেতগ্রাম–তালা–পাইকগাছা–কয়রা সড়ককে দুই লেনে উন্নীতকরণ, বাঁক সরলীকরণ ও প্রশস্ত করার লক্ষ্যে ২০২০ সাল থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়নকাজ চলছে। ৩৩৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকার প্রকল্পটি শুরু থেকেই নানা জটিলতায় পড়ায় তিন দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ব্যয়ও বেড়ে দাঁড়ায় ৩৭৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ঝুঁকিপূর্ণ ৩৪টি বাঁক সরলীকরণের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ অধিকাংশ বাঁকই সোজা না করে সাড়ে চার বছর কাটিয়েছে খোঁড়া–খুঁড়ি আর ধীরগতির কাজে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাইট ছাড়লেও গণমাধ্যমে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর জেগে ওঠে সওজ। নতুনভাবে জমির মালিকদের নোটিশ দেওয়ার পর সরলীকরণকাজ শুরু হলেও জমির মূল্য না দিয়েই বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙতে শুরু করে বুলডোজার।

এদিকে নকশা পরিবর্তন করে প্রভাবশালী ব্যক্তির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রক্ষা এবং সরকারি অর্থের অপচয়ের অভিযোগে ক্ষোভ বাড়ছে। কপিলমুনি জাফর আউলিয়া মাদ্রাসার ভবন ভাঙতে গিয়ে এখনো ক্ষতিপূরণ না পাওয়া নিয়ে আক্ষেপ জানাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এম এম জামিরুল ইসলাম।

এডভোকেট দিপঙ্কর সাহা বলেন, বাঁক সরলীকরণের নামে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের সুযোগ তৈরি হয়েছে। নির্মাণ বিপণি বাঁচাতে নকশা পরিবর্তন করায় জাফর আউলিয়া মাদ্রাসা, মাজার, আবাসিক বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জমি অধিগ্রহণে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় বাড়ছে।

অপরদিকে সওজ খুলনার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন দাবি করেন, জমি অধিগ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। মন্ত্রণালয় অনুমোদনের পর সওজ সব টাকা ডিসি অফিসে পাঠিয়েছে। ক্ষতিপূরণ বিতরণ করা ডিসি অফিসের দায়িত্ব বলেও তিনি জানান।

ভুল নকশা, অদক্ষ কাজ এবং ক্ষতিপূরণ ছাড়াই উচ্ছেদের ঘটনায় প্রকল্পটির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়রা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *