
|| মোস্তাফিজুর রহমান ||
পরকীয়া একটি সামাজিক ব্যাধি। বাঁধভাঙ্গা মহামারি আকারে সংক্রমিত হচ্ছে। সকল বয়স পেশা শ্রেণির মানুষের মাঝে পরকীয়ার জীবাণু ছড়িয়ে পড়েছে। জাতি ধর্ম-বর্ণ গোষ্ঠী পেশার কোনো ভেদাভেদ নাই, যে যার মত করছে। যুবক যুবতীরা যৌবনকালে আক্রান্ত হলে তাকে বলে প্রেম, মহব্বত, পিয়ার, ভালোবাসা, গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড পার্টনারশিপ, বেড পাটনার, গেট টুগেদার, ইত্যাদি। শুধু তাই নয় প্রেম/পরকীয়ার জালে আটকা পড়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কাটানোর জন্য নারী-পুরুষ চলে আসছে।
ছোট বড় পর্দার নায়ক-নায়িকা এবং হলিউড-বলিউডের তারকাদের এ ব্যাপারে বিমান ভাড়া যাতায়াত সবকিছু ফ্রি করে দেয়া হয় অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর জন্য এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ার জন্য, এ যেন আধুনিকতার মাতাল হাওয়া।
বিবাহিত নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে সংঘটিত লালসা মিটানোর কর্মকাণ্ডকে বলে পরকীয়া। যুবক-যুবতী এবং সকল পেশা শ্রেণির মানুষের মধ্যে পরকীয়ার প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে যেভাবে করুক বা বলুক এই অপকর্মকে কেউ বলে প্রেম অথবা পরকীয়া। যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে শারীরিক সম্পর্ক বা যৌন লালসা চরিতার্থ করা।
যৌনতাকে অনেকে যৌন ক্ষুধা বলে। মানুষের যেমন শারীরিক প্রবৃদ্ধি এবং বেঁচে থাকার জন্য ক্ষুধা নিবারণে খাদ্যের প্রয়োজন হয়। ক্ষুধা নিবারণে অর্থের এই প্রয়োজন কারো কাছে নগণ্য আবার কারো কাছে সীমাহীন চাহিদা গৌণ। বিলাসিতা আনন্দ ফুর্তি করার জন্য অর্থের চাহিদা বেড়ে অসীম হয়ে যায়, তখন চাহিদা মিটানোর জন্য মানুষের উপার্জনের পথ বৈধ অবৈধ পন্থার হিতাহিত জ্ঞান ন্যায় অন্যায় বোধ থাকে না।
তেমনিভাবে যৌন ক্ষুধা কারো কাছে গৌণ এবং কারো কাছে মুখ্য। যৌন ক্ষুধা মিটানোর জন্য বৈধ পন্থা হিসেবে নারী পুরুষের বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে আবদ্ধ হওয়াকে বিধাতার স্বীকৃত ন্যায় সঙ্গত বিধিবিধান বলা হয়েছে। কেউ একজন নারীতে তুষ্ট আবার কেউ নিত্য নতুন রুচির পরিবর্তনে অনুরাগী। যাদের যৌন ক্ষুধার চাহিদা তীব্র, তাদের জন্য খোদার বিধানে ৪(চার) জন বিবাহ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বিবাহ বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক মিলামিশা সম্পূর্ণ হারাম। আল্লাহর বিধানে বলা হয়েছে, তোমরা যেনা ব্যভিচারের ধারে কাছেও যেও না, সম্পর্ক করা তো প্রশ্নই উঠে না। এমনকি পথ চলার সময় রাস্তাঘাটে কোনো মহিলার দিকে খারাপ নজরে একবার তাকালেও গুনাহর কথা বলা হয়ছে। অপরিচিত মহিলা অথবা পুরুষের সঙ্গে কথা বলার সময় মধুর ভাষায় কথা বলা কুরআন হাদিসে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। নারী-পুরুষ প্রয়োজনীয় কথা বলার সময় কর্কশ কণ্ঠস্বরে কথা বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ মধুর কন্ঠস্বরে কথা বললে পুরুষ অথবা মহিলা যে কেউ কারো কথায় আকৃষ্ট হয়ে যেতে পারে।
পরকীয়ার কারণে বৈধ সুখের সংসার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সমাজে তালাকপ্রাপ্ত মহিলার সংখ্যা গাণিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডিভোর্সি হওয়ার জন্য সমাজে জেনা ব্যাভিচারের পথ প্রশস্ত হচ্ছে। কারণ ডিভোর্সি মেয়েদের কেউ বিবাহ করতে সহজে চায় না, এজন্য তারা ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়ে।
বিবাহ বিচ্ছেদ হলে সেই পরিবারের ছেলে মেয়ে থাকলে ছেলেমেয়েরা অবহেলা অবজ্ঞা লাঞ্ছনা হতাশার রোগে আক্রান্ত হয়ে বেড়ে ওঠে। কারণ না পায় পারিবারিক শাসন, না পায় পিতা মাতার ভালোবাসা আদর স্নেহ। পরকীয়ার প্রকোপে সমাজে হত্যা নির্যাতন নির্মমতা অত্যাচার বর্বরতার বিষাক্ত ছোবলে সমাজ পরিবার পরিবেশ বিপর্যস্ত পাপ পঙ্কিলতায় কলুষিত হচ্ছে অশান্তির দাবানলে জ্বলছে।
যার বাস্তব উদাহরণ সাভারের কিডনি বিক্রেতা টুনি এবং তার স্বামী তারেকের পরকীয়ার বিষয়টি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের পরকীয়ার খবরটি ব্যাপকভাবে প্রচারে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। টুনির অভিযোগ স্বামী তারেক যাকে সে কিডনি একটি দান করে বাঁচিয়ে রেখেছে, সেই তারেক এখন পরকীয়ার কারণে তার সঙ্গে সময় দেয় না যোগাযোগ রাখে না, অন্য কারো সঙ্গে পরকীয়া করে।
সাভারের টুনির স্বামী তারেকের অভিযোগ তার স্ত্রী একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িত এবং সে নিজে তাকে আপত্তিকর অবস্থায় হাতে নাতে ধরেছে এবং তার সাক্ষী হিসেবে মিডিয়াতে প্রকাশ করেছে।টুনি তার অপকর্ম ঢাকার জন্য স্বামীকে পরকীয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করছেন। যার কারণে তাকে ত্যাগ করে চলে গেছে ঢাকার অভিজাত এলাকায় গুলশানে। দুইজনের বক্তব্য সাংবাদিকগণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করেছে। টুনি তার স্বামীর কাছ থেকে কিডনি দেওয়ার বিনিময়ে একটি ফ্ল্যাট বাসা স্বামীর নিকট থেকে নিজ নামে লিখে নিয়েছে। টুনির বক্তব্য অনুযায়ী তার স্বামী যৌন ক্ষমতা হীন। যৌন ক্ষমতা হীন ব্যক্তি পরকীয়া করতে পারে না।
টুনি একজন বিউটিশিয়ান বিউটি পার্লারগুলো দেহ ব্যবসার খনি ফ্যাক্টরি হিসেবে কাজ করে। পার্লারের আড়ালে রূপ লাবণ্য দেহ কেনাবেচা খরিদ্দার সংগ্রহ করা রূপচর্চার মাধ্যমে হয়ে থাকে। যারা রূপচর্চা করে একাধিক পুরুষকে আকৃষ্ট করার জন্যই রূপচর্চা করে থাকেন। এছাড়া কোনো কারণ হতে পারে না। বিউটি পার্লার যৌনচর্চার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে থাকে। রূপচর্চা করতে গিয়ে অনেক নারী পার্লারগুলোতে যৌন লালসার শিকারে পরিণত হয়েছেন। এর উদাহরণ ভুরি ভুরি অসহায় ভুক্তভোগীরা বিষয়গুলো ভাইরাল করেছে। কেউ পার্লারে গিয়ে লোক লজ্জার ভয়ে সবকিছু হারিয়ে নিরব হয়ে গেছে কেউ সাহসিকতার সহিত প্রকাশ করেছে। পার্লারে যারা কাজ করেন তাদেরকে এসমাজ ভালো চোখে দেখে না। তাদেরকে সমাজের লোকেরা লালসার চোখে তাকায় এবং অন্যরকম ভাবে।
পরকীয়া যারা করেন তারা কোনো সম্পর্কের এবং বয়সের তোয়াক্কা করেন না, আত্নমর্যাদা লোক লজ্জার ভয় তাদের থাকে না। এক্ষেত্রে মেয়েরা আবেগ প্রবণ বেশি, তাদের আবেগে থাকে মায়া ছলনা প্রবাদ আছে মেয়েদের ৩৬ (ছত্রিশ) প্রকারের ছলনার কলাকৌশল জানা আছে। এক্ষেত্রে তারা সহানুভূতি অর্জনের জন্য চোখের পানি সবচাইতে মুখ্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।টুনি মিডিয়ার সামনে চোখের পানি বিসর্জন দিয়ে জনগণের সিম্প্যাথি অর্জনের জন্য চেষ্টা করেছে।
পরকীয়ার ক্ষেত্রে জীবন নাশের আশঙ্কা শতভাগ। তারেক তার জীবননাশের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। টুনি তারেকের পরকীয়ার বিষয়টা তারা দুইজন এবং আল্লাহ ভালো জানেন। শুধু এতটুকু বলতে চাই, পরকীয়া জঘন্য অপরাধ, বড় ধরনের পাপ কাজ। এই পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে হলে আখেরাতের চিন্তা খোদাভীতি আল্লাহর বন্দেগী তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করতে হবে এবং অশ্লীল বেহায়াপনা পর্নোছবির প্রচার প্রচারণা বন্ধ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে খোদাভীতি পরহেয থাকার তৌফিক দান করুন।
লেখক: বিশিষ্ট ব্যাংকার, ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, মানিকগঞ্জ শাখা। রচনার সময়কাল:১১ আগস্ট-২০২৫।