বুধবার, জুন ২৫

নির্বাচিত সরকার ছাড়া আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি করা সম্ভব নয়: বকুল

|| শেখ শাহরিয়ার | খুলনা প্রতিনিধি ||

বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও খুলনা-৩ আসনের ধানের শীষের কান্ডারী আলহাজ্ব রকিবুল ইসলাম বকুল বলেছেন, দীর্ঘ ১৬ বছর আমরা রাজপথে থেকে আন্দোলন করে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে স্বৈরাচার হাসিনাকে পদত্যাগে বাধ্য করেছি। মাফিয়া হাসিনা পালিয়ে গেছে। আমরা ভেবেছিলাম হাসিনা পালিয়ে গেছে এদেশের মানুষ শান্তিতে চলাচল করতে পারবে, শান্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারবে, শান্তিতে আমাদের সন্তানেরা লেখাপড়া করতে পারবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি হাসিনা পালিয়ে গেছে ঠিকই; কিন্তু তার রেখে যাওয়া সন্ত্রাসীরা রং বদল করে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় আবারো তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সন্ত্রাসীদের উল্লাসমঞ্চ আমাদের এলাকায় হতে পারে না; সন্ত্রাসীদের দখলে এলাকা থাকবে আর সাধারণ মানুষ আতঙ্কে থাকবে এটা হতে পারে না। সন্ত্রাসীদের পদচারণায় এলাকা প্রকম্পিত থাকবে বলে সাধারণ মানুষ, ছাত্র জনতা জুলাই আগস্টে জীবন দেয়নি-রক্ত দেয়নি।

তেলিগাতী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দীপক কুমার সরকারের ওপর গুলিবর্ষণকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারসহ অবৈধ অস্ত্রধারী, মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে খানজাহান আলী থানা বিএনপির উদ্যোগে মঙ্গলবার (২৪ জুন) বেলা দুইটায় স্থানীয় ফুলবাড়িগেট বাসষ্ট্যান্ডে মানববন্ধন কর্মসুচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বকুল বলেন, যেখাবে আমরা হাসিনাকে ঐক্যবদ্ধভাবে বিদায় করেছি; সেভাবে আমাদের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐকবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হবে। দীপক কুমার সরকার আগেই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করলেও পুলিশ প্রশাসন তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। দীপক কুমার সরকার হয়তো ভাবছেন তিনি হিন্দু বলে তার পক্ষে কেউ থাকবে না, তিনি হিন্দু বলে বিচার পাবেন না, তিনি সংখ্যালঘু বলে সমাজে তার অবস্থান থাকবে না। কিন্তু না- আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সংখ্যালঘু তত্ত্বে বিশ্বাস করি না। আমরা মনে করি, যার ধর্ম তার কাছে কিন্তু আমরা সবাই বাংলাদেশী। হিন্দু হোক, বৌদ্ধ হোক, খৃস্টান হোক বা মুসলমান হোক আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশী। বকুল হুশিয়াশি উচ্চরণ করে বলেন, ভবিষতে যদি খানজাহান আলী থানাসহ খুলনা নগরীর কোথাও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চলে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে থেকে প্রতিহত করবো ইনশাল্লাহ।

কেন্দ্রীয় এ নেতা আরো বলেন, নির্বাচিত সরকার ছাড়া আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি করা সম্ভব নয়। নির্বাচন যত দেরিতে হবে ততই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাবে। ইউনুস সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা বারবার বলেছি নির্বাচন দ্রুত সময়ের মধ্যে দিতে। কারণ নির্বাচিত সরকার থাকলে জবাবদিহিতা থাকে। একটি অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হবেই। গত কয়েক মাসে খুলনায় ১৪/১৫টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও পুলিশ হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে পারেনি।

আমরা নিরাপত্তার অভাববোধ করছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রশাসন কার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে? সন্ত্রাসীদের পক্ষে নাকি জনগণের পক্ষে? জনগণের পক্ষে যদি প্রশাসন অবস্থান নেয় ফ্যাসিস্ট হাসিনার পরিণতি ভোগ করতে হবে কি-না আমরা জানি না, তবে চেয়ারে থাকতে পারবে না। সুতরাং জনগণের সেন্টিমেন্ট বোঝার জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান। সেন্টিমেন্ট না বুঝলে আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে রাজপথে অবস্থান নিতে বাধ্য হবো। সন্ত্রাসীদের আমরা ভয় পাই না বা প্রশাসনের কোন রক্তচক্ষুকে আমরা ভয় পাই না। মাদক ব্যবসায়ী, মাদক সেবি ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান। তিনি বলেন বিএনপির কেউ অপরাধের সাথে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে দল সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবে। এদেশে কোন সংখ্যালঘু নেই আমরা সবাই বাংলাদেশী এদেশ আমাদের সবার। খুলনা-যশোর রোডে মানববন্ধনে জনগণের ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সামান্য সমস্যা হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন।

মানববন্ধনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহানগর বিএনপির সভাপতি এড. শফিকুল আলম মনা বলেন, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন সংখ্যালঘু বলতে বাংলাদেশে কেউ নেই। দীপক সরকারের ওপর গুলিবর্ষণকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান। মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন অবিলম্বে শিক্ষক দীপক কুমার সরকারের ওপর গুলিবর্ষণকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বলে বলেন, খানজাহান আলী থানা এলাকা মাদকে সয়লাব হয়ে গেছে কিন্তু কেউ গ্রেফতার হয়নি। স্বৈরাচারের দোসররা কেউ গ্রেফতার হয়নি। অবিলম্বে পতিত সরকারের সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। ১০ মাসের বর্তমান সরকারের তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা খুলনার মানুষ দেখতে পায়নি। চাঁদাবাজদের গুলিতে আহত তেলিগাতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দীপক কুমার সরকার বলেন, চাঁদাবাজরা ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করলে আমি থানায় জিডি করি। কিন্তু পুলিশ কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় আমাকে হত্যার উদ্যোশে গুলি করেছে চাঁদাবাজরা। তিনি পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় আছেন বলে জানান।

খানজাহান আলী থানা বিএনপির সভাপতি কাজী মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ হাওলাদার আব্বাসের পরিচালনায় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সাদী, রেহাসা ঈসা, বদরুল আনাম খান, চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন, মুর্শিদ কামাল, এড. মোহাম্মাদ আলী বাবু, আসাদুজ্জামান আসাদ, হাবিবুর রহমান বিশ্বাস, শেখ ইমাম হোসেন, মিজানুর রহমান মিলটন, মোল্লা সোহাগ, মতলুবুর রহমান মিতুল, জাকির ইকবাল বাপ্পি, বিপ্লবুর রহমান কুদ্দুস, যুবদলের আব্দুল আজিজ সুমন, রবিউল ইসলাম রবি, স্বেচ্ছাসেবক দলের মিরাজুর রহমান মিরাজ, ছাত্রদলের তাজিম বিশ্বাস, শ্রমিকদলের মজিবর রহমান, শফিকুল ইসলাম শফি, মহিলা দলের সৈয়দা নার্গিস আলী, এড. হালিমা আক্তার খানম, মলি চৌধুরী, মদিনা হাওলাদার, শিক্ষক নেতা মনিরুল ইসলাম বাবুল, নজরুল ইসলাম, নাজমুল হক, আব্দুর রহিম, কামরুল ইসলাম, রুহুল আমিন, আফরোজা শারমিন, আয়েশা খানম, আমিরুল ইসলাম প্রমূখ।

মানববন্ধনে বিএনপির নেতাকর্মী ছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *