বৃহস্পতিবার, মার্চ ১৩

“নির্ঘুম রাত”_কবিতা

রাতের দ্বিপ্রহরে শৃগালের ডাক,
বাড়ির পোষা কুকুর লালুর নিচুতলায় লম্ফঝম্প
শিয়রে মশাদের বিক্ষোভ মিছিল
ন্যায্যমূল্যে খাদ্যের খোঁজে মশগুল,
কিন্তু বাধা “গুডনাইট” কয়েলের ধোঁয়া।
ঘরের চালায় বাতাসে আম্রশাখায়
কাঁচা মিঠা আমের ঘর্ষণ ।

ঘুম এলো না নিদ্রাদেবিও অঘোষিত ছুটিতে
ডানপায়ের গোড়ালিতে ক্ষণে ক্ষণে ব্যথার ঝিলিক
এপাশ ওপাশ করে সহে নেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা।
সারা পৃথিবী ঘুমে মশগুল, আর আমি
একাকীত্ব মনে কম্পমান শরীরে
একজন বন্ধুকে খুঁজে নিবার আমার করুন দু’টি চোখ
বিছানায় গা এলিয়ে উঠাবসার যেন কসরত।

না আর পারছি না। দূর্ঘটনায় ভঙ্গুর ডানপা নিয়ে,
কতো দিন আর বদ্ধ ঘরের বিছানায়
নকশীকাঁথার উপর শুয়ে থাকবো?
দেয়াল ঘড়ির দিকে বারংবার দৃষ্টি,
ওহ্! রাত মাত্র দুটো—–
কখন সকালের সূর্য উঁকি দিবে জমিনে
ফেলবো নিঃশ্বাস আলোর ফুয়ারায়।

আচ্ছা এই নির্ঘুম ক্ষণে কেউ কি আমার সঙ্গী হবে?
ভালোই হতো কাউকে পেলে,
চায়ের পেয়ালায় চুমো দিতে দিতে
মুঠো মুঠো সময় পাড় হতো।
কিন্তু কাকে ডাকবো? কে সঙ্গী হবে নির্ঘুম রাতে?
মোর শিয়রে থাকা ফুলমতিকে বললাম, সঙ্গী হবে?
সেও হাই ছেড়ে বিরক্ত স্বরে প্রত্যাখান করলো মোরে,
ঘুমাও যতো সব ———।

বাড়ির বাতায়নে ঝিঁঝি পোকাদের ডাকলাম
প্রত্যত্তর এলো তারা রুটিনমাফিক
গানের মহরায় ব্যস্ত, সময় নেই মোদের।
আকাশের তারকারাশিদের বললাম একটু সঙ্গী হবে?
উত্তর এলো সময় নেই মোদের।

ডানপায়ের ক্ষতো নিয়েই কাব্যিক মনে
কিছু লেখার চেষ্টা,
কিন্তু কলমের ডগাও আমারে দিলো ছুটি
কালিহীন কলম হাতের মুঠোয়, নির্জন এক নির্ঘুম রাত্রি।
স্বরচিত “রক্ত কাজল” উপন্যাসের পাতায় রাখলাম দৃষ্টি
হঠাৎ বিদ্যুৎটাও হলো লাপাত্তা।

দিয়াশলাই কাঠির ঘর্ষণে মোমবাতি প্রজ্বলনে
চোখ রাখলাম আবারো উপন্যাসের পাতায়,
কিন্তু পঞ্চাশ ছুঁয়ে যাওয়া বয়সে
দৃষ্টিশক্তি পড়লো মহাবিদ্রোহের কবলে।
হঠাৎ উড়ে আসা আরশোলার পাখনার ঝাপটায়
মোমবাতির ক্ষীণো আলো পড়লো বঙ্গোপসাগরে।

কৃঞ্চরাতে বসে রইলাম নির্জনে নির্ঘুমে।
ব্যথা আর বেদনায় কুচকে যাওয়া শরীর আর মন
কিন্তু আর কতোক্ষণ রাত পোহাবার?
ঘুম রাজ্যের বাসিন্দা হতে চাইলেও
নিদ্রাদেবীর নাহি দেখা।

ঘড়ির কাটাও মহাব্যস্ত,
মাচানে ইঁদুর বিড়ালের বাকযুদ্ধ।
পেয়ারার ডালে বাদুড় পাখির ক্ষীণো শব্দ
পাকা পেয়ারা সাবার করতে মহাব্যস্ত।
ভেসে আসা শব্দে মাইকে যাত্রাপালার কনর্সাট
মন্দিরেতে কাসার ধ্বনির ঢিংঢং আওয়াজ
কর্ণকুহরে ভেসে এলো রাতের ট্রেনের হুইসিল।

নির্ঘুম চোখ আর তেতো মনে
কতো কিছুরই না হলো অবগাহন।
ঊঠানে কবুতরের কুঠিরে পাখা ঝাপটানো শব্দ
কপোত-কপোতীর হয়তো চলছে মধুর বাসর
আহ! ওরাতো ভালোই আছে।
আমার নির্ঘুম রাতের হয়তো ওরা নীরব স্বাক্ষী।

চোখের দু,পাতা হলো না একাকার
এদের দুরত্ব যেন টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া।
রাতের উপসংহারে নির্ঘুমরাতে
বিছানায় গড়িয়ে স্মৃতির প্লাবনে আমি।
হঠাৎ দক্ষিণ পাড়ার মসজিদ থিকে ভেসে এলো
ফজরের সুমধুর আজান।
রুমের জানালা খুলে রাতজাগা পাখি হয়ে
হাই ছাড়লাম নির্ঘুম রাতের শেষে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *