|| হাফেজ মু. হাসান জামান ||
ইসলামে “ফিতনা” একটি ব্যাপক অর্থ বহন করে, যার মধ্যে সঙ্কট, পরীক্ষার সময়, কিংবা সমাজে অনৈক্য সৃষ্টি করার কারণ বোঝানো হয়। “নারীদের ফিতনা” বলতে এখানে মূলত সেই প্রলোভন বা পরীক্ষা বোঝানো হয়েছে, যা পুরুষদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে এবং যা তাদের সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারে। কুরআন ও হাদীসে নারীদের ফিতনার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে, তবে এর মানে এই নয় যে, নারীরাই ফিতনার মূল কারণ। বরং, পুরুষদের জন্য এ এক ধরনের পরীক্ষা, যা তাদের নৈতিক শক্তি ও ঈমানের উপর নির্ভর করে।
কুরআনে সরাসরি নারীদের ফিতনা বিষয়ে উল্লেখ না থাকলেও, মানবজাতির পরীক্ষার এবং ফিতনার বিষয়ে বিভিন্ন আয়াত পাওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
“তোমাদের ধন-সম্পদ এবং তোমাদের সন্তান-সন্ততি ফিতনা (পরীক্ষা) স্বরূপ।”
(সূরা আত-তাগাবুন, ৬৪:১৫)
এখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি ফিতনার একটি কারণ হতে পারে, যা মানুষকে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে, তাদের রূপ, আকর্ষণ বা প্রলোভনও পুরুষদের জন্য ফিতনার একটি কারণ হতে পারে, যেভাবে ধন-সম্পদ বা সন্তান-সন্ততি হতে পারে।
হাদীসে বেশ কিছু বাণী রয়েছে, যা পুরুষদের নারীদের ফিতনা থেকে সাবধান থাকার পরামর্শ দেয়। নবীজী (সা.) বলেছেন:
“আমি আমার পরে পুরুষদের জন্য নারীদের চেয়ে বড় ফিতনা আর কিছুই রেখে যাচ্ছি না।” (সহীহ বুখারী: ৫০৯৬)
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীস, যেখানে নারীদের প্রলোভনের শক্তির প্রতি সতর্ক করা হয়েছে। এখানে নবীজী (সা.) পুরুষদের উদ্দেশ্যে বলেছেন যে, নারীদের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া তাদের জন্য একটি বড় পরীক্ষা হতে পারে। তবে এটি নারীদের দোষারোপ করে না, বরং পুরুষদের তাদের নৈতিক শক্তি ও ঈমান রক্ষার প্রতি আরো সচেতন থাকার কথা বলেছে।
নারীদের ফিতনা ভয়ংকর কেন?
নারীদের ফিতনা ভয়ংকর বলে মনে করা হয়। কারণ, এটি পুরুষদের মন ও চরিত্রকে প্রভাবিত করতে পারে। ইসলামে পুরুষদের জন্য অন্যতম বড় পরীক্ষা হলো নারীদের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া এবং এই আকর্ষণকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। পুরুষদের চোখ, মন এবং কর্মে শুদ্ধতা বজায় রাখার উপর জোর দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেছেন:
“মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে।” (সূরা আন-নূর, ২৪:৩০)
এই আয়াতে আল্লাহ পুরুষদের চোখ ও নফসকে সংযত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, যা নারীদের প্রতি আকর্ষণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের ফিতনা থেকে রক্ষা পাওয়ার মূল উপায় হলো নিজের ঈমানকে মজবুত রাখা, সঠিক পথে থাকা এবং আল্লাহর নির্দেশিত নিয়ম মেনে চলা।
লেখক: ইসলামী গবেষক, রংপুর।