বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ৯

নাগেশ্বরী মহিলা কলেজে অধ্যক্ষের আসনে বিতর্ক—সরকারি চিঠি থেকেও কেন সরে গেলেন সভাপতি?

|| কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ||

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী মহিলা কলেজে চলছে অদ্ভুত এক দ্বন্দ্ব। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ জালাল উদ্দিনকে পদে বহাল রাখার অভিযোগ উঠেছে কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষক, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে অভিভাবক—সব মহলে তৈরি হয়েছে তীব্র উত্তেজনা। প্রশ্ন একটাই—কাদের স্বার্থে সরকারি আদেশকে বুড়ো আঙুল দেখানো হলো?

সরকারি নির্দেশনায় বরখাস্ত, তবুও বহাল!

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (ঢাকা) গত ১৯ জুন ২০২৫ তারিখে স্মারক নং-৩৭.০২.০০০০.১০৫.৩২.০২৯.২০২৫/৩৬৭০/৬ জারি করে স্পষ্ট জানায়—১১ মার্চ পুলিশি অভিযানে আটক হয়ে ৩৬ দিন কারাভোগ করা জালাল উদ্দিন প্রশাসনিকভাবে “Misconduct” ও “Moral Turpitude”-এর আওতায় পড়েন। বিধি অনুযায়ী তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে খোরপোষ ভাতা প্রদান এবং জ্যেষ্ঠতম সহকারী অধ্যাপককে দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়।

কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, সভাপতি আইয়ুব আলী এই নির্দেশ বাস্তবায়ন না করে উল্টো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলরের কাছে ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে জালাল উদ্দিনকে বহাল রাখার পথ তৈরি করেন।

ঢাকার লালমাটিয়া মহিলা কলেজে দীর্ঘদিন কর্মরত ও রাজধানীতেই স্থায়ীভাবে বসবাসকারী সভাপতি আইয়ুব আলী সাংবাদিকদের বলেন—
“জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যে চিঠি দিয়েছিলো, তা ছিলো একপক্ষীয়। কোনো তদন্ত ছাড়াই দেওয়া ওই চিঠি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।”

স্থানীয় সূত্রের দাবি, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জালাল উদ্দিনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আসলাম হোসেন সওদাগরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। রাজনৈতিক প্রচারণা ও বৈঠকে তাদের একসঙ্গে দেখা গেছে বহুবার। এ সম্পর্কই কি তাকে বাঁচিয়ে রাখছে?—প্রশ্ন এখন শিক্ষক মহল ও এলাকাবাসীর মধ্যে।

কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন—
“সরকারি নির্দেশ অমান্য করে একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে দায়িত্বে রাখা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করছে।”

অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ—“দুই পক্ষের টানাপোড়েনে ক্লাস ব্যাহত হচ্ছে, পড়াশোনার পরিবেশ ভেঙে পড়েছে। দ্রুত সমাধান না হলে কলেজে শিক্ষা নয়, বরং অপশিক্ষা ছড়িয়ে পড়বে।”

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—সম্প্রতি মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ, সহকারী অধ্যক্ষ ও চতুর্থ শ্রেণির তিনটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। ম্যানেজিং কমিটির একাংশের অভিযোগ, এই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে নিজের অনুকূলে আনতেই সভাপতি আইয়ুব আলী জালাল উদ্দিনকে পদে রাখার জন্য মরিয়া।

সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও কেন স্থানীয় পর্যায়ে তা বাস্তবায়ন হয়নি? স্থানীয়রা মনে করছেন—ক্ষমতাবান মহলের ছায়া, রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক শৈথিল্যের সমন্বয়ে আজ নাগেশ্বরী মহিলা কলেজ এক অস্থিরতার নাম।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি রক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *