সোমবার, নভেম্বর ৩

নাগেশ্বরীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড: ১০টিরও বেশি দোকান পুড়ে আর্থিক ক্ষতি কোটি টাকা!

|| ​কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ||

কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা থানার অন্তর্গত কচাকাটা বাজারে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মুহূর্তের মধ্যেই ছাই হয়ে গেছে ১০টিরও বেশি দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) গভীর রাতে সংঘটিত এই মর্মান্তিক ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অন্তত ১ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা ব্যবসায়ীদের সব পুঁজি এক রাতেই ভস্মীভূত হওয়ায় নেমে এসেছে চরম হতাশা।

​স্থানীয় সূত্র এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে কচাকাটা বাজারের মাঝহাটির সামনে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রোঃ মোঃ হাসেন আলী (মহাজন) এর দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। দ্রুতই সেই আগুন পূর্ব পার্শ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং দুটি কীটনাশকের দোকানসহ মোট দশটিরও অধিক প্রতিষ্ঠানকে গ্রাস করে নেয়।

​এই অগ্নিকাণ্ডে অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্যবসায়ী প্রোঃ মোঃ আমিনুর রহমান (মাস্টার)। বাজারের ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তার জন্য প্রতিদিন রাতে তাঁদের মূল্যবান পণ্যসামগ্রী তাঁর দোকানে জমা রাখতেন। দুর্ভাগ্যবশত, আগুনে সেই সংরক্ষিত মালামালসহ দোকানের সমস্ত সামগ্রী সম্পূর্ণ পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে।

​ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছিল কীটনাশক বিক্রয়কেন্দ্র, মুদি দোকান এবং অন্যান্য খুচরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের হিসাব মতে, মালামালের পাশাপাশি প্রায় ১ কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ বকেয়া খাতার মূল্যবান রেকর্ডও নষ্ট হয়েছে। এতে অন্তত ৮-১০ জন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

​আগুনের লেলিহান শিখা দেখে স্থানীয়রা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং পানি ও বালির সাহায্যে আগুন নেভানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালান। খবর দেওয়া হয় ফায়ার সার্ভিসে।

​তবে, স্থানীয়দের অভিযোগ— যোগাযোগের বেহাল দশার কারণে নাগেশ্বরী ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে অনেক দেরি করে ফেলে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও, ততক্ষণে বাজারের একটি বড় অংশ আগুনে ভস্মীভূত হয়ে পড়েছিল।

​স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা কচাকাটার মানুষ সবসময়ই অবহেলিত। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় ফায়ার সার্ভিস আসতে অনেক দেরি হয়ে গেল। যদি দ্রুত পৌঁছানো যেত, তবে ক্ষতির পরিমাণ হয়তো কিছুটা কমানো যেত।”

​অগ্নিকাণ্ডের সঠিক কারণ এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট অথবা অসাবধানতাবশত চুলার আগুন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে। বর্তমানে ফায়ার সার্ভিস এবং স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত করছে।

​ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা প্রস্তুত করে দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

​ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে জরুরি ভিত্তিতে আর্থিক সহায়তা চেয়ে আকুতি জানিয়ে বলেন, “আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। বছরের পর বছর পরিশ্রমের সব পুঁজি এক রাতেই ছাই হয়ে গেল। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া আমরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারব না।”

​কচাকাটা বাজারের এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী। স্থানীয়রা সকলকে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন এবং দ্রুত পুনর্বাসনের দাবি উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *