
|| মোঃ রফিকুল ইসলাম | নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি ||
নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাচন অফিসার নির্বাচনী বিধিমালা অমান্য করে অতি-গোপনে নাগেশ্বরী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের পশ্চিম সাপখাওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র (২৫শতাধিক ভোটার) স্থানান্তর করার অভিযোগ করেছে স্থানীয় ভোটার ও এলাকাবাসী।
নির্বাচনী পরিপত্র-মতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এবং স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ (পরবর্তী সময়ে সংশোধিত) আইনে উল্লেখ জনগণকে অবগত না করে ভোট কেন্দ্র স্থানান্তর করা নির্বাচনী আইনের একটি গুরুতর লঙ্ঘন এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সরেজমিনে ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী পৌরসভারর ৩নং ওয়ার্ডের পশ্চিম সাপখাওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে “পশ্চিম সাপখাওয়া, মন্দিসেরখামার, সাপখাওয়া, সরকারটারী ও মধুরহাল্লা” মহল্লার ২৫শতাধিক ভোটার দেশ স্বাধীনতার পর থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে তাদের ভোট প্রদান করে আসছিলো। নাগেশ্বরী উপজেলার ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ অতি-কৌশলে নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাচন অফিসারের সাথে যোগসাজস করে কুড়িগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিসারের সহায়তায় পশ্চিম সাপখাওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে না গিয়ে এবং জনগণকে অবগত না করে নির্বাচনী আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে ভোটকেন্দ্র স্থানান্তর করার লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি, ভোটারদের বিশৃঙ্খলা তৈরি করাসহ আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে পশ্চিম সাপখাওয়া ভোট কেন্দ্র পরিবর্তন করে প্রায় ৩কিলোমিটার দূরে প্রধান শিক্ষক ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল আজিজের নবাগত এমপিওভুক্ত মধুরহাল্লা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্থানান্তর করার পায়তারা চলছে। এ নিয়ে চলছে পশ্চিম সাপখাওয়াসহ ৫ মহল্লার নারী ও পুরুষ ভোটারদের মাঝে চরম উত্তেজনা। এলাকার ভোটারের দাবি পূর্বের ন্যায় পশ্চিম সাপখাওয়া ভোট কেন্দ্র বহাল রাখার।
স্থানীয় ভোটার ও অভিযোগকারী প্রভাষক এস এম হাবিবুর রহমান, জসিম উদ্দিন চৌধুরী, আঃ কাদের, রফিকুল ইসলাম, ইউনুছ আলী, হাবিবুর রহমান সরকার, খায়রুল ইসলাম সরকার বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে আমরা এই ৫ গ্রামের বাসিন্দারা পশ্চিম সাপখাওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে আসছি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল আজিজের মাস্টার প্লানে নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার পশ্চিম সাপখাওয়া ভোটকেন্দ্রে না আসে এবং জনগণকে অবগত না করে নির্বাচনী বিধিবালা লঙ্ঘন করে ভোটকেন্দ্র স্থানান্তরের পায়তারা করছে। প্রায় ৩কিলোমিটার দূরে ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ঘাটি” মধুরহাল্লা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণের ষড়যন্ত্র চলছে এবং ৩কিলোমিটার দূরত্বর কারণে বৃদ্ধ ও মহিলাদের ঐ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়া একেবারে অসম্ভব। এছাড়াও এই এলাকা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সুপরিচিত। নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাচন অফিসার নির্বাচনী বিধিবালা অমান্য করে নিজ স্বার্থ হাসিলে ভোট কেন্দ্রটি স্থানান্তরের পায়তারা করছেন। আমাদের দাবি ভোট কেন্দ্রটি পূর্ণবহাল রাখতে হবে। অন্যথায় আমরা ৫গ্রামের মানুষ বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবো এবং উপজেলা ও জেলা নির্বাচন অফিস ঘেরাও কর্মসূচি গ্রহণ করবো। তারা আরো বলেন, গত-২২অক্টোবর ২০২৫ তারিখে নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাচন অফিসার, নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক লিখিতভাবে কুড়িগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও এখনো পর্যন্ত সুস্থ সমাধান হয়নি।
নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ আব্দুল লতিফ বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পশ্চিম সাপখাওয়া ভোটকেন্দ্র স্থানান্তর প্রক্রিয়াধীন। ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি ও জনগণকে অবগত করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন ভোটকেন্দ্র পরিবর্তন করতে জনগণের মতামতের প্রয়োজন নেই।
নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিব্বির আহমেদ বলেন, ৬/৭জন রাজনৈতিক নেতাদের সাথে এ বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। নির্বাচন অফিসার ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে এবং ভোটারদের কোন অবগত না করে ভোট কেন্দ্র স্থানান্তরের অভিযোগ পেয়েছি। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
নাগেশ্বরী পৌর বিএনপির সদস্য আজিজুল হক বলেন, ইউএনও অফিসে ভোট কেন্দ্র বিষয়ে কোন আলোচনার বিষয়ে আমি জানিনা। বাংলাদেশ জামাত ইসলামী নাগেশ্বরী উপজেলা আমির আব্দুল মান্নান বলেন, ভোটকেন্দ্র নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিন্তু স্থানান্তরের বিষয়ে কোন আলোচনা হয়নি। ইসলামী আন্দোলনের কুড়িগ্রাম ১ আসনের প্রার্থী আলহাজ্ব আরিছুল বারী রনি বলেন, ভোট কেন্দ্র বিষয়ে আমার সঙ্গে কোন আলোচনা হয়নি।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ বলেন, অভিযোগ হওয়ার পরে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে লিখিতভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জনগণকে অবগত না করে ভোট সেন্টার স্থানান্তরের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ শুনলাম। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
