
|| মোঃ মাফিজুল রানা সজল | নিজস্ব প্রতিনিধি ||
নওগাঁয় জেলা জজ আদালতের গারদখানায় বন্দিদের সঙ্গে দেখা করার জন্য টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কর্তব্যরত কোর্ট পুলিশের বিরুদ্ধে। এদিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রমাণও মিলেছে টাকা লেনদেনের।
জেলা জজ আদালতের গারদখানায় বন্দি আসামিদের সঙ্গে কেউ দেখা করতে গেলে টাকার বিনিময়ে মিলে সাক্ষাতের সুযোগ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, টাকা না দিলে বিভিন্ন টালবাহানা ও আইন দেখান দায়িত্বরত পুলিশ।
নওগাঁ কোর্টের গারদখানায় গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন মামলার আসামি আনা-নেওয়া হচ্ছে। যেসব আসামিদের কোর্টে হাজিরা রয়েছে তাদেরও আনা হয়েছে জেলা কারাগার থেকে। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকা হতে আটককৃত আসামিদের প্রথমে গারদখানায় ঢোকানো হচ্ছে। বন্দি আসামিদের সঙ্গে তাদের আত্মীয়স্বজন দেখা করতে কোর্টের গারদখানায় এসেছেন অনেকে। সেখানে থাকা দায়িত্বরত পুলিশকে টাকা দিলে আসামিদের সঙ্গে দেখা করা ও বিভিন্ন খাবার দেওয়ার সুযোগ মিলছে। অন্যথায় দেখা করা কিংবা কথা বলার কোনো সুযোগ নেই নওগাঁ জেলা জজ আদালতের গারদখানায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্দিদের স্বজনরা বাইরের হোটেল থেকে কিংবা বাসাবাড়ি থেকে শুকনা খাবারের পরিবর্তে এনে দিচ্ছে ভাত, মাছ, মাংস ও বিরিয়ানি। সেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বন্দিরা যেমন মোবাইলে কথা বলছে, তেমনি দেদারছে করছে ধূমপান। সেখানে থাকা পুলিশকে ৫০০ টাকা দিলেই এসব সুবিধা মেলে বলে জানালেন বন্দি ও তাদের আত্মীয়স্বজনরা।
সাপাহার উপজেলার আশড়ন্দ থেকে দেখা করতে এসেছেন একটি পরিবার। এসময় বন্দির বড় ভাই নুরনবী বলেন, ‘রাজনৈতিক মামলায় আমার ছোট ভাই আটক আছে। আজকে ধার্য তারিখ ছিল তাই পরিবারের সবাই কোর্টে এসেছি তার সঙ্গে দেখা করার জন্য। পুলিশকে প্রথমে ২০০ টাকা দিয়েছিলাম ১০ মিনিট পর পুলিশ এসে বলে সময় শেষ আর কথা বলা যাবে না। আর একটু কথা বলতে চাইলে পুলিশ বলে ৫০০ টাকা দিলে যতক্ষণ ইচ্ছা কথা বলতে পারবেন। তখন আমার ভাই আরও ৩০০ টকা দেয়। ৫০০ করে টাকা দিলে যতক্ষণ ইচ্ছা দেখা করতে দেয়, খাবারও দিতে দেয়।’
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে নওগাঁ কোর্টের পুলিশ পরিদর্শক এ.কে.এম নূরুল ইসলাম বলেন, বন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে টাকা পয়সা নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। মানবতার খাতিরে আমরা শুকনা জাতীয় খাবার, পানি দিতে দেই। তবে প্রকাশ্য ধূমপান একেবারে নিষিদ্ধ। কোন পুলিশ সদস্য টাকাপয়সা কিংবা অনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে কিংবা কেউ অভিযোগ দিলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ার বলেন, ‘আসামির সঙ্গে কেউ দেখা করতে আসলে পুলিশের টাকা নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। আমার কাছে অভিযোগ আসলে আমি ব্যবস্থা নেব।’