রবিবার, আগস্ট ২৪

দুধকুমর নদীর ভাঙনে দিশেহারা দু’কূলবাসী

|| ‎মোঃ রফিকুল ইসলাম | নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি ||

‎দুধকুমর নদীর ঢেউ খেলানো পানির শব্দ এখন আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে নদী পাড়ের মানুষের কাছে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বসতভিটা, ফসলী জমি, এমনকি গ্রামের পর গ্রাম হারিয়ে যাচ্ছে নদীগর্ভে। একসময় যে স্থানে ছিল মাযহারুল ইসলাম অবসরপ্রাপ্ত মাস্টারের ঘরবাড়ি, আজ সেখানে শুধু নদীর স্রোত। চোখ মুছতে মুছতে তিনি বললেন—
‎“আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। আজ ঘর গেল, কাল হয়তো জমিও থাকবে না। বাচ্চাদের নিয়ে কোথায় যাব? কিভাবে বাঁচবো?”

‎এ দুঃখ-কথা শুধু মাযহারুলের নয়; একই কান্নায় ভেঙে পড়ছে বামনডাঙ্গা ও বল্লভের খাস ইউনিয়নের শত শত পরিবার। কেউ হারিয়েছেন বসতভিটা, কেউবা ফসলি জমি, কেউ আবার ভাঙনের কারণে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন।

‎অবিরাম ভাঙনের প্রতিকার চেয়ে রবিবার (২৪ আগস্ট) বিকেল ৫টায় দুধ কুমর নদীর তীরে মানববন্ধনে অংশ নেন ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ। নারী-পুরুষ, শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবাই হাত ধরে দাঁড়িয়ে জানান একাত্মতা। তাদের মুখে আতঙ্ক, চোখে অশ্রু আর অনিশ্চয়তার ছাপ।

‎কৃষক সাইফুর রহমান মানববন্ধনে কাঁদতে কাঁদতে বলেন—
‎“আমাদের চাষের জমি সব নদীতে চলে গেছে। এখন আর পরিবারকে খাওয়ানোর উপায় নেই। প্রতিদিন নদীর দিকে তাকিয়ে মনে হয়, আজ না হয় কাল আমাকেও গিলে ফেলবে।”

‎মানববন্ধনে বক্তব্য দেন উপজেলা চর উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক সহকারী অধ্যাপক গোলাম রসুল রাজা, প্রেসক্লাব সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সদস্য সচিব ওমর ফারুক, বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মিনারুল ইসলামসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

‎তাদের দাবি—প্রতিবছর দুধ কুমর নদীর ভাঙনে শত শত পরিবার বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। অথচ কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসন উদাসীন। অবিলম্বে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ এবং জরুরি ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্প হাতে নেওয়া দাবি জনান।

‎নদী তীরে দাঁড়িয়ে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে হাসিনা বেগম বলেন—
‎“জীবনভর কষ্ট করে ঘর করেছিলাম। সব নদী খেয়ে ফেললো। এখন মেয়ের বাড়িতে থাকি। নিজের ভিটে না থাকলে মানুষের কষ্ট কত বড়—না দেখলে বোঝা যায় না।”

‎অন্যদিকে শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন জানায়, নদীর ভাঙনে শুধু ঘরবাড়িই নয়, তার শৈশবও বিলীন হয়েছে।
‎“স্কুল শেষে আমরা যেখানে খেলতাম, সে মাঠটাও নদীতে চলে গেছে। এখন বই পড়ার কষ্টের সঙ্গে নদীর ভয়ও আছে—মন দিয়ে পড়াশোনা করতে পারি না।”

‎এলাকাবাসীর অভিযোগ, বহুদিন ধরে শুধু প্রতিশ্রুতির আশ্বাস দেওয়া হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রতিবছর ভাঙনের ভয়াবহতায় গ্রাম পর গ্রাম নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে।

‎মানববন্ধনে বক্তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন—
‎“ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *