
|| কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ||
অপেক্ষার অবসান ঘটল। স্বপ্নের মতোই আজ সকাল থেকে কুড়িগ্রাম-গাইবান্ধা রুটে সরাসরি বাস ছুটে চলেছে মওলানা ভাসানী সেতুর বুক চিরে। বহুকালের দুর্ভোগ যেন হঠাৎই মিলিয়ে গেলো এই সেতু উদ্বোধনের পর।
আজ বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সকাল ৭টা ৩০ মিনিট। কুড়িগ্রাম বাস টার্মিনাল থেকে প্রথম যাত্রীবাহী বাসটি ছাড়লো গাইবান্ধার উদ্দেশ্যে। এস.এন পরিবহনের এই বাস ছাড়তেই টার্মিনাল প্রাঙ্গণে উচ্ছ্বাসের ঢেউ ওঠে। কেউ হাত নেড়ে বিদায় জানালেন, কেউবা খুশির হাসিতে বললেন—”এবার আর ভাঙা রাস্তায় ঘুরপথে যেতে হবে না।”
এরপর থেকে প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর গাইবান্ধার উদ্দেশ্যে বাস ছাড়ছে কুড়িগ্রাম টার্মিনাল থেকে। উলিপুর, চিলমারী ও হরিপুর হয়ে বাসগুলো পৌঁছে যাচ্ছে গাইবান্ধায়। বহু বছর ধরে এই পথে যাত্রীদের ভোগান্তি, ঘুরপথে দীর্ঘ যাত্রা—সবকিছুর অবসান ঘটাচ্ছে ভাসানী সেতু।
৬০ বছরের মমতাজ বেগম দাঁড়িয়ে আছেন প্রথম বাসে ওঠার জন্য। গাইবান্ধায় মেয়ের বাড়ি বহুদিন যেতে পারেননি ঘুরপথ আর অতিরিক্ত খরচের ভয়ে। চোখ মুছে তিনি বললেন, “বাবা, এতদিন মেয়ের খবর নিতে হলে ফোনেই ভরসা করতে হতো। আজ মনে হচ্ছে নিজের মেয়ের মুখটা দেখতে পাব। আল্লাহ্ এই সেতু বানাইছে গরীব মানুষের জন্য।”
গাইবান্ধায় একটি কারখানায় কাজ করেন রফিকুল। প্রতিদিন যাতায়াত করা তার জন্য ছিল কষ্টকর। কখনও ট্রলার, কখনও ঘুরপথে বাস—সময় আর খরচে হাঁসফাঁস করতে হতো। রফিকুল হেসে বললেন, “এখন প্রতিদিন সন্ধ্যায় বউ-ছেলেমেয়েদের কাছে ফিরতে পারব। আগে যে টাকা ভাড়া যেত, সেটা দিয়ে চাল-ডাল কিনতে পারব।”
সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে প্রথম বাস ছাড়তেই টার্মিনাল যেন উৎসবের রূপ নেয়। কেউ হাত নেড়ে বিদায় জানালেন, কেউ মোবাইল ফোনে ভিডিও তুললেন। যাত্রীরা বললেন—“এই সেতু শুধু রাস্তা নয়, এটা আশার সেতু।”
মওলানা ভাসানী সেতুটি টোল ফ্রি হওয়ায় যাত্রীদের বাড়তি খরচের বোঝা নেই। সাধারণ মানুষ তাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। ব্যবসায়ী থেকে দিনমজুর—সবাই বলছেন, এতে তাদের জীবনযাত্রায় বদল আসবে।
ভাসানী সেতু দিয়ে কুড়িগ্রাম-গাইবান্ধা রুটে বাস চলাচল শুরু হওয়ায় শুধু যাতায়াত সহজ হয়নি, মানুষের হৃদয়ে জন্ম নিয়েছে নতুন স্বপ্ন। কেউ বলছেন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হলো, কেউ বলছেন চিকিৎসার জন্য আর কষ্ট করতে হবে না, আর ব্যবসায়ীরা বলছেন বাজারে পণ্য আনা-নেওয়া সহজ হবে।
সেতুর বুক চিরে ছুটে চলা প্রতিটি বাস যেন কেবল ধুলো উড়িয়ে যাচ্ছে না, সাথে নিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ মানুষের আশা, স্বপ্ন আর বাঁচার নতুন গল্প।