বুধবার, ডিসেম্বর ৩

“দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা, কূটনৈতিক টানাপোড়েন ও আঞ্চলিক সম্পর্কের বাস্তব চিত্র”

পরিবেশ ও পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে রাজনীতি ও কূটনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হয়ে থাকে। রাজনীতি ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে শেষ বলে কোনও বাক্য বা শব্দ নেই। রাজনীতি একটি চলমান প্রক্রিয়া। কূটনীতিও একটি চলমান প্রক্রিয়া। অনেকটা হঠাৎ করে পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টে যেতে শুরু করেছে। ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে ইমরান খানকে নিয়ে।

বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান একটি সংকটের সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতির চরমে অবস্থান করছে পাকিস্তান। সম্প্রতি পাকিস্তানে চিনির মূল্য লাগামহীন ছিল, যা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। পাকিস্তানের ইমরান খানের বর্তমান অবস্থান নিয়ে অনেক ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। ইমরানের পুত্র কিছুটা ক্ষুব্ধ এবং উদ্বেগ প্রকাশ করে কথা বলেছেন গণমাধ্যমে। ইমরান খানকে নিয়ে জল্পনা-কল্পনা থামছে না। অবশেষে মুখ খুলেছেন প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রীর কনিষ্ঠ পুত্র এবং বোন।

বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের আদিয়ালা জেল কর্তৃপক্ষ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, ইমরান পুরোপুরি সুস্থ রয়েছেন। তাঁকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার খবরও সত্য নয় বলে জানানো হয়। তার পরেও অবশ্য ইমরানের শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে জল্পনা থামছে না। এই আবহে ইমরানের তিন বোনের অন্যতম নোরিন নিয়াজি সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে জানিয়েছেন, ইমরান সম্পর্কে কোনও খবরই তাঁদের দেওয়া হচ্ছে না।

বৃহস্পতিবার জেলে ইমরানের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট করেন ইমরানের কনিষ্ঠ পুত্র কাসিম খান। তিনি দাবি করেন, জেলের মধ্যে মৃত্যুকূপে (ডেথ সেল) রাখা হয়েছে ইমরানকে। বাবার সঙ্গে তিনি এবং তাঁর ভাই কোনও যোগাযোগ করতে পারছেন না বলেও জানিয়েছেন কাসিম। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলিকে বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়ার আর্জি জানিয়েছেন প্রাক্তন পাক ক্রিকেট অধিনায়কের পুত্র।

কাসিম সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “আমার বাবা ৮৪৫ দিন ধরে জেলে বন্দি। গত ছ’‌সপ্তাহ ধরে তাঁকে কোনও রকম স্বচ্ছতা ছাড়াই একাকী মৃত্যুকূপে রাখা হয়েছে। আদালত অনুমতি দেওয়ার পরেও তাঁর বোনদের যেতে দেওয়া হচ্ছে না। ফোন করা যাচ্ছে না, দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি জীবিত রয়েছেন কি না, তা-ও স্পষ্ট নয়।” হুঁশিয়ারির সুরে ইমরানের পুত্র জানিয়েছেন, ইমরানের কিছু হলে তার ফল ভোগ করতে হবে পাক সরকারকে।

এদিকে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সোহেল আফ্রিদি ১৬ ঘণ্টা পর আদিয়ালা সড়ক থেকে অবস্থান ধর্মঘট তুলে নিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা বন্দি ইমরান খানের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো তথ্য দেয়নি। গোরখপুর চেক পোস্টে সাংবাদিকদের মুখ্যমন্ত্রী আফ্রিদি বলেন, দলের কর্মীরা পুরো রাত প্রতিবাদস্থলে কাটিয়েছেন। আফ্রিদি বলেন, “আমরা কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এখানে রাত কাটিয়েছি। এটি মাত্র একটি রাত আমাদের প্রতিবাদ।” তিনি আরও যোগ করেন, “পিটিআই প্রতিষ্ঠাতার জন্য যদি আমাদের পুরো জীবনও এখানে কাটাতে হয়, আমরা তা করব।”

খাইবার পাখতুনখাওয়া’র মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে আমাদের এখনো কিছু বলা হয়নি।” তিনি বলেন, তাঁরা তাঁদের দাবি থেকে সরে আসবেন না। মুখ্যমন্ত্রী আফ্রিদি বলেন, পিটিআই প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে দেখা করতে তিনি “সব সাংবিধানিক ও আইনি পথ” অনুসরণ করেছেন, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলে বলেন, “আমি প্রতিটি সাংবিধানিক ও আইনি পথ ব্যবহার করেছি। আমার নেতার সঙ্গে দেখা করতে আর কোন পথ বাকি রইল?” মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তাঁকে বা দলের অন্য নেতাদের কাউকেই ইমরানের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সমালোচনা করে সোহেল আফ্রিদি বলেন, আগে যাঁরা লন্ডনে পালিয়ে যেতেন, তাঁদের একসঙ্গে ৫০ জনের দলকে (কারাগারে) দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

অবস্থান ধর্মঘট শেষ হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী আফ্রিদি ইসলামাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা হন। আশা করা হচ্ছে, পিটিআই প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চেয়ে তিনি উচ্চ আদালতে একটি আবেদন করবেন। আবেদন জমা দেওয়ার পর সোহেল আফ্রিদি আদিয়ালা রোডে ফিরে আসবেন।

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি ইসলামাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও দেখা করবেন। মুখ্যমন্ত্রী আফ্রিদি আরও বলেন, আদালত যদি তাঁদের আদেশ কার্যকর না করেন, তবে তা দেশে “জঙ্গলের রাজত্ব” প্রতিষ্ঠার সামিল হবে। দলের নেতাদের ইমরানের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি না দেওয়ায় রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেল রোডের গোরখপুর চেকপয়েন্টে পিটিআইয়ের নেতা-কর্মীরা ১৬ ঘণ্টা অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন।

তেহরিক তাহাফুজ আইন-ই-পাকিস্তানের (টিটিএপি) প্রধান মাহমুদ খান আচাকজাই, মজলিস ওয়াহদাত-ই-মুসলিমিনের (এমডাব্লিউএম) প্রধান আল্লামা রাজা নাসির আব্বাস, মিশাল ইউসুফজাই, সিনেটর গুরদীপ সিং, সিনেটর রুবিনা নাজ, এমএনএ জুলফিকার আহমেদসহ অনেকে এ অবস্থান ধর্মঘটে অংশ নেন।

আগের দিন সাংবাদিকদের আচাকজাই বলেন, মুখ্যমন্ত্রী এই বিশ্বাস নিয়ে রাওয়ালপিন্ডি এসেছিলেন যে ফেডারেল ইউনিটের প্রতিনিধি হিসাবে, বিশেষ করে আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর তাঁকে দলের নেতার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হবে।

আচাকজাই বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মনে করেছিলেন, তিনি ফেডারেশনের একজন সাংবিধানিক প্রতিনিধি। তিনি ভেবেছিলেন, আদালত যখন লিখিতভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, তখন তাঁর নেতার সঙ্গে তাঁকে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হবে।

টিটিএপি প্রধান আরও বলেন, কিন্তু তিনি এখন বুঝতে পেরেছেন, এখানকার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা গণতান্ত্রিক রীতিনীতি বা সম্মানের ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন। আচাকজাই বলেন, আফ্রিদির এই প্রতিবাদ সাংবিধানিক অধিকারে বিশ্বাসী গণতান্ত্রিক পশতুনদের কণ্ঠস্বরকে তুলে ধরেছে। সব মিলিয়ে পাকিস্তানের জনগণ ইমরান খানকে নিয়ে বেশ উৎকণ্ঠায় রয়েছে। স্বচ্ছ কোনও ধারণা পাচ্ছেন না।

তালেবান সরকারের সাথে আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পর অনেকটা চাপের মধ্যে পাকিস্তানের বর্তমান সরকার রয়েছে। তালেবান-শাসিত আফগানিস্তান তার অন্যতম প্রতিবেশী। যাই হোক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তীব্রভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

বন্দুকবাজের গুলিতে গুরুতরভাবে জখম হয়েছিলেন আমেরিকার ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্য। দুই রক্ষীর মধ্যে একজনের মৃত্যু হয় বৃহস্পতিবার। অপরজনের অবস্থা সংকটজনক। সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট করে এমনটাই জানিয়েছেন ট্রাম্প।

বুধবার দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে (আমেরিকার স্থানীয় সময় অনুসারে) হোয়াইট হাউসের উত্তর-পশ্চিমে মাত্র দু’টি ব্লক দূরে এই গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ভোরে ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের দিকে এগিয়ে এসে আচমকা বন্দুক বার করে গুলি চালাতে শুরু করেন আফগানিস্তানের নাগরিক রহমানুল্লা লাকানওয়াল। ফারাগাটে মেট্রো স্টেশনের কাছে আমেরিকার ন্যাশনাল গার্ডের মহিলা রক্ষী সারা বেকস্টর্মের বুকে এবং মাথায় গুলি করেন তিনি। তার পর অ্যান্ডরু ওলফ নামের আর এক রক্ষীকেও গুলি করেন। তার পরেই তৃতীয় রক্ষীর গুলিতে মৃত্যু হয় ওই বন্দুকবাজের (অনেক সংবাদমাধ্যমে আহত হওয়ার কথাও বলা হয়েছে এবং তার চিকিৎসা চলছে)।

বৃহস্পতিবার ট্রাম্প সারার মৃত্যুসংবাদ জানান। ওই রক্ষীর প্রশংসা করে তিনি লেখেন, “ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার সারা বেকস্টর্মকে নিয়ে এখন কথা বলছি। উনি একজন সম্মানিত এবং দুর্দান্ত মানুষ। কিছুক্ষণ আগে উনি মারা গিয়েছেন। উনি আর আমাদের সঙ্গে নেই।” গুলিবিদ্ধ আর এক রক্ষীর শারীরিক পরিস্থিতির কথা জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, “উনি এখনও জীবনযুদ্ধে লড়াই করছেন।”

আমেরিকার একাধিক সংবাদসংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে আমেরিকায় এসেছিলেন রহমানুল্লা। ওই বছরের ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের দখল নিয়েছিল তালেবান। সেই সময় নিরাপত্তা-সংক্রান্ত ঝুঁকি রয়েছে, এমন আফগান নাগরিকদের আমেরিকায় নিয়ে আসতে “অপারেশন অ্যালাইস ওয়েলকাম” শুরু করেছিল জো বাইডেনের সরকার। ওই অভিযানে বিমানে চাপিয়ে আফগানিস্তান থেকে প্রায় ২০ হাজার আফগান নাগরিক, মার্কিন কূটনীতিকদের আমেরিকায় ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। সেই সময়ই রহমানুল্লা আমেরিকার মাটিতে পা রাখেন। তার পর থেকে তিনি ওয়াশিংটনের বেলিংহামেই থাকতেন। আফগানিস্তানের সাথে মার্কিন বিবাদ লেগেই রয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে। তর্কযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে দুটি দেশ। বাগরাম বিমানঘাঁটি নিয়ে উত্তেজনায় রয়েছে দুটি দেশ। রাশিয়া, চীন ও ভারতের সাথে তালেবান সরকারের সম্পর্ক তুঙ্গে। ইতিমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি “তৃতীয় বিশ্বের দেশ” থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থগিত করার পরিকল্পনা করছেন। তবে তিনি তৃতীয় বিশ্বের দেশ বলে কাদের বুঝিয়েছেন, সেটি পরিষ্কার করেননি। ওয়াশিংটনে একজন আফগান নাগরিক দুইজন ন্যাশনাল গার্ড সেনাকে গুলি করেছেন বলে অভিযোগ ওঠার একদিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার ট্রাম্প এ ঘোষণা দিলেন। ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে লিখেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবস্থা পুরোপুরি স্থিতিশীল করার সুযোগ করে দিতে আমি তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে অভিবাসন স্থায়ীভাবে স্থগিত করব।” মার্কিন প্রেসিডেন্ট হুমকি দিয়ে আরও লিখেছেন, তাঁর পূর্বসূরি জো বাইডেনের আমলে দেওয়া “লাখ লাখ” অভিবাসনের অনুমোদন বাতিল করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রকৃত সম্পদ নন, এমন যে কাউকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হবে। এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছে, ১৯ দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা নাগরিকদের গ্রিনকার্ড পর্যালোচনা করে দেখা হবে। মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবা বিভাগের (ইউএসসিআইএস) প্রধান জোসেফ এডলো বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ঝুঁকিপূর্ণ বা উদ্বেগের তালিকায় থাকা ১৯টি দেশ থেকে আসা প্রত্যেক নাগরিকের গ্রিনকার্ড কঠোরভাবে পর্যালোচনা করতে তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন। এই ১৯টি দেশ সম্পর্কে পরিষ্কার কোনও ধারণা দেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক নিয়ে অনেক কথা শোনা যায়। কেউ কেউ বলেন উত্তেজনার মধ্যে সম্পর্ক চলছে, কিন্তু আমার মনে হয় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উত্তেজনার নয়। এই সম্পর্ক মৈত্রীর ও বন্ধুত্বের। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যে সহযোগিতা ভারত করেছে সেটি অনেক বড় প্রাপ্তি। সীমান্ত প্রাচীরের মাধ্যমে আটকানো সম্পর্ক নয় বাংলাদেশ-ভারতের। এই সম্পর্ক আত্মীয়তার। বাংলাদেশের অনেক নাগরিক আছে, যাদের অনেক আত্মীয় ভারতের বসবাস করছে। আত্মার টানে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক। ভারতের পরলোকগত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যে অবদান রেখেছেন সেটি কি ভুলে যাওয়ার বিষয়? ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে শরণার্থী শিবিরে শিশুদের জন্য দুধের ব্যবস্থা করে মানবিকতার জায়গায় যে স্থান তিনি তৈরি করেছিলেন সেটি কম কিসে! ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী একটি কথা বলেছিলেন, “বন্ধুত্ব পরিবর্তন করা যায় কিন্তু প্রতিবেশী পরিবর্তন করা যায় না।” কিছুদিন আগে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, যিনি একজন অর্থনীতিবিদ এবং দক্ষ কূটনীতিক, তিনি দিল্লি সফর করেছিলেন। সাক্ষাৎ হয়েছিল ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে। কথা হয়েছে আন্তরিকতার সাথে। আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বাংলাদেশ সফরের। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক যত বন্ধুত্বপূর্ণ হবে ততই মঙ্গল। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক যত জোরালো হবে ততই মঙ্গল, কারণ দুটি দেশের বাণিজ্য একে অপরের উপর নির্ভর করে। খাদ্যশস্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন দ্রব্যে আমদানি-রফতানি নির্ভর করে দুই দেশের উপর। বাংলাদেশের অনেক পণ্য আছে, যার রপ্তানির মাধ্যমে আমাদের দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী থাকে। আমাদের দেশের অনেক মানুষ আছে, যাদের আয়ের উৎসস্থল আমাদের দেশের রপ্তানি পণ্য। সার্ক গঠনে বাংলাদেশের আন্তরিকতার ঘাটতি ছিল না আমাদের পূর্বসূরীদের। কিন্তু সার্ক আছে, কিন্তু সেই অর্থে সক্রিয় নয়। কিছু প্রশ্নে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আটকে আছে, কিন্তু দুটি দেশ সেটি পর্যবেক্ষণ করছে নিবিড়ভাবে। বিশ্লেষকদের মতে দুটি দেশ পর্যবেক্ষণ করছে সবকিছু। সম্পর্ক উন্নয়নে কাজও হচ্ছে। সাইডলাইন বৈঠক সেটিরই ইঙ্গিত বহন করে। রাজনীতি এবং কূটনীতিতে শেষ কথা বলে কোনও বাক্য বা শব্দ নেই।

আগামী ৪ ও ৫ ডিসেম্বর ভারত সফরে যাচ্ছেন পুতিন। ক্রেমলিন জানিয়েছে যে এই সফরে ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে রুশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন তিনি। এই সফর ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সফরটি বিশেষ কৌশলগত অংশীদারি হিসাবে রাশিয়া-ভারত সম্পর্কের বিস্তৃত এজেন্ডা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সুযোগ করে দেবে। রাশিয়ার তেলের প্রধান ক্রেতা ভারত। কয়েক দশক ধরে রুশ অস্ত্রও কিনে আসছে নয়াদিল্লি। ক্রেমলিন বলেছে, রাষ্ট্রীয় সফরকালে মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন পুতিন। ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে বৈঠক করবেন পুতিন। কয়েকটি সরকারি ও বাণিজ্যিক নথিতে সই হতে পারে। এই সফরটি এমন সময় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যখন পাকিস্তান-আফগান উত্তেজনা তুঙ্গে এবং চীন ব্লকে রাশিয়ার অবস্থান তৈরি হচ্ছে। চীনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক যখন তুঙ্গে, ভারত তার পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে এগিয়ে যেতে চাইছে আরও সামনে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতির বিরুদ্ধে নিজেদের শক্তিশালী করে উপস্থাপন করতে আগ্রহী। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের এই সময়টিকে কাজে লাগাতে আগ্রহী ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বড়দিনের পূর্ব মুহূর্তে যা হবে একটি বড় ধরনের ক্রিসমাস উপহার।

একটি মানবিক গল্প দিয়ে লেখাটির ইতি টানছি। সেটি হল—জসিমউদ্দিন বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় থাকেন। ভিসা জটিলতার জন্য আজ প্রায় দুই বছর তিনি সীমান্তের ওপারে তাঁর আত্মীয়-স্বজনের কাছে যেতে পারেন না। সীমান্তের ওপারে তাঁর বোন আর ভাই থাকেন—দু’জনেই বৃদ্ধ। মাঝে মাঝে জসিমউদ্দিন সীমান্ত এলাকার মানুষের কাছে গল্প শোনেন, পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান, কিন্তু এক বুক হতাশা নিয়ে আবার ঘরে ফিরে যান। চোখ মুছে যোগ দেন আপন কর্মে। আমরা চাই বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক হোক গভীর বন্ধনের ও বন্ধুত্বের। ইতিমধ্যে আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা বলেছেন, বিনিয়োগ ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই বিনিয়োগের জন্য আমাদের সকলের একযোগে কাজ করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *