বুধবার, জুলাই ২৩

তুরস্কের প্রতিনিধি দলের ইউআইটি প্রকল্প পরিদর্শন ও কনসালটেশন অনুষ্ঠিত

|| নিজস্ব প্রতিবেদক ||

বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে উচ্চশিক্ষা ও জ্ঞানভিত্তিক উন্নয়নে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সফর করেছেন তুরস্কের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল। সফরের অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচির মধ্যে ছিল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রোহিলা মৌজায় প্রস্তাবিত ইউনিভার্সিটি অব ইন্টিগ্রেটেড থটস (ইউআইটি)-এর স্থায়ী ক্যাম্পাস এলাকা পরিদর্শন, ইউআইটি প্রকল্পের ওপর একটি উচ্চপর্যায়ের পরামর্শ সভায় অংশগ্রহণ এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (বিআইআইটি)-এর প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন।

প্রতিনিধি দলটি ইউআইটি-এর মাস্টারপ্ল্যান, নির্মাণ কার্যক্রমের অগ্রগতি এবং একাডেমিক ভিশন সম্পর্কে অবগত হন। তাঁরা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা পর্যবেক্ষণ করে জ্ঞাননির্ভর ও নৈতিকতাভিত্তিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গঠনের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন উদ্যোগকে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে প্রশংসা করেন এবং ইউআইটি-এর সঙ্গে একাডেমিক ও কৌশলগত সহযোগিতা ও দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্বে আগ্রহ প্রকাশ করেন। ইউআইটিকে মুসলিম বিশ্বের বিদ্যমান জ্ঞানসংকট ও উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শুভ উদ্যোগ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং নৈতিক নেতৃত্ব গঠনে ও ইসলামি ঐতিহ্যের সাথে আধুনিক জ্ঞানের সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

পরিদর্শন শেষে রাজধানীর র‌্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে ইউআইটি- এর প্রস্তাবিত ‘নলেজ সিটি’ প্রকল্পের ওপর একটি উচ্চপর্যায়ের পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিআইআইটি ট্রাস্ট ও ইউআইটি ফাউন্ডেশনের যৌথ আয়োজনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ইউআইটিকে একটি মূল্যভিত্তিক, আন্তঃবিষয়ভিত্তিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের লক্ষ্যে রোডম্যাপ প্রণয়নে আলোচনা হয়। সভায় ইউআইটি-এর লক্ষ্য, কাঠামো ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বক্তারা ইসলামি বুদ্ধিবৃত্তিক ঐতিহ্য, নৈতিক শিক্ষা ও বৈশ্বিক গবেষণার সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত একটি বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইউআইটি-এর সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন- মুসলিম বিশ্বের এনজিওগুলোর সংগঠন ইউনিয়ন অব এনজিওস অব দ্য ইসলামিক ওয়ার্ল্ড (ইউএনআইডব্লিও) এর সেক্রেটারি জেনারেল, তুরস্কের খ্যাতনামা শিল্পপতি ও সমাজকর্মী ইউপ আকবাল। তাঁর নেতৃত্বাধীন তুর্কি প্রতিনিধি দলে ছিলেন ইউএনআইডব্লিউ-এর মিডল ইস্ট ডেস্কের সমন্বয়কারী মি. উবেইদে চানাকচি, ইস্ট তুর্কিস্তান এনজিও ইউনিয়নের সভাপতি হিদায়েত ওগুজহান, তুর্কি সহযোগিতা ও সমন্বয় সংস্থার বাংলাদেশ কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ আলী আরমাগান এবং বাংলাদেশে তুরস্ক দূতাবাসের ধর্ম বিষয়ক সমন্বয়কারী ওজগুর ওজইরেক।

তুরস্কের প্রতিনিধি দলের সাথে কনসালটেশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. নিয়াজ আহমেদ খান এবং ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) এর ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ও গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম, আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. ফজলি ইলাহী, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান, ও আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের সাবেক প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. আবু বকর রফিক। এছাড়াও বাংলাদেশের আরও অনেক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক ও মানবহিতৈষীরা অংশ নেন। তাঁরা ইউআইটি’র এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, এটি ঐতিহ্য ও আধুনিক শিক্ষার মধ্যে একটি সেতুবন্ধন গড়ার গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াস।

মি. আকবাল ঢাকাস্থ বিআইআইটি’র প্রধান কার্যালয়ও পরিদর্শন করেন। তাঁকে ফুল দিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান বিআইআইটি’র অ্যাকাডেমিক ফেলো ও কোর্স সমন্বয়ক ড. মুমতাহেনা। বিআইআইটি’র মহাপরিচালক প্রফেসর ড. এম আবদুল আজিজ তাঁকে প্রতিষ্ঠানের গবেষণা, প্রকাশনা, প্রশিক্ষণ ও একাডেমিক কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, এই সফর বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে শিক্ষা, গবেষণা ও মূল্যবোধভিত্তিক অংশীদারিত্বের একটি নতুন অধ্যায় সূচনার পথ প্রশস্ত করল। এই সফর বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে একাডেমিক কূটনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি গবেষণা, শিক্ষক বিনিময়, যৌথ উদ্যোগ এবং মূল্যভিত্তিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিকাশে দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারত্বের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

মি. আকবাল বিআইআইটি লাইব্রেরি, রিসার্চ সেন্টার, অনুবাদ ও প্রকাশনা ইউনিটসহ অন্যান্য শাখা ঘুরে দেখেন। শেষে সম্মেলন কক্ষে তাঁকে বিআইআইটি এর প্রকাশিত কিছু মূল্যবান বই উপহার দেওয়া হয়। তিনি প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা ও চিন্তাভাবনাকে অত্যন্ত প্রশংসনীয় বলে মন্তব্য করেন এবং ভবিষ্যৎ সহযোগিতার আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডেইলি সাবাহ-এর সম্পাদক ও বিআইআইটি’র আন্তর্জাতিক সমন্বয়কারী মোহাম্মদ জাকির হোসেন এবং ছওয়াবের চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুজ্জামান।

উল্লেখ্য যে, প্রস্তাবিত ইউআইটি ক্যাম্পাসটি রূপগঞ্জের রোহিলা মৌজায়, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় ২১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি শীতলক্ষ্যা নদীর পাশ দিয়ে ৩০০ ফিট হাইওয়ে ধরে কাঞ্চন ব্রিজের দিকে, শিমুলতলী লঞ্চঘাটের পাশ দিয়ে বালদি বাজার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় গড়ে উঠছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *