
|| নিজস্ব প্রতিবেদক ||
ড্যাফোডিল এবং সিটি ইউনিভার্সিটির মধ্যকার রাতভর নারকীয় সংঘর্ষ: জিম্মি করে জোরজবরদস্তিমূলক জবানবন্দী এবং ঘটনার নেপথ্যে বর্ণনা করে বিবৃতি দিয়েছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। সোমবার (২৭ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়টির জনসংযোগ অফিস থেকে বিবৃতিটি পাঠানো হয়।
বিবৃতিতে জানানো হয়, আমরা গভীর উদ্বেগ এবং ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, সাভারের বিরুলিয়ায় ড্যাফোডিল স্মার্ট সিটি ও এর তৎসংলগ্ন এলাকায় গতকাল (২৬ অক্টোবর) গভীর রাতে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্খিত এবং একটি স্বার্থেন্বেষী মহলের পূর্ব পরিকল্পিত নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায় খুবই সূক্ষ্ণভাবে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপর পুরোপুরিভাবে দায় চাপানোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। যদিও এই সহিংস ঘটনায় আমাদের ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী গুরুতরভাবে আহত হয়ে বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্য, ভিডিও ও প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী আমরা লক্ষ্য করেছি যে, এই হামলার সূচনা এবং পরিকল্পিত আক্রমণের মূল উদ্যোগ ছিল সিটি ইউনিভার্সিটির কিছু ছাত্রদের অংশগ্রহণে। এর পাশাপাশি সিটি ইউনিভার্সিটির কিছু দুষ্কৃতিকারীরা গতকাল রাতেই আমাদের বেশ কিছু শিক্ষার্থীদের ধরে নিয়ে নিজেদের ছাত্রাবাসে জিম্মি করে রাখে এবং তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে দিনভর নানান নাটকীয়তার পরও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কর্তৃপক্ষ আলোচনা ও মীমাংসার আপ্রাণ চেষ্টা করে যায়।
এছাড়া আমরা আরও আশ্চর্য এবং ব্যথিত হয়েছি, আমাদের শিক্ষার্থীদের মুখে তাদের ওপর ঘটে যাওয়া রাতভর পৈশাচিক ও অমানবিক নির্যাতনের বর্ণনা শুনে। এছাড়া মুক্তির আগে অস্ত্রের মুখে জোরজবরদস্তিমূলক দুষ্কৃতিকারীরা তাদের একটি জবানবন্দী নেয়- যেখানে বোর্ড অফ ট্রাস্টির সম্মানিত চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান, উপাচার্য প্রফেসর ড. এম. আর. কবির এবং প্রক্টর ড. শেখ মো. আল্লাইয়ার- এর নামে বিষাদগার রটনা ছড়ানো হয়। এই ধরনের ঘটনা দেশের ইতিহাসে যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই বিরল এবং অতি লজ্জাজনক।
আমাদের কাছে এমন ঊস্কানিমূলক তথ্যও রয়েছে যা নির্দেশ করে যে ঘটনাটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অন্য খাতে প্রবাহিত করার জন্য বাইরে থেকে সংগঠিত একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে এবং তারা ঘটনার মূল নেপথ্য পরিকল্পনাকারী বা উস্কানিদাতা হিসেবে কাজ করেছে। তাই আমরা মনে করি, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত অতীব জরুরী, নতুবা দেশের শিক্ষাঙ্গণের জন্য এটি একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা হিসেবে রয়ে যাবে।
ঘটনাটির দ্রুত, বিশদ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে খতিয়ে দেখার পাশাপাশি আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে নজরে আনার জন্য অনুরোধ করছি:
১. বিভিন্ন প্রমাণ সাপেক্ষে আমরা প্রাথমিকভাবে লক্ষ্য করেছি- ঘটনাটি সিটি ইউনিভার্সিটির একদল দুষ্কৃতিকারী ছাত্রদের পক্ষ থেকে শুরু হয়েছে; তারা পূর্ব কোনো যোগসূত্র ছাড়াই রাতের অন্ধকারে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির নিরীহ ছাত্রছাত্রীদের ওপর সশস্ত্র ও পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
২. এই ধরনের অতর্কিত আক্রমণের ফলে আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় শাতধিক গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে; তাদের চিকিৎসা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
৩. প্রাপ্ত সাক্ষ্য, ভিডিও ও প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে পরিলক্ষিত হয়েছে যে, একটি স্বার্থান্বেষী/প্ররোচক গোষ্ঠী পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই হামলার একটি ন্যারেটিভ তৈরি ও নিয়ন্ত্রিত করেছে, এবং তারা মিডিয়াকে ভুল তথ্য দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের ছাত্রদের সেখানে জিম্মি করে রাখার পেছনে ন্যক্কারজনক উদ্দেশ্য কাজ করেছে, এটি এখন স্পষ্ট আমাদের কাছে। শুরুতে ঘটেছিল একটি তুচ্ছ ঘটনা দিয়ে, এরপর বারংবার আলোচনার মাধ্যমে ফয়সালা ও বিচারের চেষ্টা চালানো হলেও তারা পর্যায়ক্রমে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে ঘটনার রাতে হেনস্থা এবং পরদিন সকালে সিটি ইউনিভার্সিটির ক্ষয়ক্ষতি দেখতে যাওয়া বিশেষ প্রতিনিধি দলকে ঘেরাও দিয়ে এবং চাপে ফেলে মিডিয়াতে মনগড়া বিবৃতি দিতে বাধ্য করে দুষ্কৃতিকারীরা।
এই বিষয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. এম. আর. কবির বলেন, “কখনোই কল্পনা করিনি আমাদের প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীকে শুধুমাত্র ক্রোধের বশে এভাবে নারকীয় নির্যাতনের শিকার হতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের যেভাবে জিম্মি করে রেখে নারকীয় কায়দায় নির্যাতন ও জোরপূর্বক মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে, তা কোনো সভ্য রাষ্ট্রে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। শুধুমাত্র তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমাদেরকে অনেক বিষাদগার দিনভর সহ্য করে যেতে হয়েছে। এই ঘটনা বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গণের জন্য কোনো ভালো বার্তা দেয়নি। আমি দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরকেই আহ্বান জানাবো, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষাদগার না ছড়িয়ে তদন্ত ও সমাধানের জন্য আমাদের সাহায্য করার জন্য।”
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জোর দাবি জানাচ্ছে যে, এই নৃশংস ধ্বংসযজ্ঞ ও জিম্মি করে নির্যাতনের মতো ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ডে জড়িত সকল ব্যক্তি ও পরিকল্পনাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হোক। এবং ভবিষ্যতে যেনো এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, সে জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি সকল মিডিয়াকেও ঘটনার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং পূর্ণাঙ্গ বিবরণ তুলে ধরার বিশেষ আহ্বান জানানো হলো।
