রবিবার, অক্টোবর ২৬

জীব সত্তা থেকে মনুষ্যত্বের ঘরে

মানুষ জন্মের মাধ্যমে কেবল জীব নয়, বরং এক সম্ভাবনাময় মনুষ্য সত্তা। কিন্তু সেই সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ নিতে হলে জীব সত্তার ঘরকে সাজাতে হয় শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও প্রয়োজনের পূর্ণতায়। কারণ জীব সত্তার ঘরে যদি বিশৃঙ্খলা থাকে, তবে মনুষ্যত্বের ঘরে পৌঁছানো সম্ভব নয়।

জীব সত্তা মানে কেবল দেহের অস্তিত্ব নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বস্ত্রের অভাব, চিকিৎসার সমস্যা এবং টিকে থাকার কঠিন সংগ্রাম। যখন মানুষের জীবন এসব অনিশ্চয়তায় জর্জরিত থাকে, তখন সে নৈতিকতা, জ্ঞান বা মানবতার উচ্চ স্তরে উঠতে পারে না। যে পেটে ক্ষুধা আছে, সে পেটের শব্দের মধ্যেই বন্দি হয়ে পড়ে; মনুষ্যত্বের আহ্বান তার কাছে বিলাসিতা মনে হয়।

মনুষ্যত্বে পৌঁছানোর পথ হলো পড়াশোনা ও জ্ঞানচর্চা। শিক্ষা মানুষের চেতনায় আলো জ্বালে, চিন্তার জগৎকে প্রসারিত করে এবং তাকে জীব সত্তার সংকীর্ণ ঘর থেকে বের করে আনে। কিন্তু শিক্ষা অর্জনের এই পথ সবার জন্য সমান সহজ নয়। যাদের দিন কাটে অনটনের মধ্যে, যাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত তাদের জন্য জ্ঞানার্জনের পথ অনেক কঠিন।

তবুও তারা চেষ্টা করে, আগাতে চায়, কিন্তু জীবনের ভার তাদের টেনে রাখে। অনেকেই শেষ পর্যন্ত ছিটকে পড়ে, সরে যায় মনুষ্যত্বের সেই স্বপ্নের পথ থেকে।

তবু আশার জায়গা আছে যদি সমাজ এমন এক পরিবেশ তৈরি করতে পারে, যেখানে জীব সত্তার প্রয়োজনগুলো পূর্ণ হয়, তবে মনুষ্যত্বের ঘরে পৌঁছানো আর অসম্ভব নয়। কারণ মানুষ তখনই সত্যিকারের মানুষ হয়, যখন তার ভেতরের জীব সত্তা শান্ত থাকে এবং মন জাগ্রত হয় জ্ঞানের আলোয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *