সোমবার, নভেম্বর ৩

ছাত্রীদের জন্য শালীন ইউনিফর্ম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোড অব কন্ডাক্টে অন্তর্ভুক্তি সময়ের দাবি

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৯২% মুসলিম। এদেশের মানুষ নিঃসন্দেহে ধর্মপ্রাণ। কিন্তু এটাও সত্য যে ধর্মের প্রকৃত মর্ম সম্পর্কেও সিংহভাগ ধর্মালম্বীর ধারণা একেবারেই সীমিত।
তারা আল-কুরআনের reading পড়াকে কুরআনের পন্ডিত, দুই একটা হাদিস বাংলায় বলতে পারলেই মুহাদ্দিস, ছোটখাটো দু একটা ফতোয়া সম্পর্কে ধারণা থাকলেই মুফতী, কোন আয়াতের নিজের মত করে মনগড়া দু একটা কথা বলতে পারলে মুফাসসির বলে দাবি করতে দেখা যায়।

আসলে আমরা ধর্মকে যত সহজ মনে করি, ধর্মীয় জ্ঞান আহরণ এবং তদনুযায়ী তা জীবনে বাস্তবায়ন অনেক কঠিন।

অধুনা যুগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষিত আমাদের অনেক ছেলে-মেয়েকেই ধর্মের বিভিন্ন সাইড নিয়ে কথা বলতে দেখি। তারা ধর্মের বিধি-বিধানের মর্ম না জেনেই সে সম্পর্কে অনেক নেতিবাচক মন্তব্য করে থাকেন। যেটা ধর্মদ্রোহিতারই নামান্তর।

যেমন সম্প্রতি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার একজন স্নেহাস্পদ ছাত্রীকে বলতে শুনেছি, “আমার পোশাক আমি যেরকম ইচ্ছে, সেরকম পরতে পারি না? আপনার লজ্জা লাগলে, আপনি চলে যান।”

যদিও তিনি কাউকে লক্ষ্য করে কথাটা বলেছেন, কিন্তু তার প্রকৃত অভিব্যক্তি এটিই।

জানি না তিনি কোন ধর্মের অনুসারী। যদি তিনি অন্য ধর্মের হয়ে থাকেন তাহলেও তার কথাটি অধর্মের এবং অগ্রহণযোগ্য ও অশুভনীয়। আর ইসলাম ধর্মের অনুসারী হয়ে থাকলে তাহলে তো অত্যন্ত গর্হিত কাজ করেছেন। কারণ তিনি সরাসরি ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে স্ববিরোধী কথা বলেছেন। কেননা ধর্ম না মানার চাইতে ধর্ম বিরোধী কথা বলা বা ধর্মকে অবজ্ঞা করা ধর্ম সম্পর্কে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করা আরো কঠিন অপরাধ।

ধর্ম মানে স্ববৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন। যেমন আগুণের ধর্ম জ্বালিয়ে দেওয়া। বিষের ধর্ম নিজের প্রতিক্রিয়ায় অন্যের প্রাণ হরণ করা।

তোমার ইচ্ছা হল আর নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়ে অথবা বিষ পান করে খেলা করবে সেটা তো আমরা দিতে পারি না।

কারণ আগুন স্বধর্ম অনুযায়ী তোমাকে পুড়িয়ে এবং বিষ মেরে ফেলব। তাই তোমার ইচ্ছে হলেই আমরা তোমাকে যা তা করতে দিতে পারি না।

আমরা জানি, ধর্মীয় কারণেই জাতি দেশ প্রতিষ্ঠানের আলাদা আলাদা নামে অভিহিত হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় দেশের ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের অধীন পরিচালিত সকল ধরনের প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় বিধি-বিধানের বাস্তবতা থাকতে হবে।

তবে সংখ্যালঘুদের প্রতি তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতাও থাকতে হবে। তারা তাদের ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

ইসলাম ধর্মে অত্যাবশ্যকীয় কিছু বিধি-বিধান আছে। নিজেকে সে ধর্মের অনুসারী হিসেবে দাবি করলে বা পরিচয় দিলে তাকে সে অত্যাবশ্যকীয় বিধিবিধান দৈনন্দিন জীবনে বাস্তবায়ন করতেই হবে। এর অন্যথা কোনোভাবেই করা যাবে না।
আমাদের দেশের সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যবাধকতা না থাকার কারণে আমাদের সন্তানরা ধর্ম সম্পর্কে একেবারেই বকলম থেকে যায়। ধর্মের মর্ম না বোঝার কারণে তারা ধর্ম পালন তো দূরে থাক ধর্ম সম্পর্কে তারা অনেক সময় নেতিবাচক আচার-আচরণ এবং কথাবার্তা বলে থাকে।
তাই দেশের কোন প্রতিষ্ঠানে বা কোথাও যদি আমার সন্তানদের কেউ ধর্মঞবিরোধী বক্তব্য প্রদান করে বা ধর্ম সম্পর্কে নেতিবাচক আচরণ করে সেটা তাকে পুরোপুরি দোষ দেওয়া যায় না।

কারণ এটা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় সবচাইতে বড় ত্রুটি। আমাদের সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক নয়। তাই আমাদের সন্তানরা যা হবার তাই হয়ে থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয় অনেক অনেক বড় মাপের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে বিশ্বের সকল জ্ঞানের উন্মুক্ত চর্চা থাকবে। থাকবে মত ব্যক্ত করার স্বাধীনতা। কিন্তু সেই উন্মুক্ততা ধর্মীয় ক্ষেত্রে নয়। সেটা যে দেশের যে ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হোক না কেন। প্রত্যেকের স্বধর্ম প্রতিপালন করেই জ্ঞান চর্চা করতে হবে। স্বধর্ম প্রতিপালন না করলেও স্বধর্মের বিরোধিতা করা যাবে না। তাহলে তো নিজের অস্তিত্বই থাকবে না।

ইসলাম ধর্মের বিধি মোতাবেক প্রাপ্তবয়স্কারা বাইরে গেলে সারা শরীর আবৃত করে যেতে হবে।
হ্যাঁ সেটা বোরকাতেই করতে হবে এমনটি নয়। নামাজ রোজা হজ যাকাত ইত্যাদির মত এবিধানটিও অত্যাবশ্যকীয়। এর অন্যথা কোনোভাবেই করা যাবে না।

আমাদের দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজে শিক্ষার এ তিনটি স্তরের প্রতিটিতে ছাত্রীদের জন্য আলাদা ইউনিফর্ম আছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে মেয়েদের জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরপরেও তাদের ইউনিফর্ম বাধ্যতামূলক। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের জন্য শালীন ইউনিফর্ম চালু করা অসুবিধা কোথায়?

তাই আমি সকল সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরদের প্রতি বিনীত অনুরোধ। আপনারা সম্মিলিতভাবে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং কোড অফ কন্ডাক্টে মেয়েদের জন্য শালীন ইউনিফর্ম সংযুক্ত করুন। এবং এটি দ্রুত বাস্তবায়ন করুন।
কারণ ‘ধার্মিকরাই সুখী ‘ প্রবাদের প্রচলন এমনি এমনি হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *